শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

মিশ্র রঙের গরু

শ্যামল বণিক অঞ্জন

মিশ্র রঙের গরু

আর মাত্র কয়েকটা দিন পরেই পবিত্র ইদুল আজহা (কোরবানির ঈদ)। এরই মধ্যে নিতু জিতুর পরিবারে শুরু হয়ে গেছে কোরবানির গরু কেনার তোড়জোড়। নিতু বাবাকে সেই কবেই বলে রেখেছে- বাবা এবার কোরবানি দেওয়ার জন্য একটা লাল রঙের গরু কিনবে আর জিতু বলেছে- না বাবা ধবধবে সাদা রঙের একটা গরু আনবে। এই নিয়ে মাঝেমধ্যেই ওদের দুই ভাই-বোনের মধ্যে তর্কাতর্কি খুনশুটি লেগেই থাকে আর সেটার সমাধান করতে বাবাকেই এগিয়ে আসতে হয়। ঠিক আছে ঠিক আছে তোমরা এখন থামো, যখন গরু কিনতে যাবো তখন ডিসাইট করা হবে এবং এর জন্য টস করবো, টসে যে জয় লাভ করবে তার মতামতকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে। কিন্তু এতেও নিতু জিতু রাজি নয়। ওরা সমস্বরে বলে ওঠে না না বাবা এটা চলবে না আমার পছন্দেরটাই আনতে হবে, হট্টগোলো যেন মাথা নষ্ট করার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে যায়। এবার মা রেগেমেগে চেঁচিয়ে বলে ওঠে- এই তোমরা থামবে নাকি পিটুনি খাবে? মায়ের ধমকে আপাতত শান্ত হয় পরিবেশ কিন্তু কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারে না ওরা কেউই! এ নিয়ে বাবাও ভিতরে ভিতরে একটা চাপ অনুভব করে। কী করবে ভেবে কোনো কুলই পাচ্ছে না!

দুই ভাই বোনের এই খুনসুটি কী করে থামাবে কিছুতেই কোনো রাস্তা খুঁজে পাচ্ছে না। দুই ভাই বোনের কাণ্ডকারখানায় সারাক্ষণ খুনশুটি আর সব বিষয়েই সব সময় দুই মেরুতে অবস্থান করায় মা তো ওদের ওপর মহাবিরক্ত, বললো- এতে এতো টেনশনের কী আছে, রংটা কি কোনো বিষয় হলো? তাছাড়া সব সময় ওদের মতামতকে কেন এতোটা প্রাধান্য দিতে হবে সেটাই তো আমি বুঝি না!

বাবা কোনো কথা না বলে চুপ করে রইলেন আর মনে মনে ভাবতে লাগলেন কী করা যায়!

অবশেষে এলো কোরবানির গরু কেনার নির্ধারিত সেই দিন। আরিফ সাহেব কোরবানির হাটের উদ্দেশ্যে রেব হয়ে গেলেন। প্রচণ্ড রোদ আর গরমের মধ্যে হাটে এসে পৌঁছালেন এবং শুরু করলেন তাঁর কাক্সিক্ষত সেই গরুটি খোঁজা! কিন্তু কিছুতেই পাচ্ছেন না, ঘুরতে ঘুরতে ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেলেন আরিফ সাহেব কিন্তু তাঁর পছন্দের গরুটিকে কিছুতেই উনি খুঁজে পাচ্ছিলেন না! হাঁটতে হাঁটতে ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়লেন আরিফ সাহেব, হঠাৎ করেই উনার চোখে পড়লো লাল সাদা আর কালো রঙের মিশ্রণের অদ্ভুত সুন্দর একটা গরু! শুধু তাই না, গরুটি দেখতেও বেশ নাদুসনুদুস সুস্বাস্থ্যবান এবং দৃষ্টিনন্দন! আরিফ সাহেব সিদ্ধান্ত নিলেন একবার যখন কাক্সিক্ষত গরুটির সন্ধান পেয়েছি এটাকে আর কিছুতেই হাতছাড়া করতে দেওয়া যাবে না। যেই ভাবনা সেই কাজ, উনি আর কোনো চিন্তাভাবনা না করে গরুটিকে কিনেই নিলেন। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বাড়ির পথ ধরলেন। গেটের বাইরে থেকেই সন্তানদের নাম ধরে ডাকতে লাগলেন আরিফ সাহেব। নিতু জিতু কই তোমরা এদিকে এসো, দ্যাখো কত্তো সুন্দর একটা গরু এনেছি! বাবার ডাকাডাকিতে দৌড়ে ছুটে আসলো ওরা দুই ভাই বোন এবং এসেই যেন ভিমরি খেয়ে গেলো গরুটির সৌন্দর্যে। সমস্বরে বলে উঠলো- বাহ্! এতো সুন্দর গরু! দারুণ তো গরুটা! দ্যাখ দ্যাখ মিতু কতো সুন্দর একটা গরু! মিতু বললো দ্যাখো ভাইয়া চোখ দুইটা দ্যাখো মনে হয় কাজল দিয়েছে! মা, ও মা তাড়াতাড়ি আসো দ্যাখো এসে।

কী হলো তোমাদের এতো চেঁচামেচি কিসের। এতো বলতে বলতে বেরিয়ে এসে মা-ও গরুটি দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলো। বলতে লাগলো সত্যিই তো, খুব সুন্দর!

সন্তানদের খুশি দেখো বাবা-মা দুজনেই যেন তৃপ্ত হলো, বাবা বললেন, তোমাদের পছন্দ হয়েছে?

ভাই-বোন দুজনেই বললো, হ্যাঁ বাবা খুব পছন্দ হয়েছে!

এই প্রথমবার দুই সন্তানকে একমত হতে দেখে বাবা-মা দুজনই মনে মনে খুশি হলো। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর