গত বছরের এপ্রিলে সংযুক্ত আরব আমিরাতে রেকর্ড বৃষ্টি ও বন্যা পরিস্থিতির কারণে কিছুটা শঙ্কা দেখা দিয়েছিল আবাসন ব্যবসায় বিনিয়োগকারী ও ক্রেতাদের মধ্যে। দেশটিতে এখনো বন্যা নিয়ে আবাসন ক্রেতারা কিছুটা চিন্তিত থাকলেও আমিরাতের সরকার ও আবাসন ব্যবসায়ীদের কিছু সময়োপযোগী উদ্যোগ এবং কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ- সেই উদ্বেগ কাটিয়ে পরিস্থিতি অনুকূলে নিয়ে এসেছে। এতে গতি ফিরেছে দেশটির আবাসন ব্যবসায়।
খালিজ টাইমস এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের এপ্রিলে শারজাহতে আবাসন কিনতে যায় ভারতীয় প্রবাসী সুমাইয়া খান এবং তার স্বামী। সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসের সুবাদে তখন তারা চাইছিলেন আবাসন খাতে বিনিয়োগ করতে। যাতে করে পরিবার নিয়ে আমিরাতে তারা বসবাস করতে পারেন। ওই সময়টাতে যখন তারা কেনার মতো আবাসন খুঁজছিল- তখনই রেকর্ড বৃষ্টি হয় দেশটিতে।
সুমাইয়া খান বলেন, তখন দেখি কিছু কিছু এলাকায় পুরোপুরি বন্যার প্রভাব পড়েছে। তবে তখন খেয়াল করলাম শারজাহতে বন্যা পরিস্থিতি ততটা নেই। এতে করে আমরা তখনই একটি আবাসন বুক করে ফেলি। পরের সপ্তাহে আমরা আবার সেখানে পরিদর্শনে গেলে- তখনও দেখতে পাই বন্যা সেভাবে কোনো প্রভাব ফেলেনি। পরে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাই।
যদিও ২০২৪ সালের এপ্রিলের সেই রেকর্ড বৃষ্টির এক বছর পরে এসেও আবাসন ক্রেতাদের মধ্যে দেশটির বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সংশয় দেখা যাচ্ছে। দেখা যায়, বেশির ভাগ ক্রেতাই এখন আবাসন কেনার আগে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে ভাবছে।’ যেমনটি ম্যানিফেস্ট রিয়েল স্টেটের সিইও জেফ রাজু কুরুভিলা বললেন। তার ভাষ্য, এখন তাদের প্রায় ৫০ শতাংশ ক্রেতাই আবাসন কেনার আগে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চান। যদিও তা আবাসন কেনাবেচায় কোনো প্রভাব ফেলছে না।
জেফ রাজু আরও বলেন, দুবাইয়ে বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত পুনরুদ্ধার এবং সরকারের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ ক্রেতাদের আশ্বস্ত করছে। এর মধ্যে ডেভেলপাররা বিনামূল্যে মেরামতের উদ্যোগ নিচ্ছে। পাশাপাশি ড্রেনেজ সিস্টেমের উপরও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, জুমেইরাহ, মেইদান, দক্ষিণ দুবাই ও নশামার মতো আধুনিক অবকাঠামো সম্পন্ন এলাকাগুলো উচ্চতর উচ্চতা বা উন্নত নিষ্কাশনের কারণে ভালো ফলাফল করেছে এবং সেখানে টেকসই চাহিদা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এদিকে, ইব্রাহিম আব্দুল করিম নামের মেট্রোপলিটন প্রিমিয়াম প্রপার্টির এক ঊর্ধ্বতন কর্তা বললেন, গত বছরের এপ্রিলের বন্যার কারণে আবাসন ক্রেতাদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব দেখা গেছে। যদিও এ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ আবাসনে বিনিয়োগকারী ও ক্রেতাদের আস্থা ফেরাতে পেরেছে। এরপরও ভবিষ্যতের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে ভাবাচ্ছে ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের। অনেক ভূমির মালিককে দেখেছি তারা ভবিষ্যতের ক্ষতি কমানোর জন্য বীমা কভারেজ ও ভবিষ্যতের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
তাই গত বছরের এপ্রিলের বন্যা নিয়ে তৈরি শঙ্কা কেটে যেতে শুরু করেছে। এখন আরব আমিরাতে সবমিলিয়ে আবাসন ব্যবসা পুরোনো অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। রিফাইন নামের এক আবাসন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা অংশীদার থমাস ওয়েন বললেন, আমিরাতে বন্যা পরিস্থিতি একটি সাময়িক প্রভাব । এ নিয়ে দেশটির সরকার স্থিতিস্থাপকতা ও দ্রুত পুনরুদ্ধার বিষয়ে সচেষ্ট।
তিনি বলেন, ২০২৪ এর এপ্রিলের রেকর্ড বৃষ্টির মাত্র এক মাস পরেই, দেশটির ভ্যালুস্ট্র্যাট মূল্য সূচকে সম্পত্তির মূল্য বার্ষিক ২৭.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়। যার মধ্যে ভিলা ৩২.৫ শতাংশ এবং অ্যাপার্টমেন্ট ২২.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এই ধারা ২০২৫ সালেও অব্যাহত রয়েছে, মার্চ মাসে সূচকটি ২১০.৮ পয়েন্টে পৌঁছেছিল - যা গত বছরের তুলনায় ২৫.৯ শতাংশ বেশি।
তিনি আরও বলেন, এপ্রিলের রেকর্ড বৃষ্টি ক্রেতাদের মনোভাবের উপর কিছুটা প্রভাব ফেলেছিল। এতে বন্যা-প্রতিরোধী সচেতনতা আরও বেড়েছে, নতুন উন্নয়নে টেকসই এবং স্থিতিস্থাপক নগর পরিকল্পনা প্রাধান্য পাচ্ছে। অনেক ডেভেলপার এখন ভবিষ্যতের ঝুঁকি কমাতে কাজ করছে এবং দীর্ঘমেয়াদী কৌশল এবং অবকাঠামোগত দিক নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
একই ইঙ্গিত দিলেন মেট্রোপলিটন প্রিমিয়াম প্রপার্টির ইব্রাহিম আব্দুল করিমও। তিনি বলেন, ডেভেলপাররা অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা এখন ভবিষ্যতের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত। উদাহরণ হিসেবে তিনি এ খাতে দুবাইয়ের ৮.২ বিলিয়ন ডলারের সময়োপযোগী বিনিয়োগের কথা তুলে ধরেন। আশা করা যাচ্ছে এই উদ্যোগের মাধ্যমে দিনে ২০ মিলিয়ন ঘনমিটারেরও বেশি পানি নিষ্কাশন সম্ভব।
তিনি বলেন, মুডনের মতো এলাকায় দুবাই সরকারের সড়ক ও পরিবহন কর্তৃপক্ষের (RTA) সহযোগিতায় একটি কৌশলগত জলাবদ্ধতা অপসারণ পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে, যার মাধ্যমে বন্যার পানি নির্দিষ্ট উপহ্রদে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব। এই উদ্যোগগুলো ভবিষ্যতের জলবায়ু চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধে স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক