বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিশেষ জরুরি যোগাযোগ হটলাইন চালু করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ—যার মাধ্যমে নিরাপত্তা-সংক্রান্ত যেকোনো ঘটনা তারা সরাসরি জানাতে পারবেন এবং তাৎক্ষণিক সহায়তা পাবেন।
আজ সোমবার পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনের যৌথ বৈঠক থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ বৈঠকে কিছুদিন আগে গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে আন্দোলনের সময় ভাঙচুরের শিকার ছয়টি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টার আনুষ্ঠানিক ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এসব তথ্য জানিয়েছে তার প্রেস উইং।
বিডা চেয়ারম্যান ও আইজিপির যৌথ সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন— নেসলে বাংলাদেশ, কোকাকোলা বাংলাদেশ বেভারেজেস, ইউনিলিভার বাংলাদেশ, বাটা শু কোম্পানি, রেকিট বেনকিজার বাংলাদেশ, পেপসিকো এবং জুবিলেন্ট ফুড ওয়ার্কস বাংলাদেশসহ প্রধান বিদেশি কোম্পানিগুলোর নির্বাহীরা।
গত ৭ থেকে ৮ এপ্রিল দেশের বেশ কয়েকটি শহরে এসব প্রতিষ্ঠানের স্থাপনায় ভাঙচুর, লুটের মতো ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, এসব ঘটনায় অন্তত ১৪০ জনকে গ্রেফতার এবং প্রায় এক ডজন মামলা করা হয়েছে।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিল্ক চৌধুরী বলেন, "একই ছাদের নিচে আইজিপিসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী নেতাদের অংশগ্রহণে এই বৈঠক কেবল সময়োপযোগীই নয়, বরং নজিরবিহীনও বটে। এটি কেবল একটি প্রতীকী উদ্যোগ নয়, এটি একটি শক্ত বার্তা—বাংলাদেশ তার বিনিয়োগকারীদের পাশে থাকার বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে, বিশেষত প্রতিকূলতা দেখা দিলে।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা প্রতিবাদের অধিকারকে সম্মান করি, কিন্তু যে প্রতিষ্ঠানগুলো হাজারো মানুষের জীবিকা, স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করে— সেগুলো ধ্বংস করা কোনো সমাধান নয়।"
এসময় ভাঙচুর ও লুটপাটে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার অঙ্গীকারের প্রশংসা করেন আশিক চৌধুরী।
বৈঠকে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা লুটপাট, ভাঙচুরে তাদের ক্ষয়ক্ষতি ও কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার চিত্র তুলে ধরেন।
এর প্রতিক্রিয়া আইজিপির কার্যালয়ের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় যে, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য জরুরি বিশেষ যোগাযোগের লাইন খোলা হবে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেন, এতে করে প্রতিষ্ঠানগুলো নিরাপত্তাজনিত যেকোনো ঘটনা তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে ও দ্রুত সহায়তা পেতে পারবে।
আইজিপি বাহারুল আলম দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর পক্ষ থেকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন ব্যবসায়ী নেতাদের।
তিনি বলেন, "আমরা শুধু প্রতিক্রিয়া জানাতে আসিনি, বরং স্থায়ী আস্থার ভিত্তি গড়তেই এখানে এসেছি।"
বৈঠকে নতুন নিরাপত্তা প্রটোকল, র্যাপিড রেসপন্স ইউনিট এবং উন্নত সংকট-যোগাযোগ ব্যবস্থার বিষয়ে একটি সম্মিলিত কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়। এসব উদ্যোগ বিডা, বাংলাদেশ পুলিশ এবং ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সম্মিলিত প্রয়াস। যার লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশে আস্থা ও স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখা।
বিডা চেয়ারম্যান বলেন, "এই আলোচনা ছিল প্রতিক্রিয়া নয়, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের একটি পথচলা। সরকারের অঙ্গীকার হলো—শুধু ভালো সময় নয়, প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও বিনিয়োগকারীদের পাশে থাকা।"
প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা সরকারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক সাড়া ও দায়িত্বশীল অবস্থানের প্রশংসা করেন, এবং বাংলাদেশে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া ও ভবিষ্যতে ব্যবসা সম্প্রসারণের আগ্রহের কথা জানান।
এই উদ্যোগ বিডার বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ, যার লক্ষ্য—বাংলাদেশকে একটি নিরাপদ, টেকসই ও বিনিয়োগ-বান্ধব গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা, বিশেষ করে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ