২৪ জুন, ২০২২ ১৮:১৬

পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরাও

বেলাল রিজভী, মাদারীপুর

পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরাও

খুলে যাচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এই পদ্মা সেতু ঘিরে সোনালি দিনের স্বপ্ন বুনছেন মাদারীপুরের কৃষকরা। ফেরিঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থেকে নষ্ট হতো কৃষকের উৎপাদিত ফসল। মারা যেত গবাদি পশু। নষ্ট হওয়া কিংবা মরে যাওয়ার আশঙ্কা এখন আর নেই। তাই নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। উন্নত যোগাযোগ আর বিপণন ব্যবস্থা সহজলভ্য হওয়ায় কৃষকরা অধিক উৎপাদনের স্বপ্ন দেখছেন।

মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার মাইজপাড়া গ্রামের কৃষক হাবুল মাদবর। এক সময় শাক-সবজি উৎপাদন করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতেন। তিনি এই বছর অতিরিক্ত ৩ একর জমি লিজ নিয়েছেন। বিভিন্ন ধরনের সবজি উৎপাদন করে ঢাকার বাজারে বিক্রি করবেন। তিনি বলেন, আগে উৎপাদিত ফসল ঢাকার বাজারে নেওয়ার পথেই নষ্ট হয়ে যেত। ফেরিঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো। এখন আর অপেক্ষা করা লাগবে না।

এদিকে মাদারীপুর সদর উপজেলার ছিলারচর গ্রামের কৃষক শফিকুল আলম। লেখাপড়া শেষ করে শুরু করেছিলেন গবাদি পশুর খামার ও মাছ চাষ। স্থানীয় বাজারেই এসব বিক্রি করতেন। আগামীতে তিনি ঢাকার বাজার চিন্তা করে দ্বিগুণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছেন। মাছ ও পশুর দাম তুলনামূলক স্থানীয় বাজারে কম। চাহিদাও নেই। তবে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে মাছ ও গরুর চাহিদা রয়েছে। এ কারণেই তিনি নতুন করে একটি পুকুর খননের পরিকল্পনা করেছেন। গরুর খামারও সম্প্রসারণ করবেন বলে ভাবছেন।

তিনি জানান, রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ৯০ কিলোমিটার দূরের জেলা হলেও এতদিন ফেরিঘাটের ভোগান্তির কারণে উদ্বৃত্ত এসব মাছ, মাংস ও দুধ ঢাকায় বিক্রি করা যায়নি। তুলনামূলক কম দামে এসব দুধ ও মাংস স্থানীয় বাজার ও আশপাশের জেলায় বিক্রি করতে হয়েছে। এখন সেতু চালু হলে মাত্র ৩ ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছাবে দুধ ও মাংস।

গরুর খামারি শেরকান মুন্সী বলেন, গত বছর কোরবানির সময় একটি বড় ষাড় গরু ঢাকা নেওয়ার পথে ফেরিঘাটে ট্রাকে মারা গেছে। দীর্ঘ সময় ট্রাকে আটকা থাকায় অসুস্থ হয়ে পড়ে বেশ কিছু গরু। এতে আমার অনেক লোকসান হয়েছে। সারা বছরের পরিশ্রমের ফল ঘরে তুলতে পারিনি। পদ্মা সেতু চালু হলে এবার ফেরিঘাটের ভোগান্তির অবসান ঘটবে। অল্প সময়ে নিরাপদে আমরা আমাদের পশু ঢাকার বাজারে নিয়ে যেতে পারব।

মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, মাদারীপুরে উৎপাদিত শাক-সবজি আগে স্থানীয় বাজারেই বিক্রি হতো। এতদিন ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন কৃষকরা। এখন তাদের উৎপাদিত ফসল চলে যাবে রাজধানীতে। এতে করে নতুন নতুন কৃষক আগ্রহী হবে সবজি উৎপাদনে। আমরাও কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি অতিরিক্ত উৎপাদনের জন্য।

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, মাদারীপুরে কৃষি, মৎস্য ও পশু পালন খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। রাজধানীর বাজারে এখন খুব সহজেই উৎপাদিত ফসল, গবাদি পশু ও মাছ বিক্রি করা যাবে। এতে করে কৃষকরা উপকৃত হবেন।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর