বর্ষাকাল। চারদিকে অনেক পানি। পিঁপড়ারা সব উঁচু স্থানে চলে যেতে শুরু করেছে। কেউ কেউ গাছের ওপরে বাসা করেছে। পিঁপড়া দলবদ্ধভাবে চলে এবং বসবাস করে। একদল বড় এবং কালো পিঁপড়া যাকে আঞ্চলিক ভাষায় ডাইয়া পিঁপড়া বলে। এই ডাইয়া পিঁপড়া কামড়ে ধরলে সহজে ছেড়ে দেয় না। ছাড়াতে গেলে যেখানে কামড়ে ধরে সেখান কেটে গিয়ে রক্ত বের হয়। এমন একদল পিঁপড়া উঁচু একটি কদম গাছে উঠে দেখে এক কাকের বাসা। বাসায় নাদুসনুদুস দুটি ছানা। তাদের শরীরে এখনো পালক ওঠেনি। ছানা দুটির বাবা-মা দূরে গেছে। নিজেরা খেয়ে ছানাদের জন্য খাবার নিয়ে আসবে।
এদিকে পিঁপড়ার দল খুব মজাদার খাবার মনে করে কাকের ছানা দুটিকে কামড় শুরু করে দেয়। কামড়ের যন্ত্রণায় কাকের ছানারা চেঁচামেচি শুরু করে দেয়। মা কাকটি ছানাদের এমন চিৎকার শুনে জলদি বাসায় ফিরে আসে। এসেই তো হতবাক! দুটি ছানার চারদিকে পিঁপড়া কামড়ে ধরেছে। মা কাকটি এবার বলে, তোদের মজা দেখাচ্ছি। তোদের ধরে একটি একটি করে জলে অথবা আগুনে ফেলে দিব! এ কথা শুনে পিঁপড়াদের জান শুকিয়ে যায়। তখন পিঁপড়াদের দলনেতা বলে, আমাদের এবারের মতো ক্ষমা করে দাও কাকিমা! আর কখনো এমন কাজ করব না আমরা। কাক বলে না না, তোদের ক্ষমা নেই। জলে ও আগুনে ফেলে মারব তোদের। তোরা আমার ছানাদের শরীরে কামড়ে রক্তাক্ত করেছিস। আমি তাদের মা হয়ে এমন কষ্ট কেমনে সহ্য করব? তোদের পুড়িয়ে ও জলে ডুবিয়ে মারব! তখন পিঁপড়াদের দলনেতা খুব নরম সুরে বলে, ঠিক আছে কাকিমা আমাদের যেহেতু মেরেই ফেলবে মরার আগে একটি শেষ কথা বলতে চাই। কাক বলে ঠিক আছে তাড়াতাড়ি বল। তখন দলনেতা বলে আমাদের পানিতে বা আগুনে ফেলেই মারবে কিন্তু ভুলক্রমেও কাউকে উঁচু গাছ থেকে ফেলে দিবেন না।
তাহলে আমাদের হাত-পা ভেঙ্গে ঘরে পড়ে থেকে অনাহারে ধুঁকে ধুঁকে মারা যেতে হবে। আমরা এমনভাবে মরতে চাই না কাকিমা। তখনই মা কাকটি বলে এবার পেয়েছি বুদ্ধি। ছানাদের যেমন কষ্ট দিয়েছিস ঠিক তেমন করেই তোদের হাত-পা ভেঙে আস্তে আস্তে মারার ব্যবস্থাই করব। এই বলে সব পিঁপড়া ধরে গাছের ওপর থেকে নিচে ফেলে দেয়। মাটিতে পড়েই পিঁপড়াগুলো মনের আনন্দে বলে একেবারে অক্ষত অবস্থায় বাঁচা গেল। আসলে পিঁপড়া যত উঁচু থেকেই পড়ুক না কেন তাদের কিছুই হয় না। তাই এমন চালাকি করে বেঁচে যায় সবাই।