শুক্রবার, ১৭ মে, ২০১৩ ০০:০০ টা
ধর্ম : বায়তুল মোকাররমের খুতবা

মোজাহাদা বা সাধনার মাধ্যমে দীনে অটল থাকতে হবে

হে আল্লাহর মুখলেছ বান্দাগণ। যদি আপনারা সত্যিই আল্লাহপাককে ভালোবাসতে চান তাহলে নবীকুল শিরোমণি হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সুন্নাতের পুরোপুরি অনুকরণ ও অনুসরণ করুন। আর এ কথা ভালোরূপে জেনে রাখুন যে, আপনাদের মধ্যে কেউই পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবেন না, যতক্ষণ না তার বিবেক ও প্রবৃত্তি মহানবী (সা.)-এর আনীত জীবন ব্যবস্থার অনুগামী হয়। অতএব, আপনারা হুজুর (সা.)-এর সুন্নাতের তাঁবেদারির ওপর অটল ও অবিচল থাকুন এবং তিনি যেসব নিষেধ করেছেন সেসব থেকে পুরোপুরি দূরে থাকুন। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মৃত্যু পর্যন্ত সার্বক্ষণিক আপসহীন সংগ্রাম ও চেষ্টা চালিয়ে যান। আল্লাহপাক ইরশাদ করেন- যারা আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি অর্জনে কঠোর চেষ্টা ও সাধনা করবে আমি তাদের আমার দীদার লাভের যাবতীয় পন্থা দেখিয়ে দেব (চেষ্টা বান্দার দায়িত্ব, সাফল্য আল্লাহর জিম্মায়)। সুতরাং একদিকে নফ্ছ (কুপ্রবৃত্তি) শয়তান, ফাসেক ও বেদআতি লোকের বিরুদ্ধে সংগ্রাম পরিচালনা করা, অন্যদিকে ইবাদত-বন্দেগি ও সৎকাজগুলো বাস্তবায়নে সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া প্রত্যেক মুমিন বান্দার প্রতি অত্যাবশ্যক। পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহে এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলে পাক (সা.) বলেন, আল্লাহপাক বলেছেন-যে ব্যক্তি আমার কোনো অলির সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করে, আমি তার সঙ্গে জিহাদের ঘোষণা করি। (এ অবস্থায় ওই ব্যক্তির ধ্বংস সুনিশ্চিত) আমার বান্দারা যেসব আমল দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করে- তন্মধ্যে ফরজ আমলগুলোই আমার কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় ও পছন্দনীয়। আর আমার বান্দা নফল আমলগুলোর দ্বারা হামেশা আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে, অবশেষে আমি তার সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক স্থাপন করে ফেলি। যখন তার এ সম্পর্ক স্থাপন হয়ে যায়, তখন আমি তার কান হয়ে যাই, যা দ্বারা সে শুনে, আমি তার চোখ হয়ে যাই, যা দ্বারা সে দেখে, আমি তার হাত হয়ে যাই, যা দ্বারা সে ধরে এবং আমি তার পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে চলে। এহেন বান্দা যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে আমি তার প্রার্থনা কবুল করি এবং সে যদি আমার কাছে আশ্রয় চায় আমি অবশ্যই তাকে আশ্রয় দেই। (বোখারি শরিফ) হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলে পাক (সা.) রাতের বেলায় নামাজে এত বেশি পরিমাণ দাঁড়িয়ে থাকতেন যে, তার কদম মুবারক ফুলে যেত। আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.)! আপনি নামাজে এত কষ্ট কেন করেন, অথচ মহান আল্লাহ আপনার আগে-পিছের সব অপরাধ ক্ষমা করে দিয়েছেন। এতদশ্রবণে তিনি বললেন, আমি (আল্লাহপাকের) শুকুর গুজার বান্দা হবো না? (বোখারি ও মুসলিম শরিফ) হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলে পাক (সা.) বলেন_ দোজখ অবৈধ কামনা-বাসনা ও অবাঞ্ছিত লোভ-লালসার দ্বারা বেষ্টিত এবং জান্নাত দুঃখ-দৈন্য ও কষ্ট-ক্লেশ কার্যাবলীর দ্বারা আবৃত। (বোখারি ও মুসলিম শরিফ) হজরত জুবাইর বিন নুফাইর (রা.) থেকে মুরসাল সূত্রে বর্ণিত- হজরত রাসূল পাক (সা.) বলেন, আমার কাছে এই মর্মে ওহি আসেনি যে, আমি সম্পদ সঞ্চয় করব এবং আমি একজন ব্যবসায়ী হব বরং আমার কাছে এই মর্মেই ওহি এসেছে যে, হে রাসূল! আপনি আপনার প্রতিপালকের পবিত্রতা ঘোষণা করুন এবং তার সিজদাকারী হোন, অর্থাৎ ইবাদত করুন। আর আজীবন সর্বকাজে তার দাসত্ব অবলম্বন করুন। (বায়হাকি শরিফ) হজরত হাসান (রা.) থেকে মুরসাল সূত্রে বর্ণিত, হজরত রাসূলে পাক (সা.) বলেন, দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা সব অন্যায়ের মূল। (বায়হাকি শরিফ)- হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে মরফু সূত্রে বর্ণিত হজরত রাসূলে পাক (সা.) বলেন, যখন মানুষ মারা যায় তখন ফেরেশতারা জিজ্ঞেস করেন, এ লোক কি কি আমল (আল্লাহপাকের কাছে) পেশ করেছে। কিন্তু সমাজের লোক জিজ্ঞেস করে, এ লোক কি কি সম্পদ বা লোকজন রেখে গেছে, (বায়হাকি শরিফ)। হে আমাদের প্রতিপালক। আপনি আমাদের সঠিক পথ দেখানোর পর আমাদের অন্তরকে ওই পথ থেকে অন্য পথে সরিয়ে দেবেন না, আমাদের আপনার রহমত বখশিশ করুন। নিশ্চয়ই আপনিই মহান দানশীল। আল্লাহপাক আমাদের ও আপনাদের মহাগ্রন্থ কোরআনের বরকত দান করুন, বিতাড়িত শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আল্লাহপাকের কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। হে রাসূল আপনি আপনার প্রভুর ইবাদত করুন যে পর্যন্ত না মৃত্যু আগমন করে। (আল কোরআন)

সর্বশেষ খবর