গল্পটি পুরনো। এক গেরস্থের একটি পোষা বিড়াল ছিল। বিড়ালটি ছিল ইঁদুর শিকারে অনেক পটু। ইঁদুর শিকার করে গেরস্থের শস্য খেত ও গোলা রক্ষা করত। তাই গেরস্থ বিড়ালটিকে অনেক আদর-যত্ন করত। মাছের কাটা, দুধ-ভাত খেতে দিত। মাঝে মাঝে বিড়ালটি গেরস্থের সঙ্গেই ঘুমাত।
এক দিন বিড়াল ফুটফুটে তিনটি বাচ্চা জন্ম দিল। বাচ্চা তিনটিকেও গেরস্থ অনেক আদর-যত্ন করত। মিউ মিউ বলে ডাকত। দুধ-ভাত খেতে দিত। বাচ্চাগুলো অল্প দিনেই নাদুসনুদুস ও বড় হয়ে উঠল। বিড়াল তার বাচ্চাগুলোকে এতই আদর করত যে, পানিটুকু পর্যন্ত বাচ্চাদের নিজের হাতে খেতে দিত না। নিজ হাতে গোসল করিয়ে দিত। শিকার এনে মুখে তুলে খাইয়ে দিত। বাচ্চাদের সব সময় চোখে চোখে রাখত। ঘরের বাইরে যেতে দিত না।
বাচ্চারা কখনো যদি শিকারে যেতে চাইত বিড়াল বলত, ‘না না তোমরা পারবে না। তোমরা ছোট। আরও বড় হও। তারপর শিকারে যেও।’বাচ্চারা মাঠে খেলতে যেতে চাইত। ফুল-পাখি দেখতে চাইত। ঘুরে বেড়াতে চাইত। কিন্তু বিড়াল বাচ্চাদের একদমই বাইরে যেতে দিত না। এমনকি বিড়াল তার বাচ্চাদের কখনো ঘুরে বেড়াতেও নিয়ে যেত না। এজন্য বাচ্চাদের খুব মন খারাপ থাকত।
বরং বিড়াল সাবধান করে দিয়ে বলত, ‘না না একদম ঘরের বাইরে যাওয়া যাবে না। হারিয়ে যাবে তোমরা। রোদে গেলে গায়ের রং কালো হয়ে যাবে। তার চেয়ে বরং ঘরেই খেলাধুলা কর। ফুল-পাখি তোমাদের কিনে এনে দেব।’
এক দিন মিউ মিউরা মাকে বলল, ‘মা কি সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে তাই না? একটু ভিজি?’
ওদের মা ধমক দিয়ে বলল, ‘না না ভিজলে সর্দি হবে। ঠান্ডা লাগবে। জ্বর হবে। তার চেয়ে বরং বাথটবে গিয়ে ঝরনায় ভিজো তোমরা।’
আরেক দিন মিউ মিউরা ওদের মার কাছে গেল। বলল ‘মা মা, চলো আজ আমরা কোথাও বেড়াতে যাই।’
শুনেই মা বলল, ‘না না কোথাও ঘুরতে যাওয়া যাবে না। হারিয়ে যাবে। তার চেয়ে বরং বারান্দাতেই ঘোরাফেরা করো।’
এভাবে বাচ্চাগুলো বেড়ে উঠতে লাগল। সব সময় ঘরেই থাকে। বিড়াল অনেক কষ্ট করে শিকার এনে বাচ্চাদের খাওয়ায়। তবু বাইরে যেতে দেয় না। কোনো কাজেও পাঠায় না।’
এভাবে দিন দিন মিউ মিউগুলো অলস, বোকা ও মূর্খ হতে লাগল।
হঠাৎ এক দিন গেরস্থ অসুখে মারা গেল। গেরস্থের শোকে শোকে বিড়াল খুব অসুস্থ হয়ে পড়ল।
বিড়াল মিউ মিউদের ডেকে বলল, ‘তোমরা আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাও। আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাও। তোমরা আমাকে বাঁচাও।’
এসব কথা শুনে প্রথম মিউ মিউ বলল, ‘আমরা কীভাবে তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব? আমরা তো হাসপাতাল চিনি না। ডাক্তার চিনি না।’
দ্বিতীয় মিউ মিউ বলল, ‘না না। বাইরে গেলে যদি আমরা আবার হারিয়ে যাই?’
তৃতীয় মিউ মিউ বলল, ‘না না। বাইরে প্রখর রোদ। রোদে গেলে যদি কালো হয়ে যাই? যদি বৃষ্টি নামে? ভিজে যদি ঠান্ডা লাগে আবার? তুমি এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে মা।’
বিড়াল আরও অসুস্থ হয়ে পড়ল। গোঙাতে লাগল...