শুক্রবার, ২৪ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

স্বপ্নপুরীর দেশে মেঘপরী

রুনা তাসমিনা

স্বপ্নপুরীর দেশে মেঘপরী

বৃষ্টি আসবে। মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল মেঘপরীর। উড়ে চলল বনের দিকে কোথায় বন! গাছপালা সব কেটে সাবাড়। করুণ চোখে অল্প স্বল্প কিছু গাছ দাঁড়িয়ে আছে।

 

মেঘপরী জলের বালতি নিয়ে আসছে। নীল আকাশ নীল নীল হেসে বলল, এই যে মেঘপরী পানি নিয়ে কোথায় যাও? সাদা মেঘ বলল, তুমি কি আমার গায়ে পানি দেবে? দেখছ না আমি তুলার মতো ভাসছি! মেঘপরী বলল, কেন তোমার গায়ে পানি দেব! আমি তো যাচ্ছি কালো মেঘের কাছে। দেখছ না মানুষেরা গরমে কী কষ্টে আছে? মেঘপরীর কথা শুনে নীল মেঘ আর সাদা মেঘ দুজনই হেসে উঠল। বলল, তুমি চিন্তা করে কী হবে? মানুষেরা তো ভাবছে না। তোমার এই সামান্য জল দিয়ে মানুষের কি কষ্ট কমবে মেঘপরী? সাদা মেঘের কথায় কান না দিয়ে মেঘপরী চলল কালো মেঘের কাছে। আকাশের এক কোণে চুপচাপ শুয়ে আছে কালো মেঘ। মেঘপরী বলল, এই যে কালো মেঘ, তোমার জন্য পানি নিয়ে এসেছি। হাই তুলতে তুলতে কালো মেঘ বলল, কী হবে পানি দিয়ে? মেঘপরী বলল, তুমি বৃষ্টি ঝরাবে। হো হো করে হেসে উঠল কালো মেঘ। বলল, বৃষ্টি ঝরাব! কোথায় ঝরাব! মেঘপরী বলল, ওই যে রোদের মধ্যে মানুষগুলো কাজ করছে, তার গায়ে ঝরাও, পথের শিশুরা রোদে কষ্ট পাচ্ছে, তাদের জন্য ঝরাও। বৃদ্ধ মানুষ হাঁটতে হাঁটতে ঘামছে, তাদের জন্য ঝরাও। রিকশা চালাতে চালাতে ক্লান্ত চালক, তার জন্য বৃষ্টি হয়ে ঝর। কালো মেঘ বলল, মেঘপরী, তুমি অনেক ভালো। কত ভাবো মানুষের জন্য! কিন্তু মানুষ কি তাদের জন্য ভাবে? সবাই চায় বড় বড় দালান। সেই দালানে দাঁড়িয়ে আকাশ ছোঁবে। গাছ কেটে, পুকুর ভরিয়ে, তারা ইয়া বড় বড় বাড়ি করবে। তুমি চেয়ে দেখ, কোথাও দেখতে পাও কি না সবুজ মাঠ! দেখ তো দেখা যায় কি না পুকুরে হাঁসের দাপাদাপি আর মাছের সাঁতার! নদীর পানি কি আগের মতো স্বচ্ছ আছে? সাগরে কি নীল আকাশের ছায়া পড়ে? মানুষকে নিয়ে তুমি ভেবো না মেঘপরী। তুমি ফিরে যাও পরীর দেশে। শুধু শুধু কষ্ট করে বালতি ভরে পানি নিয়ে এলে। মেঘপরী বলল, আমি মানুষকে বোঝাব। বলব, তোমরা গাছ কেট না। তোমরা পুকুর ভরাট কর না। তোমরা নদীতে ময়লা ফেল না। মেঘ বলল, ঠিক আছে তুমি যদি মানুষকে বোঝাতে পার তাহলে আমি বৃষ্টি হয়ে ঝরব। পানিটা রেখে যাও পাশে। মেঘপরী বালতিটা মেঘের পাশে রেখে উড়তে উড়তে চলল মানুষের দেশে। উঁচু উঁচু পাহাড় দেখে প্রথমে ওখানে নামল। দেখল, পাহাড়পরী মন খারাপ করে বসে আছে। মেঘপরী বলল, কি গো পাহাড়পরী, তোমার মন খারাপ কেন? পাহাড়পরী বলল, রোদে পুড়ে যাচ্ছি। কোথাও এক ফোঁটা জল নেই। বৃষ্টি হয় না কতদিন! তাই মন খারাপ। মেঘপরী বলল, মন খারাপ কর না। দেখি কী করতে পারি। কালো মেঘ আমাকে পাঠিয়েছে মানুষকে বুঝিয়ে বলতে। উড়তে উড়তে মেঘপরী গেল নদীর কাছে। জলপরী উঠে এলো ময়লা পোশাকে। তার চোখ ভরা জল। মাছেরা হইচই করে উঠল মেঘপরীকে দেখে। তুমি কি বৃষ্টি নিয়ে এসেছ মেঘপরী? কখন বৃষ্টি হবে? আমাদের তো নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে? এখানে চারদিকে এত আবর্জনা! দেখ, পলিথিনগুলো আমাদের গায়ে পেঁচিয়ে যাচ্ছে। আমরা নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। কখন বৃষ্টি আনবে? জলপরীর অবস্থা দেখেছ? সারাক্ষণ কাঁদে। মেঘপরী বলল, অপেক্ষা কর। বৃষ্টি আসবে। মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল মেঘপরীর। উড়ে চলল বনের দিকে কোথায় বন! গাছপালা সব কেটে সাবাড়। করুণ চোখে অল্প স্বল্প কিছু গাছ দাঁড়িয়ে আছে। সবুজপরী কোথায় যেন খুব তাড়াহুড়ো করে যাচ্ছিল। মেঘপরীকে দেখে রেগে আগুন! তুমি এখানে কী করছ? বৃষ্টি ছাড়া আমাদের দেশে কী দেখতে এসেছ? মেঘপরী বলল, বৃষ্টি আনতে গিয়েই তো যত ঝামেলা হলো। কালো মেঘ বলল, মানুষের দেশ ঘুরে গিয়ে তবেই বৃষ্টির কথা বলতে। কিন্তু এখানে তো কিচ্ছু ঠিক নেই। আমি বৃষ্টি কীভাবে আনব! সবুজপরীর মন নরম হলো। বলল, ঠিক বলেছ। মানুষগুলো বন কেটে শেষ করেছে। যেখানে সেখানে বাড়ি বানিয়ে ওরা আকাশ ছুঁতে চায়। শহরে দেখেছ কী উঁচু উঁচু দালান? গ্রামেও নেই বিল। নেই পুকুর। নেই ঝিল। মেঘপরী বলল, দেখেই তো ছুটে এলাম বনের দিকে। মানুষের দেশে এসে তো আমারও ভীষণ গরম লাগছে। আমি যাই, ওদিকে একটা বাড়ি দেখা যাচ্ছে। ওখানে গিয়ে একটু বসি। সবুজপরী বলল, চল আমিও যাই। দুজনে এসে বসল, বাড়ির কাছের আমগাছে। বেশ কয়েকটি পাকা আম দুলছে গাছে। গাছের নিচে কারা যেন কথা বলছে। মেঘপরী দেখল, দুটো বাচ্চা পানিতে নেমে সাঁতার কাটছে। পুকুর নেই। ওদের বাবা মাটি কেটে পুকুরের মতো বানিয়েছে। চারদিকে বড় একটা প্লাস্টিক বিছিয়ে দিয়েছে। বাচ্চা দুটো বাবার বানানো ছোট্ট পুকুরে মজা করে খেলছে। খুশিতে মেঘপরী নেচে উঠল। বলল, সবুজপরী শুনছ? আমি কালো মেঘের কাছে বৃষ্টি চাইতে পারব। দুজন উড়তে উড়তে চলল মেঘের দেশে। যাওয়ার পথে দেখল, আরেকটি বাড়ির উঠোনে কয়েকজন বাচ্চা মিলে গাছ লাগাচ্ছে। ঘামে জবজবে তাদের মুখ। ফুলপরী বেরিয়ে এলো রঙ্গন ফুলের ঝোপ থেকে। বলল, আমার সঙ্গে এসো। একটা মজার খেলা দেখাব। মেঘপরী আর সবুজপরী চলল ফুলপরীর সঙ্গে। সুন্দর একটি বাগান।  কত শিশু মেয়ে হাত ধরাধরি করে গান করছে। মেঘপরী আর সবুজপরী ওদের গান শুনল। ফুলপরী বলল, ওরা সবাই স্বপ্নপুরীর রাজকন্যা আর রাজপুত্র। ফুলপরীর কথা শেষ হতে না হতেই ঝুরঝুর করে বৃষ্টি পড়তে লাগল। আর সবশেষে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে গান ধরল সেই ছোট্ট মেয়ের দল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর