শুক্রবার, ১৭ মে, ২০১৩ ০০:০০ টা
ধর্ম

নবীর সান্নিধ্যে ওমরের শাসন

মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমূদ

ইসলাম গ্রহণের আগে এমন কোনো অপরাধ নেই যা হজরত ওমর করেননি। ইসলাম গ্রহণের পর নবীর (সা.) সান্নিধ্যে এসে কিছুদিনের মধ্যেই পরিণত হন সোনার মানুষে। এমন ঘটনা প্রায় সব সাহাবার জীবনেই ঘটেছে। তবে একটু ভিন্ন ছিল ওমরের জীবন। একটু আগে যে লোকটি মক্কার অলিগলিতে খোলা তরবারি নিয়ে হন্যে হয়ে খুঁজছে নবীকে মেরে ফেলার জন্য, মুহূর্তেই তার মধ্যে এমন পরিবর্তন এলো কীভাবে? পায়ের নিচে তরবারি রেখে খালি হাতে আত্মসমর্পণ করলেন নবীর কাছে। এক দিন কোথাও যাচ্ছিলেন হজরত ওমর (রা.)। পথিমধ্যে হঠাৎ দাঁড়িয়ে কান্না শুরু করলেন। সফরসঙ্গীরা জিজ্ঞাসা করলেন-কিসে আপনাকে কাঁদাচ্ছে? উত্তর দিলেন, স্মৃতিবিজড়িত এই জায়গা আমাকে কাঁদাচ্ছে। তুলে ধরলেন তিনি সেই স্মৃতিকথা; তখনো আমার ইসলাম গ্রহণের সৌভাগ্য হয়নি। ২০-৩০টা ছাগল নিয়ে যাচ্ছিলাম এ পথ দিয়ে। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলাম না ছাগলগুলো। সামনে থেকে টানলে শক্ত করে দাঁড়িয়ে থাকে পেছনে। আর পেছন থেকে তাড়া করলে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করে। অবশেষে ধৈর্যহারা হয়ে ছেড়ে দেই ছাগলগুলো। তখন পেছন দিক থেকে এসে জোরে চাবুক মারে পিঠে আমার পিতা খাত্তাব। ধমক দিয়ে বললেন, টাগরা যুবক, কয়েকটা ছাগল নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিস না। তোর দ্বারা জীবনে কিচ্ছু আশা করা যায় না। এ ঘটনা বর্ণনা করে তিনি আরও বেশি কাঁদেন এবং বলেন, আমি কয়েকটা ছাগল নিয়ন্ত্রণ করতে পারতাম না। অথচ আজ ২৬ লাখ বর্গমাইল এলাকা শুধু মানুষ নয়, পশু পর্যন্ত আমি ওমর শাসন করছি। এটা আমার কোনো কৃতিত্ব নয়। নবী (সা.) এর সংস্পর্শে আল্লাহ প্রদত্ত গুণ। কোনো অপরাধ সংঘটিত হতো না হজরত ওমরের (রা.) শাসনামলে। কেউ কোনো অপরাধ করার সাহস পর্যন্ত করত না। এমনকি বাঘ-সিংহ পর্যন্ত কারও ওপর আক্রমণ করার সাহস দেখাত না। অনেকবার দেখা গেছে বাঘ-ছাগল এক ঘাটে পানি পান করেছে। ছাগলের ওপর আক্রমণ করার সাহস দেখায়নি বাঘ। কারণ সে জানে, দেশে ওমরের শাসন চলছে, ছাগলের ওপর আক্রমণ করলে আমার রক্ষা নেই। এক দিন বাঘ-ছাগলের ওপর আক্রমণ করে বসল। এক বুড়ি দেখে বুঝে ফেলল যে, ওমর মনে হয় আর নেই। নয়তো বাঘের কী করে সাহস হবে ছাগলের ওপর আক্রমণ করতে? খবর নিয়ে দেখা গেল সত্যি সত্যিই ওমরের ওফাত হয়ে গেছে। এসব কিছুই নবীর ছুহবতের বরকত। আজও সে সময় ফুরিয়ে যায়নি। নবী না থাকলেও রয়েছে তার রেখে যাওয়া আদর্শ ও সুন্নাহ। আর রয়েছে নবীর উত্তরসূরি উলামায়ে কেরাম। হক্বানি উলামাদের সংশ্রবে নবীর আদর্শ আঁকড়ে ধরলে আজও সে সোনার মানুষ হওয়া যাবে নিঃসন্দেহে। আল্লাহপাক আমাদেরকে উলামাদের সংশ্রবে থেকে নবীর আদর্শ ও সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন গড়ার তৌফিক দান করুন। আমিন। লেখক : খতিব, বায়তুল মারুফ জামে মসজিদ, টিভি রোড, রামপুরা, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর