২৮ আগস্ট, ২০২৩ ২১:৫০

বাংলাদেশে ডেঙ্গু সংকটে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের আহ্বান বিশেষজ্ঞদের

অনলাইন ডেস্ক

বাংলাদেশে ডেঙ্গু সংকটে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের আহ্বান বিশেষজ্ঞদের

বাংলাদেশে চলমান ডেঙ্গু সংকট নিয়ে সমন্বিত মশা ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা এবং পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে অবস্থিত International Society of Bangladeshi Affiliated Microbiologists (ISBM) এর উদ্যোগে এক ওয়েবিনারে এ মতামত দেন বিশেষজ্ঞরা। 

গত ২৬ আগস্ট জুমে এই অনলাইন ইভেন্টটির শিরোনাম ছিল “Current State of
Dengue Epidemic in Bangladesh: Potential Short-Term and Long-Term Remedies for Control and Prevention”। দুই ঘণ্টার এই ওয়েবিনারে দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞদের একটি আন্তর্জাতিক প্যানেল তাদের সুচিন্তিত মতামত প্রদান করেন। বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থী ও পেশাজীবী,  গণমাধ্যম কর্মীসহ মোট ১৪৪ জন অংশগ্রহণকারী এই ওয়েবিনারে উপস্থিত ছিলেন। 

ওয়েবিনারে উপস্থিত বক্তাদের মধ্যে ছিলেন রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক প্রফেসর ডা. তাহমিনা শিরিন, প্রথিতযশা মেডিকেল এনটোমোলজিস্ট ও  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড: কবিরুল বাশার, সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্ট এজেন্সি এনভায়রনমেন্টাল হেলথ ইনস্টিটিউটের পরিবেশ বিষয়ক এপিডেমিওলজি এবং টক্সিকোলজি বিভাগের পরিচালক ডা. সিম শুজেন, ব্রিটিশ কলাম্বিয়া সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এর Zoonotic Diseases and Emerging Pathogens এর প্রোগ্রাম প্রধান এবং কানাডার ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলাম্বিয়া ক্লিনিকাল প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মোরশেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড: শাকিলা নার্গিস খান  এবং থাইরোকেয়ার লিমিটেড এর প্রেসিডেন্ট ডা. আনোয়ারুল ইকবাল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক এবং ISBM এর সাংগঠনিক সম্পাদক, এবং ওয়েবিনারটির সহ-আয়োজক ড. সঙ্গীতা আহমেদ বাংলাদেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ভূমিকা প্রদান করেন। 

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির  এপিডেমিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. জি ইউ আহসান  আলোচনা পর্বটি  সঞ্চালনা করেন। আইএসবিএম-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ড এর অধ্যাপক আনোয়ার হক তার স্বাগত বক্তব্যে জনস্বাস্থ্যের জন্য বৈজ্ঞানিক ফলাফলগুলি ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য মিডিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার উপর জোর দেন এবং রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে জনসাধারনের  সম্পৃক্ততার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। 

ওয়েবিনারে বাংলাদেশে তথা সমগ্র বিশ্বে ডেঙ্গুর বর্তমান অবস্থা, এবং কীভাবে এটি মারাত্মক জীবন-হুমকির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে সে বিষয়ে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় ধারণা এবং মতামত বিনিময় করা হয়। ড. শিরিন বাংলাদেশে ডেঙ্গুর অবস্থা এবং এডিস মশার বিস্তার নিয়ন্ত্রণে আইইডিসিআর এর উদ্যোগ সম্পর্কে শ্রোতাদের অবহিত করেন। তিনি বলেন, এডিস মশার প্রজনন স্থল হিসাবে গাছের টব এবং ছাদের উপরের বাগান ছাড়াও প্রধানত ওয়াসার ওয়াটার মিটার এবং নির্মাণাধীন ভবনের আশপাশের এলাকাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। মশার জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সিঙ্গাপুর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে। অতএব, বর্তমানে উপলব্ধ জৈবিক ও নিরাপদ কীটনাশক একই সাথে মাটিতে এবং স্প্রের মাধ্যমে প্রয়োগ করে বাংলাদেশে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ অবিলম্বে কার্যকর হতে পারে। 

ডা. শাকিলা Bacillus thuringiensis এর উপর তার কাজ উপস্থাপন করেছেন। এই ব্যাকটেরিয়াটি একটি প্রোটিন তৈরি করে যা কার্যকরভাবে এডিস মশার লার্ভাকে মেরে ফেলে। মশার বিস্তার নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের গবেষকদের উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তির সফল প্রয়োগের জন্য দীর্ঘমেয়াদী গবেষণা প্রয়োজন। 

আলোচকরা জনস্বাস্থ্য সচেতনতার অংশ হিসাবে ব্যক্তিগত সুরক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং জানান, ঘরোয়া পদ্ধতিতে মশা প্রতিরোধ করার জন্য পুদিনা, গাঁদা ফুল এবং তুলসী পাতা ব্যবহার করা যেতে পারে।

এই মূহুর্তে যেহেতু ডেঙ্গু সংক্রমণ মোকাবেলার জন্য কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই এবং কোনো অনুমোদিত  ভ্যাকসিনও নেই, বাংলাদেশে ডেঙ্গু মোকাবেলায় কার্যকর মশা ব্যবস্থাপনা এবং জনস্বাস্থ্য নীতিগুলিকে আরো  উন্নত ও সমণ্বিত করার ব্যাপারে আলোচকরা একমত পোষণ করেন। 

ওয়েবিনারে ডেঙ্গু ভ্যাক্সিন তৈরীর বিষয়েও আলোচনা করা হয়। আলোচকরা উল্লেখ করেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে ভ্যাক্সিনের মাধ্যমে ডেঙ্গু মোকাবিলার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। ডেঙ্গু ভাইরাসের সেরোটাইপ সংক্রান্ত জটিলতা এবং ঝুঁকিপূর্ণ বয়স গোষ্ঠীর মধ্যে ভ্যাক্সিনের যথাযথ প্রয়োগকে চিহ্নিত করা হয়। 

ড. জি ইউ আহসানও ডেঙ্গুর কার্যকর নিয়ন্ত্রণের জন্য জনস্বাস্থ্য সচেতনতা, প্রশাসক এবং বিজ্ঞানীদের মধ্যে সমন্বয় এবং জনগণের সম্পৃক্ততার উপর জোর দিয়েছেন। 

ওয়েবিনারের সঞ্চালক ড. সঙ্গীতা আহমেদ ডেঙ্গু সংক্রমণ সম্পর্কে তাদের মতামত শেয়ার করার জন্য আলোচকদের ধন্যবাদ জানান। আইএসবিএম-এর যুগ্ম সম্পাদক ডা. মনোয়ার হোসেন শ্রোতাদের ধন্যবাদ জানিয়ে অধিবেশন শেষ করেন এবং সকলকে ISBM এর সদস্য হওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর