সৌদি আরবে থাকা বাংলাদেশি প্রবাসীরা বিভিন্ন কারণে হুন্ডির আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন। বিধিনিষেধের কারণে অনেকে সুযোগ পাচ্ছেন না দেশে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে। আকামার অতিরিক্ত অর্থ পাঠাতে পারছেন না প্রবাসীরা কর্মীরা। বড় সংখ্যক প্রবাসীর বৈধ কাগজ না থাকায় তারা পাঠাতে পারছেন না ব্যাংকিং চ্যানেলে। অবশ্য অনেকে অপপ্রচারে বিভ্রান্তও হচ্ছেন।
পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনাসহ সৌদি আরবের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মক্কা-মদিনা-রিয়াদ-জেদ্দা প্রভৃতি স্থানে বাংলাদেশি প্রবাসীর অধিকাংশেরই মাসিক বেতনের পরিমাণ ৬০০ রিয়েলের মধ্যে। এর বাইরে তারা বিভিন্নভাবে কাজ করে মাসে আরও অন্তত ৬০০ থেকে ৭০০ রিয়েল আয় করছেন। তবে বৈধ আয়ের (আকামা অনুযায়ী) বেশি কোনো রেমিট্যান্স করার সুযোগ পাচ্ছেন না। এর ফলে কঠোর পরিশ্রমী বাংলাদেশি প্রবাসীরা বাধ্য হয়েই স্বজনের কাছে হুন্ডি অথবা অন্য কোনো মাধ্যমে টাকা পাঠাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেন টেলিফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, লিগ্যাল আয়ের বেশি অর্থ পাঠাতে গেলেই নানা প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে হয় প্রবাসী শ্রমিকদের। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের কনস্যুলেটের ভবনে একটি এক্সচেঞ্জ কোম্পানি স্থাপন করা হয়েছে। সেখান থেকে রেমিট্যান্স করলে ততটা সমস্যায় পড়তে হয় না। তবে প্রবাসী কর্মীরা বলছেন, অনেকের পক্ষেই কনস্যুলেটে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এই সুযোগে হজ্জ পালনে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা ওইসব প্রবাসীর অর্থ গ্রহণ করছেন।সৌদি আরবে নেওয়া হচ্ছে রিয়াল, তার বিনিময়ে বাংলাদেশে দেওয়া হচ্ছে টাকা। সৌদি আরবে বিশাল সংখ্যক প্রবাসীর কথা বিবেচনার পাশাপাশি বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্সের ব্যবস্থা করা হলে বার্ষিক রেমিট্যান্সে বড় ধরনের একটি পরিবর্তন ঘটবে বলে অনেকে মনে করছেন।
টানা ১৫ বছর ধরে পবিত্র হজ ও ওমরাহ করতে আসা লোকজনকে সহযোগিতা দেওয়া ময়মনসিংহের আবুল খায়ের দীপু বলেন, সৌদি আরবে ২০ লাখের বেশি বাংলাদেশি কাজ করছেন। মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীসহ বিভিন্ন মসজিদ ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ক্লিনারের কাজ করেন তাদের প্রায় সবাই বাংলাদেশি। তিন/চার বছর আগে ছিলেন ভারতীয় অথবা শ্রীলঙ্কানরা। এসব কাজ এখন করছে বাংলাদেশিরা। এছাড়া গৃহকর্মী হিসেবে যেসব বাঙালি মহিলা সৌদিদের বাসায় নিয়োজিত রয়েছেন তাদের অনেকের সঙ্গে বিরূপ আচরণের অভিযোগও রয়েছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম আইন লঙ্ঘন করে দৈনিক গড়ে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করিয়ে নিয়েও ন্যায্য পারিশ্রমিক দেওয়া হচ্ছে না বলে মানবাধিকার সংস্থাগুলো অনেক আগে থেকেই অভিযোগ করে আসছে। কোনো কোনো মহিলা অনেক সময় গৃহকর্তার যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অনেকেই মুখ খুলতে রাজি হন না চাকরি হারানোর আতঙ্কে কিংবা লোকলজ্জার কারণে। আর মুখ না খোলায় সংশ্লিষ্ট কর্মীগণের দেশগুলোর কনস্যুলেটও কোনো পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হচ্ছে না।
মক্কায় ক্লিনার পেশায় কর্মরত কয়েকজন বাংলাদেশির সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তারা বাংলাদেশ থেকে এসেছেন সৌদি একটি কোম্পানির মাধ্যমে। একেকজনের কমপক্ষে ৪ লাখ টাকা করে ব্যয় হয়েছে। অথচ তারা মাসে পাচ্ছেন সর্বোচ্চ ৬০০ রিয়েল করে। থাকার ব্যবস্থা অবশ্য কোম্পানি প্রদান করছে। কর্মস্থলে যাতায়াতের দায়িত্বও পালন করছে ওই কোম্পানী। কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা, চট্টগ্রামের ডজনখানেক সচেতন যুবকের সঙ্গে কর্মস্থলে কথা বলে জানা গেল, তারা খুবই হতাশ ও ব্যথিত। যে স্বপ্ন নিয়ে এসেছেন তা কখনই পূরণ হবে না, যদি বেতন বৃদ্ধি করা না হয়।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত