রবিবার, ২৩ জুন, ২০১৩ ০০:০০ টা

সিটি নির্বাচন : দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রায়

হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ

সিটি নির্বাচন : দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রায়

রাজনীতিতে যে জনগণের রায়ই মূল শক্তি, তা যেন আবারও প্রমাণিত হলো। দেশের আপামর জনগণ দেখতে পেল জনগণের রায়ের কাছে সব কিছুই তুচ্ছ, ম্রিয়মাণ। জনগণ জেগে উঠলে, মতপ্রকাশের সুযোগ পেলে তাকে কোনোভাবেই প্রতিরোধ করা যায় না। কোনোভাবে দমানোও যায় না। জনগণের মতপ্রকাশের শক্তি দুর্নিবার, দুর্বার। সদ্যসমাপ্ত দেশের চারটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কথাই সত্য হলো। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের যারা জনক তারা বহুবার বলে গেছেন, 'জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। জনগণের মতকে পায়ের নিচে পিষ্ট করতে গেলে তোমাকেই পিষ্ট হতে হবে।' ক্ষমতার দম্ভে অনেকেই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তত্ত্ব বা সূত্র মানতে চান না। তারা মনে করেন, ক্ষমতা চিরস্থায়ী। আর তাই নিজের ইচ্ছেমতো রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালনা করতে চান।

মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ কতটা শক্তিশালী, কতটা নিয়ন্ত্রক তার নতুন এক দৃষ্টান্ত তৈরি হলো এবার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। জনগণের এই রায় সরকারের আত্দবিশ্বাসকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। তবে এই রায় যে জনগণের মনের ভেতরের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ এতে কোনো সন্দেহ নেই। আওয়ামী লীগ সরকারের অপশাসন, দুঃশাসনের জবাব দিতে সাধারণ মানুষ অনেক দিন ধরেই এরকম একটি ভোট উপলক্ষ খুঁজছিল। এবার সুযোগ পেয়ে জনগণ সেই ক্ষোভের যথার্থ প্রকাশ ঘটিয়েছে।

সদ্য সমাপ্ত চারটি বৃহৎ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে সবার আগ্রহ, উদ্বেগ এবং আশঙ্কা ছিল ঢের। অনেক দিন পর বলা যায় কম-বেশি সবাই একটা নির্বাচনী আমেজে জড়িয়ে পড়েছিলেন। স্বভাবতই সবার নজর ছিল এই নির্বাচনের দিকে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকার ও বিরোধী দলের জনপ্রিয়তা, বিশ্বাসযোগ্যতা দেখার জন্য একবাক্যে বলব, সবাই মুখিয়ে ছিলেন। এই মুখিয়ে থাকার বহুবিধ কারণও ছিল। এর মধ্যে অন্যতম হলো_ দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল এবং মিত্র শক্তিগুলোর গত কয়েক মাস ধরে একে-অপরের মুখোমুখি হওয়া এবং রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শন করা। বিভিন্ন ঘটনায় গত কয়েক মাস ধরেই রাজনীতির ময়দান ছিল ভীষণ রকম উত্তাল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃস্থাপন, বিশেষ আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে জামায়াতে ইসলামের কতিপয় শীর্ষ নেতার ফাঁসি ও অন্যান্য দণ্ডাদেশ প্রদান, গণজাগরণ মঞ্চের আবির্ভাব, ইসলাম ধর্মের অবমাননা, হেফাজতে ইসলামী নামে একটি ইসলামী সংগঠনের আত্দপ্রকাশ_ গত কয়েক মাসে এসব কিছু ঘিরে রাজনীতির ময়দান ভীষণ রকম উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহে রাজনীতিতে নতুন নতুন মেরুকরণও শুরু হয়। এই ধারাবাহিকতায় রাজনীতির মাঠে একের পর এক ঘটনা ঘটতেই থাকে। সরকারি দল এবং বিরোধী দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক বাধানুবাদ চলতে থাকে তীব্রভাবে। সরকার কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে প্রতিপক্ষকে দমনে কঠোর ভূমিকা যেমন অবলম্বন করতে থাকে তেমনি বিরোধী দলও সরকারের দমন নীতির প্রতিবাদে রাজপথকেই বেছে নেয়। রাজনৈতিক এসব ডামাডোলের ভিড়ে সঙ্গত কারণেই দেশের চারটি গুরুত্বপূর্ণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন জনগণের আগ্রহ ও কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। চারটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনেই জনগণ বিরোধীদলীয় প্রার্থীদের পক্ষে বিপুল রায় দিয়েছে। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা বিপুল ভোটে পরাজিত করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বা মহাজোট সমর্থিত প্রার্থীদের। শুধু এই নয়, যারা পরাজিত হয়েছেন তারা কদিন আগেও ছিলেন শক্তিধর সব নগরপিতা। অন্যদিকে প্রতিপক্ষের একজন ছাড়া আর কারো কখনোই মেয়র বা নগরপিতা হওয়ার সৌভাগ্যও হয়নি কখনো।

বিএনপি এ বিজয়কে দেখছে আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনগণের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে। যে কথা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর থেকে শুরু করে শীর্ষ নেতাদের অনেকেই বলেছেন এইভাবে_ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যা ঘটেছে তা আওয়ামী দুঃশাসনের সঠিক জবাব। জনগণ সঠিক জবাব দিতে ভুল করেনি। সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, আওয়ামী লীগ যে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এটি তার প্রমাণ। ২০০৮ সালে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির নিরঙ্কুশ বিজয় রাজনীতিতে এক নতুন মেরুকরণ এবং নতুন ভাবনা তৈরি করেছে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপিতে খুশির বন্যা বইছে। সেই খুশির রেশ দেখা গেছে সর্বত্র। এদিকে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে চার প্রার্থীর করুণ পরাজয়ে আওয়ামী লীগ শুধু স্তম্ভিত নয়, জনগণের এই রায়ে তারা রীতিমতো বিমূঢ়। ক্ষমতাসীন দলকে জনগণের এই রায় হাজারটা প্রশ্নের মুখোমুখি করেছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সিটি করপোরেশন বিপর্যয়কে আমলে নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করছেন। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের ধারণা ছিল সিটি করপোরেশন ম্যাচফাইটটা শেষ পর্যন্ত ২-২ হবে এর বেশি নয়, অর্থাৎ বিএনপি ভালো করলেও আওয়ামী লীগ কমপক্ষে দুটিতে জয়লাভ করবে। কিন্তু বাস্তবে যা হয়েছে সেটা অনেকটা গণেশ উল্টে যাওয়ার মতো। চারটি সিটি করপোরেশনের কোনোটিতেই কার্যত কোনো ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাই হয়নি। বিএনপি প্রার্থীরা বিপুল ভোটে আরাম-আয়েশে অনায়াসে জিতেছে। বলা যায় আওয়ামী লীগের যারা পরাজিত হয়েছেন শুধু বরিশালের শওকত হোসেন হিরণ ছাড়া আর সবার জীবনে এই পরাজয় কলঙ্ক-তিলকই বটে। কেননা এর আগে কোনো নির্বাচনেই তারা কেউ এত ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হননি। গত সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা হারলেও রাজশাহীতে মোসাদ্দেক বাবুল বা খুলনাতে মনিরুজ্জামান মনির ভোট ব্যবধান এমনটি ছিল না। সেই তুলনায় এবারের নির্বাচনে রাজশাহীতে খায়রুজ্জামান লিটন বা খুলনায় তালুকদার আবদুল খালেকের ভোট ব্যবধান রীতিমতো বিস্ময়কর।

কেন আওয়ামী লীগের এই ভরাডুবি বা করুণ পরিণতি? বিজ্ঞ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যা কিছু ঘটেছে তা জাতীয় রাজনীতির প্রতিফলন। কোনো ব্যক্তিগত ইমেজ বা উন্নয়ন এখানে কোনো প্রভাব ফেলেনি। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগের কেউ কেউ নিজ এলাকায় উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন করলেও সেটাও জনগণ কর্তৃক দারুণভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে উন্নয়নকর্মে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব ছিল বলে অনেকে অভিমত ব্যক্ত করেছে। আমি নিশ্চিত করেই বলতে পারি, বিশ্লেষকদের এই মন্তব্য পড়ে আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থীদের কারও কারও মন খারাপ না হয়ে পারবে না। কেননা দলের অহঙ্কার, অহমিকা আর ভুলভ্রান্তির মাশুল দিতে হলো তাদেরই।

নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে সর্বশেষ ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। সহযোগীদের নিয়ে তারা মহাজোট সরকার গঠন করে। মহাজোটের বিপরীতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং তার মিত্ররা অল্পসংখ্যক আসন নিয়ে এক খর্ব রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবিভর্ূত হয়। মহাজোট সরকারের কাছে সবার প্রত্যাশা ছিল_ গণতন্ত্র, সুশাসন আর জবাবদিহিতায় সরকার নতুন নজির স্থাপন করবে। কিন্তু মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও বিরোধী দল দমন এবং চরম প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতি শুরু করে। লাগামহীনভাবে সন্ত্রাসীমূলক কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। দলীয় ক্যাডার এবং পুলিশ বাহিনী বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এই ধারাবাহিকতায় গুম আর খুনের স্বর্গরাজ্য বানানো হয় গোটা দেশকে। সাবেক এমপি ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমের মতো নেতাদেরও গুম করে ফেলা হয়। বিচারবহিভর্ূত হত্যাকাণ্ডের রেকর্ড করে আওয়ামী লীগ। দুর্নীতিতেও সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ হয় এই সরকারের আমলেই। পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শেয়ারবাজার, পদ্মা সেতু, ডেসটিনি, হলমার্ক কেলেঙ্কারি সব কিছুতেই সরকারি দলের মন্ত্রী এবং নেতা-কর্মীদের কমবেশি সম্পৃক্ততা প্রকাশ পায়। আবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মতো নেতার ঘুষবাণিজ্য রাজনীতিতে নতুন বিনোদন তৈরি করে। কিন্তু কোনো কিছুরই বিচার হয়নি। তৃণমূল পর্যায় থেকে সর্বত্র দলীয়করণ, ঘুষ-দুর্নীতির এক মহোৎসব তৈরি হয় এই সরকারের আমলে। একই সঙ্গে জনগণের ভোটের রায়কে নিজ দলের পক্ষে নেওয়ার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাও বাতিল করে আওয়ামী লীগ সরকার। এদিকে প্রায় প্রতিটি ঘটনায় এই সরকার চরম নিষ্ঠুরতার পরিচয় দেয়। এক কথায় বলব এই নিষ্ঠুরতাগুলো আমজনতার মন থেকে মুছে যায়নি। সাবেক এমপি ইলিয়াস আলী বা কমিশনার আলম চৌধুরীর পরিবার এখনো কাঁদছে। সরকার তার সঠিক দায়িত্ব পালন করেনি। ইলিয়াস আলী কোথায় আছে এখনো অজানা। নিরীহ দর্জি বিশ্বজিতের বাঁচার সেই প্রাণান্তকর চেষ্টা এখনো কোনো মানুষ হৃদয় থেকে মুছে ফেলতে পারেননি। বিশ্বজিৎকে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হলেও উল্টো খুনিদের রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। ছাত্রলীগ এবং যুবলীগের বেপরোয়া কর্মীরা একের পর এক অঘটন ঘটালেও তার কোনো বিচার হয়নি। আর সারা বছর ধরে বিএনপিকে তো রাজপথেই নামতে দেওয়া হয়নি। মাসের পর মাস বিএনপি অফিস অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। দলীয় নেতাদের অফিসে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বিএনপি অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। কথায় কথায় বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর চালানো হয়েছে অমানসিক নির্যাতন। ইচ্ছেমতো হুমকি-ধমকি আর মামলা দেওয়া হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল থেকে শুরু করে হাজার হাজার কর্মীকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। সবশেষে হেফাজতে ইসলামীর ঢাকা সমাবেশকে কেন্দ্র করে সর্বোচ্চ অমানবিকতার পরিচয় দেয় এই সরকার। রাতের অাঁধারে নিরীহ মুসলি্লদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রক্তাক্ত করা হয় মতিঝিল-শাপলা চত্বর এলাকা। দেশে এত মন্ত্রী-মিনিস্টার থাকতে এখন পর্যন্ত মানুষ জানতে পারেনি সে রাতে সত্যিকার অর্থেই কতজন মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। উল্টো এ বিষয় নিয়ে সরকারি দলের অনেকেই হাসি ঠাট্টা উপহাস করেছেন। কিন্তু এও তো সত্য হেফাজতে ইসলামীর সমর্থকরা এদেশেরই মানুষ। তাদের কথা বলা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। অনেকেই তাদের উগ্র চরমপন্থি বলে চিহ্নিত করার অশুভ চেষ্টা করে। আমিও মনে করি সেখানে অতিউৎসাহীদের কেউ কেউ অতিমাত্রায় উগ্র বা অসহিষ্ণু থাকতে পারে। তবে বাংলাদেশে যতগুলো রাজনৈতিক দল আছে সব দলেই তো এরকম অনেক নেতা-কর্মী রয়েছেন। তাই বলে হেফাজতকে যে পন্থা বা প্রক্রিয়ায় দমন করা হয় সেটা দেশের মানুষ কোনোভাবেই ভালোভাবে মেনে নেয়নি।

আওয়ামী লীগ এ দেশের শক্তিশালী সংগঠিত রাজনৈতিক দল এ নিয়ে বিতর্ক করা অনর্থক বা সময়ের অপচয়। কিন্তু পাশাপাশি এও সত্য তারাই এদেশের একক কোনো শক্তি নয়। ক্ষমতাও তাদের জন্য চিরস্থায়ী নয়। দেশের জনগণ এ বিষয়টি আওয়ামী লীগকে আবারও হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দিয়েছে। অবশ্য আওয়ামী লীগের এই পরাজয় শুরু হয় বেশ আগেই। এর আগে ২০১০ সালের জুনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দুর্দান্ত প্রভাবশালী নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরী ধরাশায়ী হয়েছিলেন মঞ্জুর আলমের কাছে। প্রায় এক লাখ ভোটের ব্যবধানে মহিউদ্দিন পরাজিত হয়েছিলেন। এরপর সারা দেশে পৌরসভা নির্বাচনেও আওয়ামী শিবিরে ধস নামে। যশোর, সাতক্ষীরা, পাবনাসহ বড় বড় সব শহরেই আওয়ামী প্রার্থীরা বিপুল ভোটে পরাজিত হন। কুমিল্লা পৌরসভার নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়। সর্বশেষ কয়েকটি ছোট পৌরসভার নির্বাচন হয় সেখানে আওয়ামী প্রার্থীরা হারেন। এলেঙ্গা, মাগুরা, বাসাইল কোনোটাতেই তারা জিততে পারেননি। চারটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল এবং আগে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন ছোট বড় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের ধারাবাহিক পরাজয় প্রমাণ করে এই সরকারের ওপর জনগণ সম্পূর্ণরূপে আস্থা হারিয়েছে। সত্য কথা হলো চারটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জনগণ যে রায় দিয়েছে আগামী জাতীয় নির্বাচনেও এমনটি রায় দেওয়ার জন্য জনগণ প্রস্তুত। বিশ্লেষকরাও সেরকম মত প্রকাশ করছেন। কিন্তু আমরা দেখছি সরকার বিরোধী দলের যে মূল দাবি সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিটি কোনোভাবেই আমলে নিচ্ছেন না। সরকার এখন যে একগুঁয়েমিতার পরিচয় দিচ্ছে তাতে করে রাজনীতিতে আরও বড় ধরনের বিপদাপন্ন অবস্থা তৈরি করবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা বাতিল হওয়ার পর থেকেই বিএনপি এবং তার অনুসারীরা রাজপথে আন্দোলন করছে। দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনে না যাওয়া প্রশ্নে বিএনপি এবং তার অনুসারীরা একমত। তারা বলেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল ছাড়া দলীয়ভিত্তিক কোনো ধরনের নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করবে না। এ বিষয়টির ফয়সালা এখন আওয়ামী লীগকে করতেই হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়টির সমস্যা আওয়ামী লীগ যত তাড়াতাড়ি করবে সেটা গণতন্ত্রের জন্য মঙ্গল হবে। ক্ষমতার শক্তি নয়, জনগণের রায়ের প্রতি আওয়ামী লীগ শ্রদ্ধাশীল না হলে সামনে আরও ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে। মনে রাখা প্রয়োজন, আওয়ামী লীগ-মহাজোট বা অন্য কোনো শক্তি নয়- জনগণই সব ক্ষমতার উৎস।

লেখক : চেয়ারম্যান, ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি, [email protected]

 

 

সর্বশেষ খবর