শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

তিড়িং বিড়িং ফড়িং

রুখসানা বিলকিস

তিড়িং বিড়িং ফড়িং

তখন খুব ভোর বেলা। চারিদিক কেবল আলোকিত হচ্ছে। মিষ্টি একটা মেয়ে নাম তার গ্লোরিয়া, সে এ সময় গেল বাগানে ফুল তুলতে। বাগানটা ভর্তি হয়ে আছে নানান রঙের ফুলে। লাল, সবুজ, হলুদ, আসমানি, কমলা, নীল আরও কত যে রঙের ফুল ফুটে আছে বাগানটায় তা বলে বুঝানো যাবে না। আর এত এত ফুলের সুবাসে ভরে আছে পুরো ফুলের রাজ্যটা। মনের সুখে গ্লোরিয়া গান গাইছে- ‘মনে যত রঙের বাহার ছড়িয়ে আছে হেথা, এমন মিষ্টি মধুর সুবাস পাবে বলো কোথা।’

গ্লোরিয়া পরে আছে একটা সোনালি রঙের ফ্রক। বিশাল তার ঘের। মাথা ভর্তি কালো কোঁকড়া চুল। একটা রুপোর তৈরি প্রজাপতি কাঁটা দিয়ে চুলটাকে চূড়া করে বেঁধে রেখেছে। পায়ে সোনার নূপুর। হাঁটার ছন্দে সেই নূপুর বেজে ওঠে ঝম ঝম ঝম। রাজকীয় ছন্দে নূপুরটা যেন তার পথ করে দিচ্ছে।

হঠাৎ করেই তার চূড়া করে বাঁধা চুলে এসে বসল একটা ফড়িং। কিন্তু এতটুকুও সে স্থির থাকছে না। আবার উড়ে চলে যাচ্ছে। আবার এসে বসছে। খুব তিড়িং বিড়িং করছে ফড়িংটা। গ্লোরিয়া অনেক চেষ্টার পর ফড়িংটাকে ধরতে পারল। ধরে তাকে হাতের মাঝে রাখল। ফড়িংটা খুব ভয় ভয় গলায় বলল, ‘আমায় মেরো না তুমি। দয়া করে মেরো না আমায়। তুমি কত ফুল চাও। এক নিমিষে আমি তোমায় সব ফুল তুলে দিব। তবুও আমায় তুমি মেরো না।’

গ্লোরিয়া খুব-ই আশ্চর্য হয়ে গেল। একটা ফড়িং কথা বলছে! কী করে তা সম্ভব!

তুমি কথা বলতে পার? কীভাবে?

তখন ফড়িংটা বলল, ‘আমাদের একটা ক্ষমতা আছে। তার সাহায্যে আমি মানুষ, গাছ, পোকা মাকড় সবার সঙ্গেই কথা বলতে পারি। তোমার নাম বুঝি গ্লোরিয়া?’

‘ওমা, তুমি আমার নামও জানো?’

‘হুউউউ...আমি আরও অনেক কিছুই জানি। তুমি এক রাজকন্যা। কিন্তু তোমার মা নেই। তাই তোমার মন সব সময় খারাপ থাকে। তোমার মন যখন বেশি খারাপ হয় তখনই তুমি এই বাগানটায় এসে ফুলের সঙ্গে গল্প করো। আমি তোমাকে আগেও দেখেছি। আজ-ই প্রথম নয়।’

গ্লোরিয়া অবাক হয়ে চঞ্চল ফড়িংটার কথা শুনছিল।

ফড়িংটা তখন বলল, ‘আমি কিন্তু তোমার মন ভালো করে দিতে পারি’।

‘কীভাবে’?

‘আমার কাছে একটা হীরের আংটি আছে। সেটা কিন্তু যে সে হীরে নয়। এটা হলো রাঙা পাহারের চূড়া থেকে আনা হীরে দিয়ে তৈরি। যা আমাদের রাজ্যে আছে। অন্য কোথাও তা পাওয়া যায় না।’

গ্লোরিয়া জিজ্ঞাসা করল ফড়িংকে, ‘ওই আংটি দিয়ে আমি কী করব? ও কি আমার মা কে ফিরিয়ে আনতে পারবে’?

তিড়িং বিড়িং করতে করতে ফড়িংটা বলল, ‘না, সে তোমার মাকে ফিরিয়ে আনতে পারবে না। যে একবার হারিয়ে যায় তাকে কি আর আনা যায়, বলো?

তবে এই আংটির সবচেয়ে বড় গুণ হলো যার আঙুলে সেটা থাকবে তাকে দুঃখ কষ্ট কখনোই ছুঁতে পারবে না। সে থাকবে সব সময়ই সুখী আর হাসি খুশি।’

গ্লোরিয়া খুবই আগ্রহী হয়ে জিজ্ঞাসা করল, ‘তুমি সত্যি বলছ? সত্যি কি তুমি আমায় ওই আংটি এনে দিবে? কবে আনবে, বলো! আমার যে আর দেরি সহ্য হচ্ছে না’।

ফড়িংটা একবার গ্লোরিয়ার চারদিক উড়ে উড়ে ঘুরে এলো। ও তো এতই চঞ্চল যে, এক দ-ও বসতে পারে না।

ওর সামনে এসে বলল, ‘আজ থেকে এক মাস পর ঠিক এই জায়গায়, এই সময়ে আমার জন্য অপেক্ষা করবে। আমি ওই আংটি নিজে এসে তোমাকে পরিয়ে দিব।’

গ্লোরিয়া খুশিতে এবার কেঁদেই দিল। কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘জানো ফড়িং, আমি রোজ লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদি। চুপি চুপি। বাবা যেন শুনতে না পায়। তাহলে তো বাবা ও কষ্ট পাবে। মা চলে গিয়ে আকাশের তারা হয়ে যাওয়ার পর থেকে আমি একদিনের জন্যও হাসতে পারিনি।

আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করব। যত দিন তুমি না আসবে আমি এ জায়গা থেকে নড়ব না। কথা দিলাম।’

তিড়িং বিড়িং ফড়িংটা আলতো করে গ্লোরিয়ার গোলাপি গাল ছ্ুঁয়ে বলল, ‘আমিও কথা দিয়ে যাচ্ছি। তোমার জন্য সেই আংটি নিয়ে ঠিক এক মাস পর ফিরে আসব। তার আগে আমায় কথা দাও। তুমি মিষ্টি একটা মেয়ে হয়ে থাকবে। আর কাঁদবে না, মন খারাপও করবে না। ফুলেদের সঙ্গে হেসে হেসে খেলা করবে।’

গ্লোরিয়া অনেক দিন পর চোখের জল মুছে মিষ্টি করে হেসে বলল, ‘কথা দিচ্ছি ফড়িং। আর কখনোই কাঁদব না। শুধুই হাসব।’

গ্লোরিয়ার এই কথা শুনে চঞ্চল ফড়িংটা ফুরুত করে উড়ে গেল ওই আকাশের দিকে, অনেক উঁচুতে।

আর গ্লোরিয়া হাসি মুখে অপেক্ষা করতে লাগল তিড়িং বিড়িং ফড়িংয়ের জন্য।

সর্বশেষ খবর