২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০৯:৩৪

দিলীপের প্রতারণা: ডায়মন্ডের নামে মোজানাইট, ঠকছেন হাজারো গ্রাহক

অনলাইন ডেস্ক

দিলীপের প্রতারণা: ডায়মন্ডের নামে মোজানাইট, ঠকছেন হাজারো গ্রাহক

দিলীপ কুমার আগরওয়ালা

আমদানি না করেও দেড় দশক ধরে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ২৮টি শোরুমে ডায়মন্ডের অলংকার বিক্রি করছে দিলীপ কুমার আগরওয়ালার ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেড। অভিযোগ রয়েছে, ডায়মন্ডের নামে মোজানাইট কিংবা জারকান পাথর বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি। মোজানাইট কিংবা জারকান পাথর মূলত এক ধরনের কাচ, যা বিশেষ ব্যবস্থায় তৈরি হওয়ায় দীর্ঘ সময় চকচকে দেখায়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর হাজার হাজার গ্রাহক দিলীপ কুমার আগরওয়ালার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তুলেছেন।

চোরাচালান ও সরকারের রাজস্ব ফাঁকির তথ্য সামনে আসায় দেশ ছেড়ে পালানোর সুযোগ খুঁজছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প-বাণিজ্য উপকমিটির সদস্য ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র হত্যা মামলার আসামি দিলীপ কুমার। যেকোনও সময় দেশ ছেড়ে পালাতে পারেন তিনি। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে গোপন বৈঠকও করেছেন। দেশ ছেড়ে পালানোর আগেই তাকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

দিলীপ কুমার আগরওয়ালার ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের নামে প্রতারণার অভিযোগ তুলে জান্নাতুল ফেরদৌস মিম নামের এক গ্রাহক বলেন, “বিভিন্নভাবে জেনেছি, প্রতিষ্ঠানটি গত পাঁচ বছরেও কোনও ডায়মন্ড আমদানি করেনি। তাহলে ২০২২ সালে বিয়ের সময় যে ডায়মন্ডের অলংকার কিনেছি তা কী?”

মিম বলেন, “সরকারের উচিত অতি দ্রুত তদন্ত করে গ্রাহককে সঠিক তথ্য প্রদান করা। কারণ, লাখ লাখ টাকা খরচ করে এই গয়নাগুলো কেনা হয়েছে।”

তমা ফারহান নামের এক গ্রাহক আক্ষেপ করে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ফেসবুক কমেন্টসে লিখেছেন, “আমি যে দুটি রিং, একটা নোজ পিন এত টাকা দিয়ে কিনলাম, এগুলোও কাচ?”

জানা যায়, ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড।

বর্তমানে সারাদেশে প্রতিষ্ঠানটির ২৮টি শোরুম রয়েছে। ২০০৭ সালের মে মাসে বাংলাদেশ থেকে প্রথম মসৃণ হীরা আমদানি এবং পরবর্তী সময়ে রফতানি করে সাভারের মির্জানগরের এইচআরসি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটের ব্রিলিয়ান্ট হীরা লিমিটেড। অর্থাৎ সরকারি তথ্যানুযায়ী, ২০০৫ সালে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড প্রতিষ্ঠার দুই বছর পর বাংলাদেশে প্রথম ডায়মন্ড আমদানি হয়।

এদিকে, ২০১৭ সালে গ্রাহকদের মোজানাইট কিংবা জারকান পাথরকে আসল হীরার গ্যারান্টি দিয়ে প্রতারণার অভিযোগ ওঠে দিলীপ কুমার আগরওয়ালার বিরুদ্ধে। ওই অভিযোগ তদন্তে ২০১৭ সালের ১৮ অক্টোবর কমিটি গঠন করে দুদক। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তদন্ত আর এগোয়নি। 

অন্যদিকে দুদকের তদন্তের পর ২০১৮ সালে প্রথম হীরা আমদানি করে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড। ওই বছর তিন হাজার ক্যারেটের অমসৃণ হীরার দুটি চালান আমদানি করে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেড।

কাস্টমস ট্যারিফ শিডিউল অনুযায়ী, এক ক্যারেট ডায়মন্ড (দশমিক ২ গ্রাম) আমদানি করতে সরকারকে ১৫০.৯০ শতাংশ শুল্ক-কর দিতে হয়। অর্থাৎ ১০০ টাকার ডায়মন্ড আমদানি করলে সরকারকে ১৫০ টাকা শুল্ক-কর দিতে হয়। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক, ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক, ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর, ৪ শতাংশ অগ্রিম ট্রেড ভ্যাট ও ৪ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি আরোপিত আছে। অন্যদিকে বিদ্যমান ব্যাগেজ রুলে স্বর্ণ ও রুপার বার-অলংকার আমদানির অনুমতি দেওয়া থাকলেও ডায়মন্ডের অলংকারের বিষয়ে কিছু বলা নেই। অর্থাৎ আমদানি ছাড়া দেশে ডায়মন্ড ও ডায়মন্ডের অলংকার আনার সুযোগ নেই।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প-বাণিজ্য উপকমিটির সদস্য ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র হত্যা মামলার আসামি দিলীপ কুমার আগরওয়ালা দেশ ছেড়ে পালানোর সুযোগ খুঁজছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক পরিচয় পরিবর্তনের চেষ্টাও করছেন তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বায়তুল মোকাররম স্বর্ণ মার্কেটের এক ব্যবসায়ী বলেন, একসময় শুধু অভিজাত শ্রেণির নারীরা ডায়মন্ডের অলংকার ব্যবহার করতেন। কিন্তু দেড় দশকে ডায়মন্ডের সহজলভ্যতায় মধ্যবিত্তদের মধ্যে এই মূল্যবান রত্নের ব্যবহার বাড়ছে। বাস্তবিক অর্থে এগুলোও ডায়মন্ড না, শুধু কাচের টুকরা। কারণ, এক-দুই হাজার টাকায় ডায়মন্ডের গয়না বিক্রি করা সম্ভব না।

এই ব্যবসায়ী বলেন, কিছু সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় কাচকে ডায়মন্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। এদের মধ্যে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা অন্যতম। আমদানি না করেই এই ব্যবসা করে হাজার কোটি টাকা আয় করেছেন তিনি।

বিডি প্রতিদিন/একেএ

সর্বশেষ খবর