শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

রবি আর টুকটুকি

তানহা জাদিদা খান

রবি আর টুকটুকি

এক ছোট্ট গ্রামে বাস করতো আট বছরের একটি ছেলে, যার নাম ছিল রবি। রবির সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু ছিল একটি ছোট্ট বিড়াল, নাম টুকটুকি। টুকটুকি ছিল সাদা রঙের, এক জোড়া বড় বড় কালো চোখ, আর তার লেজটা ছিল তুলোর মতো নরম। রবি আর টুকটুকি সারাদিন একসঙ্গে খেলত।

রবির বাবা-মা টুকটুকিকে মোটেও পছন্দ করত না। তারা মনে করত, বিড়াল বাড়িতে ময়লা করে, আর বিড়াল রাখার কোনো দরকার নেই। তারা প্রায়ই বলত, ‘রবি, এই বিড়ালটাকে তোমার বাইরে রাখতে হবে। আমাদের বাড়িতে বিড়াল থাকা উচিত না।’ রবি তখন মন খারাপ করে বসে থাকত, কিন্তু তার সঙ্গী টুকটুকি কখনোই তাকে একা ছাড়তো না। টুকটুকি রবির পাশে এসে বসতো, তার গায়ে ঘষা দিয়ে মিউ মিউ করে তাকে সান্ত¡না দিত।

একদিন সকালে, রবি তার বন্ধুদের সঙ্গে মাঠে খেলতে গেল। মাঠটি ছিল একটু দূরে, যেখানে একটি ছোট পুকুরও ছিল। তারা ফুটবল খেলতে খেলতে এক সময় পুকুরের কাছাকাছি চলে গেল। হঠাৎ বলটি পুকুরে পড়ে যায়। রবি বলটি আনতে গিয়ে পড়ে যায় পুকুরে। রবি তখন সাঁতার জানত না, সে জলের মধ্যে ডুবতে শুরু করল। সে জোরে জোরে চিৎকার করতে লাগল, কিন্তু তার বন্ধুদের কেউ তাকে শুনতে পাচ্ছিল না। সেই মুহূর্তে টুকটুকি হঠাৎ করেই এসে হাজির হলো। সে মাঠের পাশেই ছিল, রবিকে অনুসরণ করছিল। টুকটুকি জলের ধারে এসে মিউ মিউ করে চিৎকার করতে লাগল।

টুকটুকির চিৎকার অদ্ভুত রকমের জোরালো ও উদ্বিগ্ন ছিল। তার চিৎকার শুনে পাশের জমিতে কাজ করা কৃষকরা দৌড়ে এসে দেখলো, রবি পানিতে ডুবে যাচ্ছে। কৃষকরা দ্রুত পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়লো এবং রবিকে উদ্ধার করলো। রবি তখন অর্ধচেতন অবস্থায় ছিল, কিন্তু টুকটুকি তার চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে মিউ মিউ করতে লাগলো। যেন বলছে, ‘সব ঠিক হয়ে যাবে।’

রবির বাবা-মা যখন এই খবর শুনলো, তখন তারা হতবাক হয়ে গেল। তারা বুঝতে পারল, টুকটুকি না থাকলে রবি হয়তো আজ বেঁচে থাকত না। তারা রবিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল এবং টুকটুকিকেও আদর করে কাছে নিয়ে এলো। টুকটুকি তখন তাদের পায়ের চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছিল, যেন সে-ও সুখ ভাগাভাগি করতে চাইছে।

সেদিন থেকে রবির বাবা-মা টুকটুকিকে খুব ভালোবাসতে লাগলো। তারা বুঝতে পারলো, পশু-পাখিরাও মানুষের জীবনে অনেক উপকার করতে পারে। তারা আর কখনো রবিকে বিড়াল নিয়ে বকাঝকা করলো না। বরং তারা নিজেরাই টুকটুকির যত্ন নিতো। টুকটুকির জন্য বিশেষ খাবার নিয়ে আসতো, তার জন্য একটি আরামদায়ক বিছানা বানিয়ে দিল।

গ্রামের মানুষজনও ঘটনা শুনে অবাক হলো এবং সবাই পশু-পাখির প্রতি আরও যত্নবান হলো। রবি আর টুকটুকির বন্ধুত্বও গভীর হলো আর তার বাবা-মা তাদের সঙ্গ দেখে খুশি হলো। টুকটুকিকে তারাও পরিবারের সদস্যের মতো ভালোবাসতে শুরু করল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর