শুক্রবার, ১৭ মে, ২০১৩ ০০:০০ টা
খোলা কলাম

হেফাজতের নামে ক্ষতিই নিশ্চিত করা হলো

প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ

হেফাজতের নামে ক্ষতিই নিশ্চিত করা হলো
এক. আধুনিক রাষ্ট্র-চিন্তার জনক ম্যাকিয়াভেলি প্রায় ৫০০ বছর আগে বলেছেন, 'রাজনীতিকে ধর্ম ও নৈতিকতার বাইরে রাখাই উত্তম।' যদিও খ্রিস্টপূর্ব-যুগে 'চড়ষরঃরপং' শব্দের অর্থ করা হয়েছে বহুমুখী কৌশল নামে। রাষ্ট্র গঠনের পর থেকেই সরকার তার ইহলৌকিক স্বার্থ হাসিলের জন্য রাজনীতিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতিও পাল্টে যায়। সরকারও নতুন পরিস্থিতির আলোকে নতুন কৌশল অবলম্বন করে। যেমন ভারতে ধর্মীয় নীতির কারণে সে দেশে আলিয়া মাদ্রাসাগুলোতে ৩৩ ভাগ হিন্দু শিক্ষার্থী ও ৩০ ভাগ হিন্দু শিক্ষক রয়েছেন। আবার সমস্যা সমাধানে সরকার বল প্রয়োগ করতেও দ্বিধাবোধ করে না। অপরদিকে ধর্ম হলো বিশ্বাসের বিষয় ও কতগুলো নীতি-নৈতিকতার সমষ্টি। ধর্মের বাণীগুলো বিমূর্ত থাকায় সেগুলো একেকজন একেকভাবে ব্যাখ্যা করে থাকেন। সে জন্য ধর্ম রক্ষায় যুগে-যুগে ধর্মীয় গুরুর প্রয়োজন হয়। যেহেতু একজন ধর্মবেত্তা রাষ্ট্রে বসবাস করেন এবং জনগণের সঙ্গেই অবস্থান করেন। সে কারণে সমাজের ঘাত-প্রতিঘাত থেকে তিনি নিজেকে মুক্ত রাখতে পারেন না। ঘটনা-দুর্ঘটনায় ব্যথিত হয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেন, সেটিই স্বাভাবিক। তিনি অবশ্যই নিজের ভাব-গাম্ভীর্য বজায় রেখে সরকার ও রাজনৈতিক দল থেকে মুক্ত থেকে পরামর্শ প্রদান করবেন, এমনটিই প্রত্যাশিত। এখানে সাভার ট্র্যাজেডিতে ব্যথিত হয়ে শ্রমিকদের অবস্থার উন্নয়নে খ্রিস্টীয় ধর্মগুরু পোপের আহ্বানটি উদাহরণ হতে পারে। পোপ গত ২৮ এপ্রিল ২০১৩ ভ্যাটিকান সিটির গির্জায় সাপ্তাহিক প্রার্থনা সভায় সাভারের মর্মান্তিক ঘটনায় আহত ও নিহতদের উন্নয়নে প্রার্থনা করেছেন। এর দুই দিন আগে আরেকটি বিবৃতিতে তিনি বাংলাদেশের গার্মেন্ট শ্রমিকদের 'ক্রীতদাস'-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন এবং তাদের অবস্থার উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। 'পবিত্র কাবা শরিফের ইমাম কেন এ জাতীয় বিবৃতি দেন না', কিংবা 'ইমামরা কেন রাজনীতি-মুক্ত থাকেন না', এসব প্রশ্নের উত্তরে একশ্রেণীর ধর্মীয় রাজনীতিক বলে থাকেন, 'অন্য সব ধর্মকে রাজনীতি থেকে মুক্ত রাখা সম্ভব হলেও ইসলাম ধর্মকে নয়। কেননা, এ ধর্মে ইহলোক ও পরলোকের সব সমস্যার সমাধান রয়েছে'। কেউ কেউ এসব বক্তব্যের সমর্থনে নবীজির (সা.) মদিনা রাষ্ট্র ও চারজন খলিফার শাসনামলের উদাহরণ দিয়ে থাকেন। দুই. চট্টগ্রামের হাটহাজারীর দারুল উলুম মাদ্রাসার প্রধান পৃষ্ঠপোষক মাওলানা আল্লামা আহমদ শফীর বয়স ৯৩। বর্তমানে মাদ্রাসাটির ছাত্রসংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। তিনি প্রথম জীবনে ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দ দারুল উলুম মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন। উল্লেখ্য, ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার পর মুসলিম পুনর্জাগরণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় এবং সে ধারাবাহিকতায় ১৮৬৬ সালে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতাদের অনেকেই অহিংস রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন এবং ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনকে সমর্থন দিয়েছিলেন। এই মাদ্রাসার মূল ধারা এখনো অহিংস রাজনীতি বিশ্বাস করে এবং ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে থাকে। তবে দেশ বিভাগের পর পাকিস্তানে তাদের অনুসারীদের অনেকেই সহিংস রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বর্তমানে তালেবানসহ উগ্রপন্থি দলগুলো সেই ধারা থেকেই এসেছে। যতদূর জানা গেছে, আল্লামা শফী বরাবরই নিজেকে প্রচলিত রাজনীতি থেকে মুক্ত রেখেছেন। তিনি তার লিখিত 'হক ও বাতিলের চিরন্তন দ্বন্দ্ব' নামক বইয়ে কাদিয়ানি, রেজাখানি, মওদুদী, এনজিও ও শিয়া মতবাদের বিরোধিতা করেন। বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে বহু কওমি মাদ্রাসা রয়েছে। তার মধ্যে হাটহাজারী, ফটিকছড়ি ও লালবাগের মাদ্রাসাই সবচেয়ে বড়। পত্রিকা সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে কওমি মাদ্রাসাগুলোতে প্রায় ৪০ লাখ শিক্ষার্থী ধর্মীয় শিক্ষা নিচ্ছে। বর্তমান সরকারের নারীনীতি ও শিক্ষানীতির বিরোধিতা করে ২০১০ সালে 'হেফাজতে ইসলাম' নামে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনটি যাত্রা শুরু করে। এর নেপথ্যে রয়েছে ২৪টি ইসলামী সংগঠন। যদিও হেফাজতে ইসলাম প্রথম থেকেই বলে আসছে, 'তারা সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক সংগঠন'। কিন্তু তাদের বক্তব্য, দাবি-দাওয়া ও আপসহীন কর্মসূচি দেখে এ পর্যন্ত কোনোভাবেই সেটি প্রমাণিত হয়নি। তিন. নবীজি (সা.)-কে কটূক্তিকারী কথিত নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তির দাবিতে হেফাজতে ইসলাম গত ৬ এপ্রিল ঢাকায় লংমার্চ করে এবং শাপলা চত্বরে জমায়েত শেষে ১৩ দফা দাবি উত্থাপন করে। তারা দাবিগুলো বাস্তবায়নে সরকারকে এক মাস সময় বেঁধে দেন। সে মোতাবেক গত ৫ মে ঢাকা অবরোধ করা হয়। এর আগে তারা সরকারকে হুমকি দিয়ে ঘোষণা দেন, যদি সরকার তাদের ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়ন না করে, তাহলে ৬ মে থেকে তারা দেশ চালাবেন। মতিঝিলের শাপলা চত্বরের জমায়েতে তাদের দেওয়া ভাষণ বিশ্লেষণ করলে তাদের আর ধর্মীয় নেতা মনে হয় না। কারণ কোনো ধর্মীয় নেতা এভাবে উগ্র আচরণ, মিথ্যাচার ও উসকানিমূলক বক্তব্য দিতে পারেন না। এ ছাড়া গরিব ও এতিম ছেলেদের এভাবে সমাবেশে নিয়ে যাওয়া এবং গভীর রাতে তাদের ফেলে রেখে চলে যাওয়া কোনো দায়িত্বশীল শিক্ষক ও ব্যক্তির কাজ নয়। হেফাজত কর্মীদের হঠাতে সম্মিলিত বাহিনী অভিযানে চারটি লাশ সমাবেশস্থল থেকে উদ্ধার করার হয়। পরদিন এ ঘটনার জের ধরে সারা দেশে আরও ১১ ব্যক্তি নিহত হন বলে সরকারি প্রেসনোটে উল্লেখ করা হয়। অবশ্য বিএনপির পক্ষ থেকে 'শত শত' এবং জামায়াত-শিবির মহল থেকে 'হাজার হাজার' মানুষের মৃত্যু ঘটেছে বলে দাবি করা হয়। জামায়াত-শিবির সমর্থিত পত্র-পত্রিকা ও ওয়েবসাইটগুলোতে এ বিষয়ে বিভিন্ন রকম তথ্য পরিবেশন অব্যাহত আছে। মতিঝিলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে মামলায় হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীকে গ্রেফতার করে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে নেওয়া হলে তিনি পুলিশকে জানান, 'তাকে প্রধানমন্ত্রী করার লোভ দেখানো হয়েছিল'। সেদিন সন্ধ্যার আগ থেকেই সমাবেশের নিয়ন্ত্রণ কীভাবে তাদের হাত থেকে অন্য মহলের কাছে চলে যায় সে কথাও জানান তিনি। তাই বলা যায়, এভাবে রাজনীতিতে ধর্মকে টেনে আনার কারণে রাজনীতিবিদরাই যুগে যুগে লাভবান হন, আর বাস্তবে ধর্মের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে জন্য বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ধর্ম ও রাজনীতি এ দুটি বিষয়কে আলাদা হিসেবে মেনে নেওয়া হয়েছে। একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, হেফাজত কর্মীদের মৃত্যু ও তাদের লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় আল্লামা শফী বর্তমানে অনুশোচনায় ভুগছেন। আর নিজের সন্তানের গ্রেফতার ঠেকাতে তিনি গত ১২ মে'র হরতাল প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। চার. আমরা সবাই জানি, পবিত্র কোরআনে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে শেষ নবী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তিনি আল্লাহর প্রত্যাদেশের মাধ্যমে মদিনা রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন। তিনি একাধারে ধর্মীয় নেতা ও অন্যদিকে সফল রাষ্ট্রনায়কও ছিলেন। ফলে তার দ্বারা যেটি সম্ভব, কোনো সাধারণ মানুষের পক্ষে সেটি অসম্ভব ব্যাপার। তিনি ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ২৪ সেপ্টেম্বর মদিনা নগরীতে হিজরত করেন। তিনি সেখানে বসবাসরত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ১২০ বছরের কলহ দূর করে সবার প্রিয় পাত্রে পরিণত হন। তিনি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সঙ্গে ১৩টি চুক্তির মাধ্যমে মদিনা রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন করেন। চুক্তিসমূহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সবগুলোই ইহলৌকিক সমস্যার সমাধান সংক্রান্ত; যেমন_ (ক) সবাই সম্মিলিতভাবে বহিঃশক্তির আক্রমণ প্রতিহত করে মদিনা রাষ্ট্রকে রক্ষা করবে (খ) রাষ্ট্রের অধীনস্থ মুসলিম, খ্রিস্টান, ইহুদি, পৌত্তলিক ও অন্যান্য সম্প্রদায় ধর্মীয় ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবে (গ) কেউ অন্যের ধর্মে হস্তক্ষেপ করবে না (ঘ) কোনো লোক ব্যক্তিগত অপরাধ করলে তা ব্যক্তিগত অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। সে জন্য তার সম্প্রদায়কে দায়ী করা যাবে না এবং (ঙ) রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিষ্পত্তি ও যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা থাকবে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর। সেখানে আরও বলা হয়, মুসলমানদের কেউ যদি অন্যায় কিংবা বিশ্বাসঘাতকতা করে তাহলে সবাই মিলে তার বিরুদ্ধে যথোচিত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। অপরাধী নিজ সন্তান বা আত্দীয় হলেও তাকে ক্ষমা করা হবে না (সূত্র : কালের কণ্ঠ, ১১ এপ্রিল ২০১৩)। উল্লেখ্য, বর্তমান শিয়া মতবাদে ধর্মীয় নেতাদের রাষ্ট্রীয় আইনের সর্বোচ্চ ব্যাখ্যাকারী হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু ইসলামের ইতিহাসের বাস্তবতা হলো, নবীজি (সা.) সফলভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে সক্ষম হলেও অন্যরা সেভাবে পরিচালনা করতে ব্যর্থ হন। এমনকি নবীর সহকর্মী চার খলিফাও রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গিয়ে বিভিন্ন বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হন ও একে অন্যের বিরোধিতা করেন। তাদের মধ্যে তিনজন বিরোধীদের হাতে প্রাণ হারান। কিসের ভিত্তিতে নবীর উত্তরসূরি নির্ধারিত হবে তা নিয়ে বিভিন্ন মাজহাবের জন্ম হয়েছে। আরও দেখা যায়, ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা খেলাফত ব্যবস্থার মাধ্যমে দুনিয়াবি শাসনে ব্যর্থ হয়ে সুলতানী শাসন ব্যবস্থার যাত্রা শুরু করেন। বিশিষ্ট মুসলিম দার্শনিক ইবনে রুশদ বহু আগেই বলেছেন, 'ধর্ম চর্চায় তিন প্রকারের লোক দেখা যায়। সাধারণেরা কোরআন-হাদিসের রূপক অর্থকে অবলম্বন করে ধর্ম পালন করেন। স্বল্পধর্মীয় জ্ঞানসম্পন্ন লোকেরা কিতাবের আক্ষরিক অর্থের ভিত্তিতে ধর্ম পালনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আর উচ্চ শিক্ষিতরা দার্শনিক দৃষ্টিতে ধর্মীয় বিষয়াদি ব্যাখ্যা করে থাকেন।' শরিয়াহ আইন কেমন হবে তা নির্ধারণের দায়িত্ব দার্শনিকদের দায়িত্ব হওয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন। এসব মন্তব্যের কারণে কট্টরপন্থিদের হাতে তিনি নিগৃহীত হন এবং দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। শোনা যায়, তাকে মসজিদের সামনে দাঁড় করিয়ে রেখে কতিপয় স্বল্পশিক্ষিত আলেমের প্ররোচনায় মুসলি্লদের দ্বারা থু-থু নিক্ষেপ করা হয়। তার বক্তব্য যে কত সঠিক, বর্তমানের হাজার রকম ফেৎনা সৃষ্টি তা প্রমাণ করে। এখানে শিয়া, ওয়াহাবি, মওদুদী, ব্রাদারহুড, তালেবানি প্রভৃতি গোষ্ঠীর মতবাদ উদাহরণ হতে পারে (কেউ কেউ তাকে পাশ্চাত্যদর্শনের জনক বলে থাকেন)। পাঁচ. সম্প্রতি পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন উপলক্ষে তালেবান গোষ্ঠী ঘোষণা দেয়, যারা ভোট প্রদান করতে ভোট কেন্দ্রে যাবে তাদের হত্যা করা হবে। তাদের দৃষ্টিতে গণতন্ত্র হলো কুফরি মতবাদ। গণতন্ত্র শরিয়াহ আইনবিরোধী। একই যুক্তিতে মধ্যযুগে খ্রিস্টানরাও গণতন্ত্রের বিরোধী ছিলেন। সে সময় যাজকদের বক্তব্য ছিল_ 'পাপীদের (জনগণের) ভোটে কখনো শুদ্ধ মানুষ নির্বাচিত হতে পারে না।' বৌদ্ধ ধর্মেও বলা আছে, পৃথিবী পাপে পূর্ণ। এসব যুক্তির ভিত্তিতে বলা যায়, সরকার পাপীদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে পাপীদের বিশুদ্ধ করার চেষ্টা করে। সে জন্য সরকার কখনো শতভাগ শুদ্ধ হতে পারে না। একই কারণে কোনো ধর্মগুরু সরকার পরিচালনায় অংশগ্রহণ করে কিংবা রাজনীতিতে জড়িত হয়ে পবিত্র থাকতে পারেন না। ইউরোপের রেনেসাঁর মূলে রয়েছে যুক্তিবাদ। আর এই যুক্তিবাদের প্রতিষ্ঠাতা একজন মুসলিম চিন্তাবিদ ইবনে রুশদ। যিনি সর্বপ্রথম ধর্ম ও দর্শনকে পৃথক আখ্যা দেন। তার বক্তব্য অনুসরণ করে আধুনিক যুগের মুসলিম চিন্তাবিদ ও গবেষক আবদাল রাজ্জাক, রাশিদ রিদ্দি, আবদুল্লাহি আহমদ আন-নাঈম প্রমুখ 'রাজনীতি ও ধর্ম কদাচ এক হলেও রাষ্ট্র কখনোই ধর্মীয় হতে পারে না' বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। মুসলমান সম্প্রদায়ের কতিপয় ধর্মীয় উগ্রগোষ্ঠী এর বিপরীতে অবস্থান নিয়ে গোটা মুসলিম সম্প্রদায়কে গভীর সংকটের মুখে ঠেলে দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে নয়া রেনেসাঁর সূচনা করা যেতে পারে। এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। তারা শরিয়াহর সঠিক ব্যাখ্যার জন্য উপযুক্ত আলেম সমাজের সমাবেশ ঘটাতে পারেন। লক্ষণীয়, আমাদের দেশে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলোকে শরিয়াহর সঠিক ব্যাখ্যা না থাকায় গ্রামের অশিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত ব্যক্তিরা ফতোয়া দিয়ে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আর এর পেছনে নিজেদের সুবিধার জন্য মূলত ইন্ধন জোগাচ্ছে রাজনৈতিক ইসলামের ধ্বজাধারী একদল বিপথগামী। তাই বলা যায়, একজন দেওবন্দপন্থি আল্লামা আহমদ শফী এ প্রক্রিয়ায় শামিল হয়ে শান্তির ধর্ম ইসলামেরই ক্ষতি করলেন। লেখক : চেয়ারম্যান, জানিপপ; সহলেখক প্রফেসর ড. এ. কে. এম. রিয়াজুল হাসান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, বিসিএস শিক্ষা এবং মোশাররফ হোসেন মুসা, সদস্য, সিডিএলজি। ই-মেইল : লধহরঢ়ড়ঢ়১৯৯৫@মসধরষ.পড়স

সর্বশেষ খবর