ইউনিক মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেড (ইউএমপিএল) ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প অর্থায়নের ৪৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ নিশ্চিত করেছে। একই সঙ্গে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর প্রথম পর্যায়ের ৩৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয় ৫৮৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন গ্যাসভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে ইউএমপিএল। স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্স লিমিটেড (এসএফএল), ইউনিক হোটেলস অ্যান্ড রিসোর্টস পিএলসি (ইউএইচআরএল) ও নেব্রাস পাওয়ার ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট বি.ভির (নেব্রাস) কনসোর্টিয়াম হলো ইউএমপিএল।
প্রকল্পের নির্মাণ কাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং এটি বাণিজ্যিক কার্যক্রমের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যাতে অর্থায়ন হচ্ছে ৭৫:২৫ ঋণ: ইক্যুইটি অনুপাতে। ঋণের অংশের অর্থের জোগান দেয়া হচ্ছে বহুপক্ষীয় আর্থিক প্যাকেজের মাধ্যমে, যার মধ্যে রয়েছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের (এসসিবি) ইসিএ কাভারড কিস্তি, সুইস এক্সপোর্ট রিস্ক ইন্স্যুরেন্সের (এসইআরভি) কাভার এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি), ডয়চে ইনভেস্টটিশনস-আনড এন্টউইক….(ডিইজি) ও ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ওএফআইডি) তিনটি ডিএফআই কিস্তি।প্রথম ধাপে ছাড়কৃত ৩৬০ মিলিয়ন ডলারের অর্থের ইসিএ-সমর্থিত ঋণদাতা হিসেবে এসসিবি দিয়েছে ২৪০ দশমিক ২৪ মিলিয়ন ইউএস ডলার। অন্যদিকে এআইআইবি, ডিইজি ও ওএফআইডি ডিএফআই ঋণদাতা হিসেবে দিয়েছে ১১৯ দশমিক ৭৬ মিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশে গত কয়েক বছরের মধ্যে এটিই বৃহত্তম আইপিপি প্রকল্প অর্থায়ন ও বেসরকারি অবকাঠামো প্রকল্প অর্থায়ন। বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ, করোনাভাইরাস পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারজনিত কারণে বৈশ্বিক বাজারে আর্থিক অস্থিতিশীলতা ও বৈশ্বিক রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে এ অর্জন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
এ বিষয়ে ইউএমপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বলেন, এই অর্থায়ন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় উন্নয়ন অর্থায়ন প্রতিষ্ঠানগুলো (ডিএফআই) ও ব্যাংকগুলোর আস্থারই প্রতিফলন। ৪৬৩ মিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ নিশ্চিতের মধ্য দিয়ে একই ধরনের বিদেশি ঋণদাতাদের জন্য বাংলাদেশে ভবিষ্যৎ বিনিয়োগের পথ উন্মুক্ত হলো।
তিনি আরও বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কার্যকর গ্যাস টার্বাইন, তথা জিই ৯এইচএর মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে ইউএমপিএল। সাইট কন্ডিশনে এর কার্যকারিতা ৬২ শতাংশের বেশি। প্রাকৃতিক গ্যাস সংকটের সময়ে এ প্রকল্পের বাণিজ্যিক কার্যক্রমে গ্যাসের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। এ অর্থায়ন প্রকল্পটিকে বিশ্বমানের অবকাঠামো প্রকল্প হিসেবে গড়ে তুলবে, যার মধ্য দিয়ে স্বচ্ছ, নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ পাবেন বাংলাদেশের জনগণ।
ইউএমপিএলের চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) অনুপম হায়াত বলেন, ‘ফিন্যান্সিয়াল ক্লোজ ও প্রথম পর্যায়ে ৪৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশি ঋণ ছাড়ের ঘোষণা দিতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। কোভিড-১৯ ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবের মধ্যে ফিন্যান্সিয়াল ক্লোজ অর্জন খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি কঠিন এ পরিস্থিতিতে ফিন্যান্সিয়াল ক্লোজ অর্জনে সহায়তার জন্য ঋণদাতা, স্পন্সর, নিয়ন্ত্রক, ম্যানেজমেন্ট টিম ও সব উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত