২ কোটি ৯ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার তিনটি প্রস্তাবসহ মোট নয়টি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ২ হাজার ৪০৫ কোটি ৪৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। গতকাল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির এক ভার্চুয়াল সভায় প্রস্তাবগুলো অনুমোদন দেওয়া হয়। সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান বলেন, সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ৩৯তম সভা হয়েছে। ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য নয়টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়।
প্রস্তাবগুলোর মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চারটি, কৃষি মন্ত্রণালয়ের একটি, শিল্প মন্ত্রণালয়ের একটি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের একটি, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের একটি এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের একটি ছিল। ক্রয় কমিটির অনুমোদিত নয়টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ২ হাজার ৪০৫ কোটি ৪৬ লাখ ৪৮ হাজার ৬৬৭ টাকা। মোট অর্থায়নের মধ্যে জিওবি থেকে ব্যয় হবে ৯৩২ কোটি ১৬ লাখ ৭৮ হাজার ৫১৬ এবং এডিবি, জাইকা ও দেশি ব্যাংকঋণ ১ হাজার ৪৭৩ কোটি ২৯ লাখ ৭০ হাজার ১৫১ টাকা।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় মরক্কো থেকে ১১তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন টিএসপি সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রতি মেট্রিক টন টিএসপি সার ৪৮০ মার্কিন ডলার হিসেবে মোট ব্যয় হবে ১ কোটি ৪৪ লাখ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৫৩ কোটি ৮৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা।রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে নবম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন (১০%+) বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির প্রস্তাবেও অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ১ কোটি ৪৪ লাখ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৫৩ কোটি ৬০ লাখ ৪৮ হাজার টাকা।
সভায় ‘শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি’র প্রাথমিক অবকাঠামো নির্মাণ-পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ৪২৪ কোটি ৫৪ লাখ ৮৬ হাজার ৪৮৬ টাকা। সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের ডব্লিউপি-০৩ প্যাকেজের লট নম্বর ডিএস-০৫-এর পূর্তকাজ ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে ব্যয় হবে ১ হাজার ২৩২ কোটি ৯৫ লাখ ৭৮ হাজার ৫৮১ টাকা।
সভায় ‘কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প (ফেজ-২)’-এর পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ভ্যারিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এনআইজে কনসালট্যান্টস কোম্পানি লিমিটেডকে ২৪৫ কোটি ৯৯ লাখ ৭৮ হাজার ৩৭৪ টাকায় নিয়োগ করা হয়, যার চুক্তির মেয়াদ ২০২২ সালের ৩০ জুন শেষ হয়। প্রকল্পের নির্মাণকাজের মেয়াদ বৃদ্ধি হওয়ায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাস বৃদ্ধির জন্য ভ্যারিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ২৪ কোটি ৫২ লাখ ৪ হাজার ৬০১ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
তিনি বলেন, স্থানীয়ভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ৪৪ লাখ লিটার (+৫%) সয়াবিন তেল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের কাছে টিসিবির পণ্যসামগ্রী ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির জন্য জরুরি প্রয়োজন বিবেচনায় স্থানীয়ভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ভোজ্য তেল কেনার সিদ্ধান্ত হয়। সে পরিপ্রেক্ষিতে টিসিবি কর্তৃক ৪৪ লাখ লিটার সয়াবিন তেল সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে সেনা এডিবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে কেনা হবে। এতে ব্যয় হবে ৮১ কোটি ১৮ লাখ টাকা। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের মূল্য পড়বে ১৮৪.৫০ টাকা।
সভায় আন্তর্জাতিক সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ১ কোটি ১০ লাখ (+৫%) লিটার সয়াবিন তেল কেনার আরও একটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকি মূল্যে সয়াবিন তেল বিক্রির লক্ষ্যে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল আন্তর্জাতিকভাবে কেনার জন্য সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে জাদ আল রাহিল ইন্টারন্যাশনাল এলএলসি, ওমান (লোকাল এজেন্ট : স্কাই ট্রেডিং)-এর কাছে দর প্রস্তাব আহ্বান করা হলে তাতে সাড়া দেয় প্রতিষ্ঠানটি। দর প্রস্তাবটি পরীক্ষা শেষে রেসপনসিভ হয়। দর প্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে পিইসি কর্তৃক নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুপারিশকৃত দরদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রতি লিটার ১.৩১ মার্কিন ডলার হিসেবে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল আমদানিতে ব্যয় হবে ১৫১ কোটি ৭৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। টিসিবির গুদাম পর্যন্ত প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের খরচ পড়বে ১৫২.৮৬ টাকা।
তিনি বলেন, স্থানীয়ভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ৫৫ লাখ লিটার (+৫%) সয়াবিন তেল আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। টিসিবি কর্তৃক ৫৫ লাখ লিটার সয়াবিন তেল সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কেনার জন্য স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠান সুন সিং এডিবল অয়েল লিমিটেড, ঢাকার কাছে দর প্রস্তাব চাওয়া হলে প্রতিষ্ঠানটি দর প্রস্তাব দাখিল করে। টিইসি কর্তৃক দর প্রস্তাবটি রেসপনসিভ হয়। দর প্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুপারিশকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে ৫৫ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনায় মোট ব্যয় হবে ১০১ কোটি ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের মূল্য ১৮৪.৫০ টাকা।
সভায় আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ৮ হাজার (+৫%) মেট্রিক টন মসুর ডাল কেনার একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকি মূল্যে মসুর ডাল বিক্রির লক্ষ্যে ৮ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল কেনার জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হলে একটি দর প্রস্তাব জমা পড়ে। প্রস্তাবটি পরীক্ষা শেষে রেসপনসিভ হয়। দর প্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে পিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত দরদাতা প্রতিষ্ঠান আরাবেল বাকলিয়াত হাবুবাত সানটিক এএস (স্থানীয় এজেন্ট : বিআইএনকিউ, ঢাকা)-এর কাছ থেকে প্রতি মেট্রিক টন ৯৫৩ মার্কিন ডলার হিসেবে ৮ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল কেনায় ব্যয় হবে ৮১ কোটি ৫৭ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম ১০১.৫৭ টাকা।