শুক্রবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
গল্প

শিয়াল ও বনমোরগের লড়াই

শিয়াল ও বনমোরগের লড়াই

হুক্কা হুয়া হুক্কা হুয়া করে ডাকছে শিয়াল। শিয়ালের ডাক শুনে স্নেহার ঘুম ভেঙে গেল। মা মা বলে ডাক দিল। স্নেহার মা ওপাশ থেকে বলে কী হয়েছে মামণি। আমাদের বনমোরগটা কোথায়? স্নেহার মা পলি বলল, কেন ওটা মোরগের খোপে। ভালো করে দরজার খিল দিও। বদ শিয়ালটা ডাকছে। সুযোগ পেলে মোরগটা নিয়ে যাবে। স্নেহার ঘুম আসে না বনমোরগের চিন্তায়। বনমোরগটি স্নেহাকে তার জন্মদিনে জেনি আন্টি উপহার দিয়েছিল। জেনি আন্টি চাকরির সুবাদে বান্দরবান থাকে। পাহাড়ি বনমোরগটি বান্দরবান থেকে আনা হয়েছে। স্নেহাদের বাড়িতে একসময় প্রচুর মোরগ ছিল, সব একে একে শিয়ালের পেটে গেছে। কিছু মোরগ আবার নেউল/বেজি মেরে ফেলেছিল। বনমোরগটা বাড়িতে আনার পর প্রথম প্রথম কিছুটা অসুবিধা হতো। বনমোরগটি এখন কথা বলতে পারে। ছড়াও শিখেছে, সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, সারাদিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি। আমি হবো সকালবেলার পাখি, সবার আগে কুসুমবাগে উঠবো আমি ডাকি। মুয়াজ্জিন সাহেবের ফজরের আজান শেষ হওয়ার পরপর বনমোরগটি কুকুরু কুক কুকুরু কুক করে বাগ দেয়- বাগ দেওয়া শেষ হলে বলে, ‘এখন প্রার্থনার সময়, ওঠো আর ঘুমিও না খালামণি নামাজ পড়ে নাও। অলসতা দরিদ্র ডেকে আনে। স্নেহা আপু সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।’ কক কক করে রাইম পড়ে Early to bed and early to rise makes a man healthy, wealthy, and wise.

দেখতে দেখতে বনমোরগটি খাসির মতো বড় হয়ে গেল। একদিন গভীর রাতে হঠাৎ বনমোরগের অন্যরকম চিৎকার। সেদিন রাতে বনমোরগের বাসায় শিয়াল এলো। বনমোরগ বলল কেরে তুই? শিয়াল বলল, আমি বিড়াল। বনমোরগ বলল, তুই বিড়াল হলে মিউ মিউ ডাক দিবি হুক্কা হুয়া কেন? শিয়াল বলল ওটা আমার বন্ধু, তোমার নীড় দেখতে এসেছে। বনমোরগ বলল ঠিক আছে নীড়ে এসো। শিয়াল মনে মনে খুশি হয়ে বলল, এবার পেয়েছি। শিয়াল হা হা হা করে দাঁত কেলিয়ে হাসতে লাগল, আজকে বনমোরগকে চিবিয়ে খাব। যেইমাত্র বনমোরগের নীড়ে প্রবেশ করল সঙ্গে সঙ্গে বনমোরগ চিৎকার দিয়ে নীড় থেকে উড়াল দিয়ে বেরিয়ে নীড়ের ছিটকিনি বা দরজার খিল আটকে দিল। শিয়াল মামা কুপোকাত! বনমোরগ বলল, এবার পালাবি কোথায়। পরদিন সারা গ্রাম খবর ছড়িয়ে পড়ল বনমোরগ শিয়ালকে বন্দি করেছে। স্নেহার সহপাঠী ইমানা, তাজরিয়ান, সুবাহানা, মাহবীর, আহইয়ন ও বর্ণ দেখতে এলো। সবাই খুশিতে হাততালি দিতে লাগল। বনমোরগ শিয়ালের কাছে গিয়ে বলল, তুই কী ভেবেছিস? আমাকে বোকা বানাবি! লোভী কোথাকার! ডাইনি শিয়াল তুমি বেশি চালাক, এর আগে ফন্দি করে মুরগির খামারের সব মোরগ সাবাড় করেছিস, তাই না। অতি চালাকের গলায় দড়ি। স্নেহার বাবা মুজিব সাহেব বন ও পরিবেশ অধিদফতরে খবর দিলেন। পরিবেশ অধিদফতরের লোকজন এসে শিয়ালকে চিড়িয়াখানায় নিয়ে যাওয়ার জন্য খাঁচা বের করলেন। শিয়ালকে খাঁচায় ঢোকানোর সময় সে ধপাস করে অজ্ঞান হয়ে গেল। সবাই বলল, শিয়াল মারা গেছে। বনমোরগ শিয়ালের চালাকি বুঝতে পারল। বনমোরগ বলল, না সে মরেনি, মরার ভান ধরেছে। বনমোরগ তার ধারালো নখ দিয়ে শিয়ালের পিঠে একটা খামচি দিল, ওমনি শিয়াল খ্যাক খ্যাক করে লাফিয়ে ওঠল। শিয়ালকে খাঁচায় ঢুকিয়ে গাড়িতে তোলা হলো। বনমোরগল বলল, কেমন লাগছে বিড়ালের বেশ ধরে মুরগি খেতে এসেছিলে। বনমোরগ বলল, বেশি লোভ করা ভালো না, কথায় আছে না লোভে পাপ পাপে মৃত্যু। তোকে চাইলে আমরা মেরে ফেলতে পারতাম আমরা আইন নিজের হাতে তুলে নিই নাই। আমার অনেক জাত ভাইকে তুই গাপুস গুপুস করে মনের সাধ মিটিয়ে চিবিয়ে খেয়েছিস। এবার বোঝ ঠেলা, লোভী কোথাকার, আজীবন তুই বন্দি থাকবি চিড়িয়াখানায়।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর