শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

ভূতের কান্ড

দীপক বড়ুয়া

ভূতের কান্ড

নীল পাহাড়ের ঢালে মামদো ভূতের দেশ। লাখ শত ভূতের বাস। মামদো ভূতের রাজা-রানি  আছে। সবাই রাজা-রানিকে ভালোবাসে। রাজা ও রানি দুজনই ভূতদের স্নেহ করে। সুখে-দুঃখে দেখভাল, ভালোমন্দের খবর রাখে।

সারাদিন এটা-ওটা নিয়ে আসে। রাতে সবাই বসে খায়। রাজার এক মাত্র মেয়ে নীলাদ্রি।  অন্যান্য ভূতের চেয়ে সুন্দরী। সব ভূত নীলাদ্রিকে পছন্দ করে। অন্য ভূতের  ছেলেমেয়ে একসঙ্গে খেলে।

বর্ষায় খুব কষ্ট হয়। নিজেদের বাড়ি নেই।  বৃষ্টিতে ভিজে। ঠান্ডায় কাঁপে। রোদে শরীর শুকায়। একদিন বৃষ্টিতে ভিজে নীলাদ্রির জ্বর আসে। ওখানে ডাক্তার নেই। দিনরাত মাথায় জল ঢালে। কপালে জল পট্টি দেয়। জ্বর নামেনা। জ্বরে কাঁপে।

রানির চোখে জল। রাজার চোখেও। সব ভূতে প্রার্থনা করে। ক’দিন পরে জ্বর নামে। রাজা-রানির ঠোঁটে মুখে হাসি। ভূতের দেশে আনন্দের ঢেউ।

মামদো ভূত রাজা বলে, আজ আনন্দের মেলা হবে। নানারকম খেলা হবে। উৎসবের আয়োজন কর। যেমন কথা তেমন কাজ। চতুর্দিকে সাজানো হয়। কত খুশি, কি আনন্দ।

ভূতের দেশে সুখের আনন্দ। একদিন মাঝ দুপুরে পাহাড় থেকে বাঘ নামে। সবাই ভয়ে ছুটাছুটি করে। রাজার কানে সেই খবর আসে। রাজা ভাবে বাঘ কী উপায়ে ধরা যায়! সবাইকে ডাকে। বলে একটি কাজ কর। আমাদের মাছ ধরার জাল আছে। চারিদিকে জাল নিয়ে তৈরি থাকবে। যে যত পার মোটা লাঠি নিয়ে প্রস্তুত থেকো। বাঘ আসলেই জালে জড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করবে। আটক হলে বাঘকে লাঠি দিয়ে পেটাতে শুরু করবে। বাঘ নরম শান্ত দুর্বল হলে পা বেঁধে ফেলবে।

- তারপর কী করব বাঘকে? এক ভূতে প্রশ্ন করে।

রাজা ভাবে। রাজার বড় দেহ। সারা গায়ে লম্বা কালো লোম। ইয়া বড় হাতের নখ। কচু পাতার মতো কান। অনেক লম্বা। সবাই একই।

পাহাড়ের তলাতে বৃষ্টির জল জমে। অতি নিচু, তাই পুকুরের মতো। ওই জলেই মামদো ভূতেরা স্নান করে, খায়দায়।

ভূতের মেয়ে নীলাদ্রি বলে,

বাবা আমার মাথায় একটি বুদ্ধি আসছে।

- কী বুদ্ধি নীলাদ্রি? বাবা প্রশ্ন করে।

- পাহাড়ে অনেক গাছ। গাছ কেটে চারিপাশে কাঠ দিয়ে কাঠের ঘেরা তৈরি কর। কাঠগুলো মাটির অনেক গভীরে পুঁততে হবে। যাতে বাঘে নাড়তে না পারে।

- খুব সুন্দর বুদ্ধি তো! বাঘ বেরোতে পারবে না। কিন্তু না খেয়ে বাঘ মারা যাবে।

- মারা কেন যাবে? ওপর থেকে খাবার ফেলে দেওয়া যাবে।

- ঠিক বলেছিস। এই তোরা কেউ কেউ জাল দিয়ে বাঘ ধরতে যা’, অন্যেরা কাঠ কেটে ঘেরা তৈরি কর।

হঠাৎ হইচই  শুরু। বড় গলায় বলে, বাঘ ধরা পড়েছে। রাজা, রানি, নীলাদ্রি সব ভূতেরা বাঘ দেখতে ছুটে যায়।

সবাই অবাক! ভূতের মাথায়, গায়ে রক্ত।

রাজার প্রশ্ন

- মাথা গায়ে রক্ত?

- কোপাতে হয়েছে, তাই রক্ত ঝরছে।

- যা হয়েছে থাক। সবাই পা বাঁধা অবস্থায় কাঠের ঘেরায় নিয়ে যা। ততক্ষণে ঘেরা তৈরি। বাঘকে ঘেরায় রেখে ওপর থেকে কাঁচা মাংস দেওয়া হয়। তারপর সবাই চলে আসছে।

রাজা বলে,

- দাঁড়া। বাঘের বিশ্বাস নেই। চতুর্পাশে পাহারার ব্যবস্থা কর। পালাক্রমে পাহারায় থাকবি।

- ঠিক বলেছ বাবা। নীলাদ্রি বলে।

মাঘে প্রচ- শীত নামে। নীল পাহাড়ের নিচে শীতটা বেশি। সারা রাত শীত কুয়াশায় কিছুই দেখা যায় না। ভোরে ঠান্ডা শিশির ঝরে। বরফ জমে। হাঁটাহাঁটি চলে না। সবাই শীতের ভয়ে কাঁচুমাচু করে। ওই দিকে বাঘের অবস্থা খারাপ। শীত শিশিরে কাঁবু। উপুর হয়ে শুয়ে কাঁপে।

শীতে রাজা, রানি, নীলাদ্রি সব ভূতে নীরব নিথর। খাওয়া, চলাফেরা বন্ধ। সূর্য ওঠে।  কুয়াশায় আচ্ছন্ন আকাশ। সূর্যের মুখ দেখে না কেউ।

এই শীতে বুঝি মামদো ভূতের দিন শেষ। দিন যায়। এক, দুই, তিন দিন। শীতের মাত্রা দ্রুত বাড়ে, কমেনা। পাহাড় চূড়ায়, কোলে শীতের হিমে বরফ জমে। মামদো ভূতের বংশ জীবন শেষ। রা’ শব্দটিও নেই।

শুধু নীলাদ্রির হুঁশ আছে। দূরের ঘেরায় বাঘের পা নড়ে। নীলাদ্রি দেখে দাঁড়ায়। বাঘের দিকে চোখ রেখে হাত নাড়ে।

বাঘও দাঁড়ায়। চারিদিকে মোটা কাঠের ঘেরা। বেরোবার উপায় নেই। বরফে পা ভেঙে ভেঙে নীলাদ্রি বাঘের ঘেরার কাছে যায়। বাঘও অবশ পা ফেলে ধীরে ধীরে। এক সময় ঘেরার পাশে পৌঁছে যায়। নীলাদ্রি হাত বাড়ায়। বাঘ নীলাদ্রির হাতে পা রাখে। সূর্যের তাপ বাড়ে। কুয়াশারা পালায়। নীলাদ্রির চোখে-মুখে হাসি। বাঘের রুদ্র চোখেও তাই!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর