১০ আগস্ট, ২০২৩ ০৭:৫১

যাচ্ছে কর্মী কমছে রেমিট্যান্স

♦ দেড় বছরে সৌদি গেছে সাড়ে ৮ লাখ কর্মী রেমিট্যান্স কমেছে ১৭% ♦ হুন্ডির বড় বাজার মধ্যপ্রাচ্য ♦ বেড়েছে টাকা পাচার

শাহেদ আলী ইরশাদ

যাচ্ছে কর্মী কমছে রেমিট্যান্স

প্রতীকী ছবি

দেশের জনশক্তি রপ্তানির সবচেয়ে বড় গন্তব্য সৌদি আরব। প্রতি বছর যত মানুষ কাজ নিয়ে বিদেশে যায়, তার অর্ধেকই যায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে। গত দেড় বছরে ৮ লাখ ৩৮ হাজারের বেশি কর্মী নতুন করে কাজে গেছে সৌদি আরব। কর্মীর সংখ্যা বাড়লেও একই সময়ে সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ১৭ শতাংশ কমে গেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশটি থেকে ৪৫৪ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে এসেছে ৩৭৬ কোটি ডলার। এমনকি চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে প্রবাসী আয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে নেমে এসেছে সৌদি আরব। শুধু সৌদি আবর নয়, অন্যান্য দেশ থেকেও রেমিট্যান্সের পরিমাণ কমে গেছ। এর অন্যতম কারণ হুন্ডি ও টাকা পাচার।

সরকারি হিসাবে দেখা গেছে, বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সঙ্গে প্রবাসী আয়ের মিল নেই। গেল দেড় বছরে যেসব দেশে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক কর্মী গেছে, সেসব দেশ থেকে রেমিট্যান্সের পরিমাণ কমেছে গড়ে ১০ শতাংশ। বিশ্লেষকদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ লেনদেন সহজ আর লাভজনক হওয়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠানো প্রবাসী আয় কমেছে।

জনশক্তি রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, রেমিট্যান্সের হিসাবটা তারা মেলাতে পারেন না। গত তিন বছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ কর্মী বিদেশ গেছে। তার মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ ভাগই গেছে সৌদি আরবে। প্রবাসী আয় ১৮ শতাংশ না কমে বেড়ে যাওয়ার কথা ছিল বলে জনশক্তি রপ্তানিকারকরা মনে করেন। তবে তারা মনে করেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স কমার অন্যতম কারণ হুন্ডির দাপট।

বিশ্লেষকরা বলছেন, কয়েক বছর ধরে ডলারের বিনিময় হারে ব্যাংকিং চ্যানেলের সঙ্গে কার্ব মার্কেটের বিশাল একটা ব্যবধান ছিল। যারা স্বল্প আয়ের তারা যেখানে বেশি পায় সেখান থেকেই দেশে অর্থ পাঠানোর চেষ্টা করে। প্রবাসীরা হুন্ডি চ্যানেল ব্যবহার করার ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকাটা আসছে না। ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয়ে ডলারের যে দর নির্ধারণ করা হয়েছে, হুন্ডিতে তার চেয়ে কম করে হলেও ১০ টাকা বেশি। ফলে প্রবাসীরা হুন্ডিতে সহজে টাকা পাঠাচ্ছে দেশে। একই অবস্থা বৈদেশিক কর্মসংস্থানের বড় বাজার হিসেবে পরিচিত মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশেও। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ওমান থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৭৯ কোটি ডলার; যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১১ শতাংশের মতো কম। ২০২১-২২ অর্থবছরে ওমান থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৮৯ কোটি ডলার। যদিও ওই সময়ে ওমানে জনশক্তি রপ্তানি বেড়েছিল ২০০ শতাংশের মতো। ২০২১ সালে দেশটিতে ৫৫ হাজার ৯ জন কর্মী গেলেও ২০২২ সালে গেছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬১৬ জন। একই ভাবে ২০২২ সালে কুয়েতে যাওয়া কর্মীর সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ১০ গুণ বেড়েছে। গত বছর কুয়েতে গেছে ২০ হাজার ৪১২ জন কর্মী। ২০২১ সালে গেছে ১ হাজার ৮৪৮ জন। কর্মী বেশি গেলেও আগের বছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে আয় কমেছে ৮ শতাংশের মতো। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কুয়েত থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ১৫৫ কোটি ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে এসেছিল ১৬৮ কোটি ডলার। একই সময়ে বাহরাইন থেকে আয় কমেছে ৭ শতাংশের মতো। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৫২ কোটি ডলার। আগের ২০২১-২২ অর্থবছরের এসেছিল ৫৬ কোটি ডলার। তবে প্রবাসী আয় বেড়েছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের দেশগুলো থেকে।

এ বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘প্রবাসের সব কর্মীই টাকা পাঠাচ্ছে। তবে হুন্ডির মাধ্যমে বেশি। কারণ হুন্ডির বাজারটা মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশেই আছে। মালয়েশিয়ায়ও আছে, সিঙ্গাপুরেও আছে। এ অঞ্চলটায় হুন্ডির প্রবণতাটা বেশি। এই সময়ে যেহেতু টাকা পাচার বেড়ে গেছে, সেহেতু রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ কমে গেছে। প্রতি বছর ঈদের আগে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পায়। তবে সার্বিকভাবে রেমিট্যান্সের যে প্রবৃদ্ধি হওয়া উচিত তা হবে না। কারণ হুন্ডির মাধ্যমে টাকা লেনদেনের প্রবণতা আরও বাড়ছে। এতে অর্থনীতি আরও অস্থিতিশীল হতে পারে। একই কারণে প্রবাসী আয় চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ শতাংশের মতো কমে গেছে। চলতি বছরের জুলাইয়ে আয় এসেছে ১৯৭ কোটি ডলার; যা আগের মাস জুনের চেয়ে ১০ শতাংশ কম। আগের অর্থবছরের একই সময়ে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছে ২০৯ কোটি ডলার। চলতি বছরের জুনে রেমিট্যান্স এসেছে ২২০ কোটি ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় ৩২ কোটি ডলার এসেছে আরব আমিরাত থেকে। সৌদি আরব থেকে ৩০ কোটি, যুক্তরাজ্য থেকে ২২ কোটি আর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২০ কোটি ডলার।


বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর