বনের ধারে ছোট্ট একটি গ্রাম, আর সেই গ্রামের মানুষদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে এক রহস্যময় শব্দ- ‘বঁউঁউঁ... বঁউঁউঁ...!’ এই শব্দ শোনার সঙ্গে সঙ্গেই সবাই আঁতকে ওঠে, কারণ সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় একদল মশার তাণ্ডব!
মশার কামড়ে গ্রামের শিশুদের গা চুলকাতে থাকে, বুড়োরা বিরক্ত হয়ে কপালে হাত দিয়ে বলেন, ‘এ তো ভূতের উৎপাত! নিশ্চয়ই কোনো দুষ্টু মশার ভূত আমাদের শাস্তি দিচ্ছে!’
শুধু একজন এই মশার ভূতের ভয় পায়নি-সে হলো ছোট্ট গুগু।
গুগু ছিল গ্রামের সবচেয়ে সাহসী ছেলে। সে ঠিক করল, যে করেই হোক এই ভূতের রহস্য সে উদ্ঘাটন করবেই!
সেই রাতে সে আর পাঁচজনের মতো মশার কামড় খেয়ে কাঁদল না। বরং সে মশারি টাঙিয়ে আরাম করে শুয়ে রইল। দেখল, মশারা গুনগুন করে তার চারপাশে ঘুরছে, কিন্তু মশারির ভিতরে ঢুকতে পারছে না। গুগু মিটিমিটি হাসল। ‘ভূত হলে কি মশারির বাইরে আটকে থাকত?’
পরদিন সকালে সে গ্রামবাসীকে ডেকে বলল, ‘এ কোনো ভূত নয়! ওরা হচ্ছে সাধারণ মশা! কিন্তু এদের নেতা একটা বিশাল দুষ্টু মশা!’
গ্রামবাসী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘কী করে জানলে?’
গুগু বলল, ‘আজ সন্ধ্যায় আমি জঙ্গলে গিয়ে ওদের নেতাকে খুঁজে বের করব!’
সন্ধ্যা নামতেই গুগু লুকিয়ে রইল জঙ্গলের ধারে। কিছুক্ষণ পর একদল বিশাল মশার গুনগুন শব্দে চারপাশ কেঁপে উঠল। মাঝখানে বসে আছে এক বড়সড়ো মোটা মশা, মাথায় সোনালি মুকুট!
গুগু বুঝল, ‘এই তো মশাদের রাজা!’
সে একটা চালাকির কথা ভাবল। সে তার কাছে থাকা একটা খাঁচায় মিষ্টির শরবত রেখে দিল।
মশার রাজা বলল, ‘বাহ! রাজা হয়ে আমিই প্রথম খাব!’
সে শরবতে নেমে এলো, আর সঙ্গে সঙ্গে গুগু খাঁচার দরজা বন্ধ করে দিল! রাজা আটকা পড়ে গেল!
রাজাকে বন্দি দেখে মশারা ভয় পেয়ে গেল। তারা কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘আমাদের রাজাকে ছেড়ে দাও! আমরা আর কোনো দিন কারও রক্ত খাব না!’
গুগু বলল, ‘ঠিক আছে, তবে শপথ কর, তোমরা এই গ্রাম ছেড়ে চলে যাবে!’
মশারা শপথ করল, আর গুগু রাজাকে ছেড়ে দিল। এরপর থেকে সেই গ্রামে আর কোনো দিন ‘মশার দুষ্টু ভূত’ দেখা যায়নি!