শিরোনাম
শুক্রবার, ১২ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

অন্যরকম চালাকি

ইকবাল খন্দকার

অন্যরকম চালাকি

প্রতিদিনের মতো আজও খেলতে যাচ্ছিল বাদল। হঠাৎ তার চোখ চলে যায় ছোট চাচার দিকে। তিনি মুখ ভার করে বসে আছেন বারান্দায়। বাদল তার কাছে গিয়ে জানতে চায় মন খারাপ কেন। তিনি দীর্ঘশ্বাস চেপে বলেন, আমি জেনেশুনে কোনো দিন কারও ক্ষতি করিনি। তাহলে মানুষ কেন আমার ক্ষতি করে? তুই তো জানিস, লিচু বাগানটার পেছনে আমি কত সময় দিই। কত শ্রম দিই। তবু যদি শান্তি মতো লিচু পাকাতে না পারি, তাহলে যাব কোথায়? করবটা কী?

   চাচার অভিমানের কারণ অনুমান করতে পারে বাদল। তবু সে জানতে চায় শান্তি মতো লিচু পাকাতে না পারার কারণ কী। চাচা বলেন, ‘কারণ’ বলে লাভ নেই। এলাকার যারা গণ্যমান্য, তাদের কাছে অনেকবার বলেছি। কোনো ফল পাইনি। তুই হয়তো জানিস, কেউ যদি লিচু চায়, আমি ‘না’ করি না। কম হোক, বেশি হোক, দিই। তবু চুরি কেন করতে হবে? কী আর বলব, গত এক সপ্তাহে আমার কয়েক হাজার টাকার লিচু চুরি হয়ে গেছে। শুধু যে চুরি, তা তো না; ডালপালা ভেঙে সর্বনাশ করেছে।

     চাচাকে সান্ত¡না দেয় বাদল। দুদিন পর সে আবার বসে তার সঙ্গে। বলে- গতকাল মামার বাসায় গিয়েছিলাম। সেখানে একটা জিনিস দেখেছি। সিসি টিভি ক্যামেরা। আর এটা দেখার পর থেকেই মনে হচ্ছে, আমি এত বোকা কেন? কেন আমি আপনাকে সিসি টিভি ক্যামেরা কেনার পরামর্শ দিলাম না? আপনি তো জানেন, এই জিনিসটা চোরদের যম। যেখানে সিসি ক্যামেরা আছে, চোররা এর আশপাশেও যায় না। আর যদি মনের ভুলে চলেও যায়, ধরা পড়তে বাধ্য।

   চাচা বলেন, সিসি টিভি ক্যামেরার চিন্তা তোর মাথায় না এলেও আমার মাথায় এসেছিল। কিন্তু ভয়ে পিছিয়ে গেছি। কিসের ভয়ে জানিস? টাকার। আমি একজনের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, আমার লিচু বাগানটা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে সব মিলিয়ে লাখ দেড়েক টাকা খরচ হবে। এত টাকা আমি এখন কোথায় পাব? কেউ তো ধারও দেবে না। আর দিলেই বা কী? পরিশোধ করব কীভাবে? যদি লিচুগুলো ভালোভাবে পাকার সুযোগ পেত আর আমি বিক্রির সুযোগ পেতাম, তাহলে হয়তো কয়েক লাখ টাকা হাতে আসত।

    আচমকা বসা থেকে উঠে পড়ে বাদল। চাচা জানতে চান কী হয়েছে। সে কিছু বলে না। মুখে রহস্যময় হাসি ফুটিয়ে সরে যায় তার সামনে থেকে। চাচা তাকে ডেকে দাঁড় করাতে চান। দাঁড়াতে চান নিজেও। কিন্তু হঠাৎ মাথা ঘুরে ওঠে বলে তিনি পড়ে যান একদিকে। চাচি এগিয়ে আসেন। তাকে ঘরে নিয়ে শুইয়ে দেন বিছানায়। এরপর তার শরীর কেবল খারাপই হতে থাকে। ডাক্তার আসেন। অসুখের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, কোনো কিছু নিয়ে হয়তো অতিরিক্ত টেনশন করেছিলেন। তাই প্রেসার বেড়ে গেছে।

     বাদল যদিও জানে চাচা কী নিয়ে অতিরিক্ত টেনশন করেছিলেন, তবু বলে না। সে চলে যায় বাড়ির দিকে। এরপর চাচাকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকার পরামর্শ এবং কিছু ওষুধ লিখে দিয়ে চলে যান ডাক্তারও। চাচি বালতি ভরে পানি আনেন। তারপর চাচার মাথায় দেওয়া শুরু করলে তিনি বিড়বিড় করে বলেন, রোজ কয়েকবার চক্কর দিতাম বলে চোররা চুরি করলেও ভয়ে ভয়ে করত। কিন্তু এখন আমি বিছানায় পড়ে গেছি। ওদের আর কোনো ভয় নেই। এখন ওরা সব লিচু সাফ করে নিয়ে যাবে।

      এক সপ্তাহ পর। চাচার শরীর আজ ভালো। তাই তিনি বিছানা থেকে উঠেই হাঁটতে থাকেন বাগানের উদ্দেশে। আর মনে মনে ভাবেন, লিচুর চিহ্নও হয়তো পাবেন না। কিন্তু বাগানের কাছে যেতেই চোখ কপালে উঠে যায় তার। কারণ গাছে গাছে পাকা লিচু। লালচে লিচুর জন্য সবুজ পাতাও দেখা যাচ্ছে না যেন। খুশিতে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন চাচা। এমন সময় তার পাশে এসে দাঁড়ায় বাদল। তিনি কিছু বলার আগেই সে বলতে শুরু করে- চোর ঠেকানোর জন্য একটু চালাকি করতে হলো। চালাকিটা হয়তো আপনার পছন্দ হবে না। বলবেন এটা করা ঠিক হয়নি। আমি বলব, চুরির মতো একটা ভয়াবহ অপরাধ ঠেকানোর জন্য এটুকু চালাকি করা যেতেই পারে।

     চাচা জানতে চান চালাকিটা কী। বাদল বলে- আমি মামার বাসার গেটে একটা স্টিকার দেখে এসেছিলাম। যে স্টিকারে লেখা ‘এই ভবনটি সিসি টিভি ক্যামেরা দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে’। আমার মনে হলো, ক্যামেরার দরকার নেই। শুধু লেখাটা হলেই চলবে। যেহেতু চোররা এমনিতেই ভীতু হয়। আমি কম্পিউটারের দোকানে গেলাম, এই লেখাগুলো টাইপ করালাম। তারপর ১০টা কাগজ সেটে দিলাম বাগানের চারপাশে। ওই যে একটা কাগজ আপনার পেছনের গাছেই আছে।

       চাচা পেছনে তাকান। দেখেন বড় বড় অক্ষরে লেখা- ‘এই বাগানটি সিসি টিভি ক্যামেরা দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে’। এবার তিনি তাকান বাদলের দিকে। তাকিয়েই থাকেন। কারণ তিনি বুঝে উঠতে পারেন না তাকে ধন্যবাদ দেবেন, নাকি বকা দেবেন।

সর্বশেষ খবর