৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১৮:৩০

নকল কসমেটিকস রোধ করলে হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করা সম্ভব: ভোক্তা অধিকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

নকল কসমেটিকস রোধ করলে হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করা সম্ভব: ভোক্তা অধিকার

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পরিচালক ফকির মোহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন বলেছেন, বাজার থেকে নকল ও মানহীন কসমেটিকস পণ্য তুলে নিতে হবে। নকল কসমেটিকসে গ্রাহক প্রতারিত হয়। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হয়। নকল পণ্যের কারণে সরকার তার পাওনা পায় না। এসব নকল পণ্য রোধ করা গেলে আগামী দুই বছরে এক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করা সম্ভব। 

বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও অ্যাসোসিয়েশন অব স্কিনকেয়ার অ্যান্ড বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অব বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ ট্যাগযুক্ত পণ্যের মান’বিষয়ক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি। 

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ বিভাগ) আব্দুল জলিলের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী, এফবিসিসিআই’র পরিচালক ইসহাকুল হোসেন সুইট, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি) এর সহ-সভাপতি এম এস সিদ্দিকী, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, বিএসটিআই-এর উপপরিচালক মোরশেদা বেগম, চিত্রনায়ক মামনুন হাসান ইমন, অ্যাসোসিয়েশন অব স্কিন কেয়ার অ্যান্ড বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দীন, স্কিন কেয়ার বিশেষজ্ঞ ডা. শারমিনা হক প্রমুখ।

সেমিনারে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ বিভাগ) আব্দুল জলিল বলেন, বাজার নিম্নমানের কসমেটিকস পণ্যে সয়লাব হলে তা মানুষের জীবনে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হবে। ভুয়া পণ্য ব্যবহার করে অনেকে এরই মধ্যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। ব্যয়বহুল চিকিৎসার জন্য পরিবারেও দিন দিন আর্থিক সংকট বাড়ছে। এজন্য দেশে বিশ্বমানের কসমেটিকস ও হোমকেয়ার পণ্য উৎপাদনের বিকল্প নেই। এতে দেশের মানুষের কর্মসংস্থানও বাড়বে।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী বলেন, দেশে প্রসাধনী এবং ব্যক্তিগত যত্নের সামগ্রীর বার্ষিক বাজার এখন প্রায় ৯০৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আশা করা হচ্ছে, ২০২৭ সাল পর্যন্ত এটি ৮ দশমিক ১ শতাংশ হারে বাড়বে। তবে বাংলাদেশের প্রসাধনী খাত ব্যাপকভাবে আমদানির উপর নির্ভর করে। প্রসাধনী রাসায়নিকের ৯০ শতাংশই আসে বিদেশ থেকে। বিশেষত, মোট আমদানিকৃত কসমেটিক পণ্যের প্রায় ৪১ শতাংশ আসে ভারত থেকে। এ অবস্থার পরিবর্তনে মানসম্মত দেশীয় পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতের কোনও বিকল্প নেই।

এফবিসিসিআই’র পরিচালক ইসহাকুল হোসেন সুইট বলেন, স্কিন কেয়ার, কসমেটিকসও হোম কেয়ার খাতে রিমার্ক-হারল্যানের মতো দেশীয় কোম্পানি এগিয়ে আসায় তারা বিশেষভাবে ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। তাদের মতো প্রতিষ্ঠান মানসম্মত অথেনটিক পণ্য উৎপাদন করায় ক্রেতাদের মাঝে দেশীয় পণ্য ব্যবহারে আগ্রহও বাড়ছে।

আইবিএফবি-এর সহ-সভাপতি এম এস সিদ্দিকী বলেন, দেশীয় শিল্পের প্রসারে সরকারকে সব ধরনের সহায়তা দিতে হবে। কারণ আমদানি নির্ভরশীলতা কমাতে দেশের কোম্পানিগুলোকে এগিয়ে নেওয়ার বিকল্প নেই। যেসব প্রতিষ্ঠান দেশে আন্তর্জাতিক মানের পণ্য উৎপাদন করছে, তারা যেন বিশেষ নীতি সহায়তা পান, তাও নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে দেশীয় শিল্পের প্রসারে আগ্রহী হয়ে অনেকে এগিয়ে আসবেন।

বিএসটিআই-এর উপ-পরিচালক মোরশেদা বেগম তার বলেন, আমরা চেষ্টা করছি পণ্যের মান যেন নিশ্চিত হওয়ার পর বাজারজাত হয়। তাছাড়া নতুন পণ্যের বাজারজাত করণের আগে পণ্য, মোড়কসহ সকল বিষয়ের মান নিয়ে কাজ করছি। আমরা রফতানিযোগ্য পণ্যের মান নিশ্চিতকরণে জোর দিচ্ছি। সামগ্রিক উৎপাদনের ৩০ শতাংশ পণ্য বিএসটিআই মান সনদের আওতায় আনতে পেরেছে।

চিত্রনায়ক মামনুন হাসান ইমন বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে দেশে মানসম্মত পণ্য উৎপাদিত না হওয়ায় বিদেশি পণ্যের প্রতি মানুষের দুর্বলতা ছিল। এছাড়া বড় কোম্পানিগুলো দক্ষ মার্কেটিং ও সেলস পার্সনদের নিয়োগে বেশি গুরুত্ব দিলেও পণ্যের মানোন্নয়নে কোনও ভ্রুক্ষেপ ছিল না। চটকদার বিজ্ঞাপন তৈরি, প্রচার ও পণ্য বিক্রিতেই সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে তারা। গবেষণা ও কারখানা ব্যবস্থাপনাসহ মৌলিক জায়গাগুলোয় তেমন কোনও বিনিয়োগ হয়নি। এটি প্রকারান্তরে ক্রেতাদের সাথে প্রতারণার শামিল। খুশির কথা যে, দেশে এখন মানসম্মত পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে, তার প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহও বাড়ছে।

অ্যাসোসিয়েশন অব স্কিন কেয়ার অ্যান্ড বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স বাংলাদেশ-এর সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দীন বলেন, বাংলাদেশ কনজিউমার গুডস খাতে বড় বাজার হলেও পণ্য বিক্রেতাদের আন্তর্জাতিক মানের বিষয়টি আমলে নিতে দেখা যায়নি। মানহীন ও ভেজাল পণ্য কিনে ক্রেতারা প্রতারিত হতেন। দীর্ঘদিন পর হলেও ভোক্তা অধিকার ভেজাল রোধে কাজ করছে। ফলে মানুষের মাঝে সচেতনতা বেড়েছে। চাহিদা তৈরি হয়েছে সর্বাধুনিক প্রযিুক্তির পণ্যের। বেশ কিছু কোম্পানি এখন উন্নত ফর্মুলেশন-গবেষণা খাতে ব্যাপক বিনিয়োগে এগিয়ে আসছে।

স্কিন কেয়ার বিশেষজ্ঞ ডা. শারমিনা হক মনে করেন, নকল ও ভেজাল পণ্য ব্যবহার করে মানুষ স্কিন ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় মানসম্পন্ন পণ্য ব্যবহার করা। ব্যাপক গবেষণার মাধ্যমে, মানুষের জীবনমান উন্নয়নে যেসব পণ্য বাজারে আসছে, আশা করি দেশের মানুষ সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এসব পণ্য ব্যবহার করে উপকৃত হবেন।

বিডি প্রতিদিন/একেএ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর