শুক্রবার, ২২ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

মঙ্গল

কঙ্কন সরকার

মঙ্গল

বাবার অফিসের এক সহকর্মীর ছেলের বিয়েতে এ বাড়িতে আসা। সুন্দর একটি পাড়া। গুটি কয়েক বাড়ি নিয়ে পাড়াটি। সবচেয়ে ভালো লেগেছে ওর বয়সী কয়েকজন ছেলেমেয়ে আছে এখানে। বিয়ের অনুষ্ঠান পেরোলেও বাবাকে যেতে দেননি উনি। ছুটি থাকাতে বাবাও থেকে গেলেন। জমে উঠল ছেলেমেয়েদের সঙ্গে তুতুলের ভাব। বিকালে বাড়ির সবাই বাইরের উঠানে বসেছে। বসন্ত আসি আসি করছে। সামনেই বিরাট শিমুল গাছটাতে ফুল ফোটা শুরু হয়েছে। একজন গাছটা দেখিয়ে বলল, জানো! যখন সব ফুল ফোটে তখন দারুণ রং ছড়ায়! তুতুল ছেলেটা পাকামো ধরনের। কাউকে বোকা বানাতে কিংবা হাসাতে দারুণ পটু সে। এখানেও সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইল না।

বলল, শুনেছি এ রকম গাছ মঙ্গলেও বেশ আছে।

সবাই কৌতূহল তাকাল ওর দিকে মঙ্গলে!

একজন বলে-ই উঠল, মঙ্গলে শিমুল গাছ আছে! তুতুলের মুখে কৌতূহলী হাসি। বলল, নেই মানে! আমার মামা সেখানে গিয়েছিল। সবার চোখে জিজ্ঞাসু চাহনি। সেই একজনই বলল- কী আজে বাজে বলছ! মঙ্গলে জল আছে কি না, অক্সিজেন আছে কি না, ফসল ফলে কি না, তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা খাওয়া ঘুম ছেড়েছে! আর তোমার মামা নাকি গিয়েছিল সেথায়? যত সব ফালতু কথা।

এদের মধ্যে যারা মঙ্গল সম্পর্কে জানে না তারা মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগল।

তুতুল হেসে বলল, শোন- আমার মামা সেখানে প্লট কিনে রেখেছে বাড়ি করার জন্য! বলেছে আমাকেও নাকি নিয়ে যাবে সেখানে!

তারপর বলল, জানো, সেখানে শুধু শিমুল গাছ নয়; আম গাছ, জাম গাছ, বাঁশঝোপে ভরা।

বন আছে। বনে বানর, খরগোশ, বন বিড়াল, সাপ আরও আরও কত প্রাণী আছে!

অনেক অনেক বাড়ি আছে! শহর আছে! দোকান আছে! অফিস আছে!

সবার চোখের পাতা যেন স্থির!

সেই ছেলেটি বলল, দেখ, এসব বলে সময় নষ্ট করিও না। বরং চল মাঠের দিকে যাই।

অন্যরা ঠিক, ঠিক বলে উঠল। উঠতে যাবে তো তুতুল বলল, দেখ তোমরা ঠিকানা চাইলে আমি দিতে পারি। যাওয়াও সহজ। ট্রেনে চেপে, বাসে চড়ে, যেটাতে মন চায় যেতে পারবে!

সেই ছেলেটি বলল, কি ফালতু কথা বল। মঙ্গলে যেতে মহাকাশ যান লাগে। আর বলছ ট্রেন বাস! যত্ত সব আজগুবি!

আর যদি হয়! বলল তুতুল।

ছেলেটি বলল, কীভাবে হবে! অন্যরাও যোগ করল- তাইতো!

তুতুল বলল, হবে হবে! ঠিকানা নিতে চাও? ইচ্ছে হলে তোমাদের বাবা-মাকে নিয়ে বেড়িয়ে আসতে পারবে!

এবার জোর দিয়ে ছেলেটি বলল- দাও দেখি ঠিকানাটা!

সে মাটি পরিষ্কার করে বলল, এতে লিখে দিচ্ছি, তোমরা মুখস্থ করে নাও। সবার কৌতূহলী চোখ মাটি আর তুতুলের হাতের দিকে।

তুতুল লিখল- শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার।

সবাই যেন থমকে গেল। তাকাল একে অপরের দিকে।

ছেলেটি বলল, এই মঙ্গল!

তুতুল বলল, আমি তো এটার কথাই বলছি!

বাড়ির কার যেন ডাকে সবাই ছুটল বাড়ি মুখে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর