শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা
গল্প

দূরের মাঠ নীল আকাশ

আমীরুল ইসলাম

দূরের মাঠ নীল আকাশ

নদী বয়ে চলেছে। চারপাশে গাছ আর গাছ। গাছে গাছে কত যে ফল। টকটকে লাল রং। যেন রস গড়িয়ে পড়ছে। নদীর স্রোতে পানি নেই। বয়ে চলেছে দুধের ক্ষীর। আর নদীর তীরে নানারকম মিষ্টি। চমচম, পতোয়া, ক্ষীরমোহন, কালো জাম- আরও কত যে মিষ্টি। মেয়েটির চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। ফলমূল আর মিষ্টি দেখে মেয়েটির খিদে আরও বেড়ে গেল। পেট চোঁ চোঁ করছে।

দূরের মাঠ। নীল আকাশ। নদী বয়ে যায় কুলুকুলু। নদীর তীরে এক বটগাছ। ঝাকড় মাকড় পাতা। আপিল চাপিল ফুল। সবুজ সবুজ রং গাছের পাতা নড়েচড়ে। দুঃখগুলো ঝরে পড়ে। বাতাস বয়ে যায় মৃদুমন্দ। খোলা হাওয়া নেচে যায়। গাছের ডালে এসে বসে দুটি পাখি। একজনের নাম খঞ্জনা। আরেকজনের নাম রঞ্জনা। দুটি পাখি গান গায়। শিস দেয়। ওরা লেজ তুলে নাচে।

এক দিন।

ঠিক দুপুর বেলা। রঞ্জনা-খঞ্জনা এক গাছের ডালে পা তুলে বসল। তারপর গান গাইতে শুরু করল। রিনিঝিনি পাতায় বাজে নূপুর।

রঞ্জনা গান গায়

খঞ্জনা গান গায়

গানের সুর ছড়িয়ে পড়ে

হাওয়ায় হাওয়ায়।

নদীর জলের স্রোতে এমন সময়

চোখ বন্ধ হয়ে এলো। পেটে খিদে। তাই হাত পা ছড়িয়ে গাছে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যে মেয়েটি গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়।

রঞ্জনা তখন বলে,

মেয়েটি ঘুমিয়ে গেল কেন?

গাছের নিচে এসে বসে ছোট্ট একটি মেয়ে। চুল তার উড়ুউড়ু। চোখ তার ঘুম ঘুম। মেয়েটি এসে গাছের গায়ে হেলান দিয়ে বসল। তাকাল আকাশের দিকে। ভেসে যায় শাদা শাদা মেঘ। মেয়েটির পেটে অনেক ক্ষুধা। ঝিমুনি আসছে। ঠিক বলতে পারি না। খঞ্জনা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকে।

রঞ্জনা বলে

দুপুর বেলা মেয়েটি কি ভাত খেয়েছে?

মনে হয় না। ভাত যদি খেয়েই থাকে তবে এখন গাছের তলায় ঘুমায় কেন?

খঞ্জনার কথা শুনে খঞ্জনা বলে

ছোটরা কেন খাবার পায় না?

জানি না।

কেন তারা ক্ষুধায় কষ্ট পায়?

জানি না।

কেন তারা গাছের তলায় ঘুমায়?

জানি না।

তাহলে কি করা উচিত আমাদের?

অনেক কাজ করতে হবে সবাই মিলে।

এখন কী করা যায় মেয়েটার জন্য?

খঞ্জনা বলে

চলো আমরা উড়ে উড়ে যায়। মেয়েটির জন্য খাবার জোগাড় করে আনি।

চলো।

রঞ্জনা আর খঞ্জনা ডানা ঝাপটে উড়াল দিল। অল্প সময় উড়েই তারা পৌঁছে গেল একটা খাবারের দোকানে। দোকানের সামনে সামনে থরে থরে নানা খাবার সাজানো ডালপুরি, পরোটা, আলুর চপ, চিকেন চাপ- নানান পদের খাবার। বাতাসে খাবারের গন্ধ। মনটা খুশিতে ভরে গেল।

রঞ্জনা-খঞ্জনা উড়তে উড়তে কয়েকটা পুরি আর পরোটা ছিনিয়ে নিল। তারপর খুব তাড়াতাড়ি ফিরে এলো গাছের ডালে। মেয়েটি তখনো ঘুমোচ্ছে। পাখি দুটো চুপ করে মেয়েটির সামনে এসে বসল। মেয়েটার কাতর ভঙ্গি। চোখ বন্ধ। হয়তো কোনো স্বপ্ন দেখছে। গভীর ও আনন্দময় স্বপ্ন। মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে নদীর তীরে।

নদী বয়ে চলেছে। চারপাশে গাছ আর গাছ। গাছে গাছে কত যে ফল। টকটকে লাল রং। যেন রস গড়িয়ে পড়ছে। নদীর স্রোতে পানি নেই। বয়ে চলেছে দুধের ক্ষীর। আর নদীর তীরে নানারকম মিষ্টি। চমচম, পতোয়া, ক্ষীরমোহন, কালো জাম- আরও কত যে মিষ্টি। মেয়েটির চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। ফলমূল আর মিষ্টি দেখে মেয়েটির খিদে আরও বেড়ে গেল। পেট চোঁ চোঁ করছে। মেয়েটি ছুটল নদীর তীরে। পেট ভরে সে মিষ্টি খাবে। খিদের চোটে ঘুম ভেঙে গেল তার। তাকিয়ে দেখে সামনে দুটো পাখি। ওরা ফুরফুর করে উড়ে গেল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর