শুক্রবার, ১৭ মে, ২০১৩ ০০:০০ টা
প্রতিক্রিয়া

স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে

১৯৯১ সালের বহু কাঙ্ক্ষিত গণতন্ত্র যাত্রা শুরু করেছিল একটি ফ্রাঙ্কস্টাইনের জন্ম দিয়ে। অনেক কিছু যেমন প্রধানমন্ত্রী পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার সুদূরপ্রসারী বিশ্লেষণ, রাজনৈতিক দল ও প্রধানমন্ত্রীর পদে একই ব্যক্তির পদায়ন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংযোজন ইত্যাদি হচ্ছে আজকের এই অতল অন্ধকার গহ্বরের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশের চিত্র। এই তথাকথিত ক্ষমতা আরোহণ এবং স্বৈরতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা উপহার দিয়েছে আজকের অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতার অপরাজনীতি। এই তথাকথিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আমাদের উপহার দিয়েছে, ঘৃণা ও বৈষম্যের রাজনীতি, প্রশ্নবিদ্ধ ও অচলাবস্থা সৃষ্টির সংবিধান, দুর্নীতি পরায়ণ প্রহসনের বিচার ব্যবস্থা, কোনো সাফল্য ব্যতীত কূটনীতি, স্বৈরতান্ত্রিক একনায়কত্ব, হ্যাঁ হ্যাঁ, এর জাতীয় সংসদ, সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি, স্থবির ও অকার্যকর দলীয় নির্বাহী বিভাগ, পুলিশের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, মিথ্যাচার ও সর্বোপরি একটা ভয়াবহ দিখণ্ডিত সমাজ ব্যবস্থা। ২০০৯-এর শুরুতে বেদনাবিধুর ও নৃশংস পিলখানা হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে আমাদের গর্বের সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দেওয়া। এর পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়েছে ৯১ সাল থেকে শুরু আজ পর্যন্ত সংঘটিত অসংখ্য রাষ্ট্রীয় দুর্নীতির কয়েকটি যেমন_ খাম্বা, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, যুবক, ডেসটিনি, হলমার্ক, শেয়ার মার্কেট, লুটপাট, পদ্মা সেতু দুর্নীতি, ভিওআইপির চুরি ইত্যাদি আলোচিত দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার। সামগ্রিকভাবে আজ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় সুশাসনের লেশমাত্র নেই। এখানে এখন সত্যকে সত্য বলা যায় না, মিথ্যাকে মিথ্যা বলা যায় না। এই দম বন্ধ করা, অবিশ্বাস আস্থাহীনতা, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি পরায়ণ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে আমাদের সবাই মিলে চাপ সৃষ্টি করতে হবে বর্তমান রাজনীতির ওপর, বর্তমান শাসন ব্যবস্থার ওপর, কিন্তু কিভাবে? যে নেতৃত্ব ও আদর্শ ভিত্তিক রাজনৈতিক দল এমন হতাশাজনক অবস্থা থেকে বেরিয়ে আশার পথ দেখাবে, সেখানেই সমস্যা শেকড় গেড়ে বসেছে। ব্যক্তি ও পরিবারকেন্দ্রিক নেতৃত্ব বড় দল দুটির গণতান্ত্রিক সত্তা রুদ্ধ করে দিয়েছে। এ অবস্থা মুক্তি পেতে_ ১. দেশের সর্বত্র ও সব প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি, অনৈতিক কর্মকাণ্ড, স্বজনপ্রীতি ও প্রভাবমুক্ত সুশাসন নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে সর্বোতভাবে বাংলাদেশকে সমতা, সাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক একটি জনকল্যাণমুখী বাংলাদেশ করতে হবে। ২. দুই বারের অধিক কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না এবং সরকার প্রধান ও পার্টি প্রধান একই ব্যক্তি হবেন না। ৩. বর্তমানে সংবিধান অনুযায়ী দেশের প্রধানমন্ত্রীকে যে সর্বময় ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তার অবসান ঘটাতে হবে ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়াতে হবে অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি/প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য করতে হবে। ৪. জচঙ পরিবর্তন করে সমান সুযোগ নিশ্চিত করে, সংবিধান অনুযায়ী সবাইকে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে এবং বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতির আমূল পরিবর্তন করতে হবে। ৫. সর্বোতভাবে স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধি দ্বারা সব সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা, স্থানীয় বাজেট প্রণয়ন ও পরিচালনা করতে হবে এবং এ উদ্দেশ্যে অনতিবিলম্বে স্থানীয় প্রতিনিধিদের যোগ্যতা বৃদ্ধিকরণের জরুরি ব্যবস্থা নিতে হবে। ৬. রাষ্ট্রীয় কার্যে সম্পৃক্ত সবার সম্পদের প্রতি বছরের প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে এবং ১৯৯০-এর পর থেকে সব রাজনীতিবিদ ও সরকারি আমলার সম্পদের হিসাব নিয়ে, তা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে দাখিলকৃত রিটার্নের সঙ্গে মিলাতে হবে ও ব্যত্যয় পেলে তা বাজেয়াপ্তসহ যথাযথ দণ্ডের ব্যবস্থা করতে হবে। ৭. সংবিধানে সব স্ববিরোধী অনুচ্ছেদ বাতিল ও জনকল্যাণমূলক সংশোধনী আনয়ন এবং একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ, সবার অংশগ্রহণকল্পে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সংবিধানে ১৬তম সংশোধনী আনতে হবে। সংবিধানের বিতর্কিত ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করতে হবে। ৮. মাননীয় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রিবর্গের শপথ পাল্টাতে হবে (১৪৮ অনুচ্ছেদ) ও শপথ ভঙ্গ প্রতীয়মান হলে কি শাস্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বর্তাবে, তা করতে হবে। ৯. বিচারপতি নিয়োগ পদ্ধতি স্বচ্ছ হতে হবে এবং এই প্রেক্ষিতে নতুন পদ্ধতির নিয়োগ প্রস্তাব গ্রহণ করতে হবে (যেমন সার্চ কমিটি ও সবার গ্রহণযোগ্য ও পূর্ব নির্ধারিত মাপকাঠি অনুযায়ী)। বিচার বিভাগকে সত্যিকার অর্থে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করতে হবে। ১০. নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন করতে হবে ও কমিশনার নিয়োগ পদ্ধতি সবার প্রস্তাব অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে করতে হবে। (যেমন ঝবধৎপয ঈড়সসরঃঃবব ও পূর্ব নির্ধারিত যোগ্যতার মাপকাঠি অনুযায়ী)। ১১. বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল স্থায়ী ও সবার গ্রহণযোগ্য এবং স্বচ্ছ করতে হবে ও ১৯৭১ সাল থেকে সব মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিচার করতে হবে। ১২. বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনার পরিপন্থী ও স্বাধীনতাবিরোধী যে কোনো দল বা সংগঠন সম্বন্ধে জনগণকে সচেতন করতে হবে ও যথোপযুক্ত রাজনৈতিক ও নির্বাহী ব্যবস্থা নিতে হবে। ১৩. চঝঈ (প্রাইমারি স্কুল সার্টিফিকেট) থেকে ঐঝঈ (হায়ার সেকেন্ডারি সার্টিফিকেট) পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যার তারতম্য তুলে ধরে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার বাস্তব চিত্র। এর বাইরে শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে শত প্রশ্ন তো রয়েছেই। তাই অনতিবিলম্বে ছাত্রছাত্রীর ড্রপ আউট রেট শূন্যে নামিয়ে আনার বাস্তব সম্মত কৌশল প্রণয়নের পাশাপাশি সব ধর্মীয় শিক্ষালয়কে বাস্তবধর্মী কর্মমুখী পাঠ্যসূচির আওতায় ও রাষ্ট্রীয় নিবিড় পর্যবেক্ষণে আনতে হবে। ১৪. দেশের সবচেয়ে প্রকট সমস্যাটি রাজনৈতিক ও অন্যান্য অস্থিরতার ডামাডোলে উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। এ সমস্যাটি হল ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা। এ বিস্ফোরণোন্মুখ জনসংখ্যার নিয়ন্ত্রণ ও পরিকল্পিত করার জরুরি বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ১৫. বাংলার মানুষের রাজনীতির প্রতি অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতা এবং পরস্পরের পরশ্রীকাতরতা দূর করার লক্ষ্যে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। ১৬. দেশের নির্বাহী, জুডিশিয়ারি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথা পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনীকে সব দলীয় আনুগত্য ও কার্যাবলীর বাইরে রাখতে হবে। তাদের বর্তমান অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার আলোকেও অত্র অঞ্চলের/পাশর্্ববর্তী দেশসমূহের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেতন-ভাতাদি দিতে হবে এবং সেই সঙ্গে তাদের চাকরির সুরক্ষা দিতে হবে।

সর্বশেষ খবর