শুক্রবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
গল্প

এক রাজকুমারের গল্প

অমিত কুমার কুন্ডু

এক রাজকুমারের গল্প

অনেক দিন আগের কথা। এক দেশে ছিল এক মস্ত রাজা। তার ছিল একটি মাত্র ছেলে। নাম অর্ঘ্য। অর্ঘ্য সবার হৃদয় জুড়ে থাকে। অলস হয়ে থাকে না। অর্ঘ্য সোনার থালে খায়ও না। রুপোর থালে আঁচায়ও না। অর্ঘ্যর দিন কাটে কঠোর পরিশ্রমে। সকলে বলে, অর্ঘ্যই এ রাজ্যের যোগ্য উত্তরসূরি। অর্ঘ্যকে নিয়েই রাজার যত কর্মকাণ্ড। সারাদিন কত রকমের যে শিক্ষা চলে অর্ঘ্যর তার গুণাগুণতি নেই। সংগীতজ্ঞ শেখান গান। কুস্তিবীর শেখান কুস্তি। সেনাপতি শেখান যুদ্ধ কৌশল। বহুভাষাবিদ আসেন দেশি-বিদেশি ভাষা শেখাতে। গণিতজ্ঞ শেখান গণিত। কূটনীতি শেখাতে আসে প্রবীণ আমলা। সারাদিন তাঁদের সঙ্গেই সময় কাটে অর্ঘ্যর। সময় কাটে রাজার।

অন্য রাজার ছেলেমেয়েরা যেখানে আরাম আয়েশে ব্যস্ত থাকে। ফাইফরমাস খাটিয়ে সকলকে তটস্থ রাখে। অর্ঘ্য তখন ঘাম ঝরিয়ে দিন পার করে। পড়ালেখা করে রাত পার করে। দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করে দেখতে দেখতে অর্ঘ্য সর্ববিদ্যায় পারদর্শী হয়ে উঠল।

দেশ-দেশান্তরে তার নাম ছড়িয়ে পড়ল। দেশ-বিদেশের লোক আসতে লাগল অর্ঘ্যর কাছ থেকে সুপরামর্শ নিতে। এলো এক ছদ¥বেশি জাদুকর। জাদুকর চেয়েছিল ছলে বলে অর্ঘ্যকে বশ করতে। নিজের কাজে অর্ঘ্যকে পরিচালনা করতে। অর্ঘ্য সেটা ধরে ফেলল। জাদুকরের জাদুর লাঠি কেড়ে নিয়ে জাদুকরকে করে রাখল বন্দি।

এলো এক দুষ্টু বৈদ্য। রাজ্যজুড়ে রোগ ছড়িয়ে তার তৈরি ঔষধ দিয়ে রোগ সারিয়ে ব্যবসা করতে চাইল। অর্ঘ্য সেটাও বুঝে ফেলল। বৈদ্যের জড়িবুটি, চিকিৎসার পুথি, কেড়ে নিয়ে তাকেও করল বন্দি। এলো এক গুপ্তচর। নিয়ে এলো মণিমুক্তার উপহার। মিত্র সেজে, বণিক সেজে এলো সে। অর্ঘ্যকে তার রাজ্যে নিয়ে বন্দি করাই তার উদ্দেশ্য। অর্ঘ্য সেটাও ধরে ফেলল। বহুমূল্য রত্নে ভরে উঠল রাজার রাজকোষ। সেই রত্ন দিয়ে আশপাশের বহু রাজার ভূসম্পত্তি কিনে নিল অর্ঘ্য। প্রতিবেশী রাজার অলস পুত্রেরা জমি বেচা টাকা নিয়ে শহরে গিয়ে বাবুগিরি করতে থাকল। অর্ঘ্য বাড়িয়ে চলল তার রাজত্ব।

এই রাজ্যের রাজধানীতে তৈরি হলো সুতোর কল। তৈরি হলো চিনিকল। তৈরি হলো চালকল। আশপাশের দরিদ্র প্রজারা কাজ পেল। সুতো থেকে তাঁতিরা তৈরি করলো বাহারি কাপড়। তৈরি হলো স্কুল-কলেজ। সেখানে রাজ্যের ছেলেমেয়েরা পড়তে লাগল।

এভাবে দিন চলতে চলতে একদিন অর্ঘ্য বহুমূল্য কাপড়, চিনি, চাল নিয়ে জাহাজ বোঝাই করে চলল বাণিজ্যে। পথে জলদস্যুরা আক্রমণ করল অর্ঘ্যর জাহাজে। জাদুকরের জাদুর লাঠির কথা মনে পড়ল অর্ঘ্যর। জাদুবিদ্যার মায়াজালে বন্দি হলো জলদস্যুরা। দুষ্টু বৈদ্যের বিষাক্ত জড়িবুটির কথাও মনে পড়ল তার। জড়িবুটির প্রয়োগে কাহিল হয়ে গেল জলদস্যুরা। জলদস্যুদের জাহাজ একটা দ্বীপে নোঙর করতে বাধ্য করল অর্ঘ্য। নিরাপদে পার হয়ে গেল বিপদসংকুল সমুদ্র।

অর্ঘ্য এবার নিজের জাহাজ নিয়ে মরুর দেশের বন্দরে নোঙর করল। অনেক দামে মালামাল বিক্রি করে সস্তায় কিনে আনল বহুমূল্য হিরা-জহরত। সেসব নিয়ে গেল প্রতিবেশী রাজার রাজদরবারে। প্রতিবেশী রাজা তো দেখেই অবাক। রাজকন্যা মু। রানিতো খুশিতে আত্মহারা। তার বিক্রম দেখে প্রতিবেশী রাজা ঠিক করলেন অর্ঘ্যর সঙ্গে রাজকন্যার বিয়ে দেবেন। রাজকন্যা ছিল এই রাজার একমাত্র সন্তান। শুভ দিন দেখে ধুমধাম করে বিয়ে হলো অর্ঘ্যর। মহাসমারহে নতুন রানি নিয়ে নিজের রাজ্যে ফিরে এলো অর্ঘ্য। রাজা অর্ঘ্যকে তার রাজ্যের রাজা করে দিলেন। সুখে শান্তিতে রাজকার্য পরিচালিত করতে থাকল আমাদের অর্ঘ্য। আমাদের নতুন রাজা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর