শনিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৩ ০০:০০ টা

চামড়া ব্যবসায় মন্দা

ট্যানারি মালিকদের সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন ক্ষুদ্র চামড়া ব্যবসায়ীরা। তারা চামড়ার যে দাম নির্ধারণ করেছেন, সে দামে চামড়া বিক্রি করলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের লাভ দূরের কথা, আসল টাকা ঘরে নেওয়াও কঠিন হয়ে পড়বে। অনেকেই দাম পতনের বিপর্যয়ে ইতোমধ্যে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। ব্যবসায়ীদের অসৎ সিন্ডিকেটের কারণে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তাদের চামড়া ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারছেন না। এ অবস্থার সুযোগ নিচ্ছে চোরাচালানকারীরা। ট্যানারি মালিকদের নেতিবাচক মনোভাবের কারণে কোরবানির চামড়া চলে যাচ্ছে সীমান্তের ওপারে। চলতি বছর ১৯ লাখ গবাদিপশু এসেছে ভারত থেকে। এ বাবদ প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়েছে। এ গবাদিপশুর বেশির ভাগ এসেছে কোরবানিকে সামনে রেখে। কোরবানি বাবদ যে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়, তার একটা অংশ উঠে আসে বিদেশে প্রক্রিয়াজাতকৃত চামড়া রপ্তানি বাবদ। চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমেও স্ফীত হয় বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার। চামড়া ব্যবসা, প্রক্রিয়াজাত কারখানা ও চামড়াজাত পণ্য কারখানার মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষের জীবিকার সংস্থান হয়। কোরবানির সময় গবাদিপশু আমদানি বাবদ যে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয় তার বেশির ভাগ চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি বাবদ যেমন ফিরে আসে তেমন কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি করে। চামড়া প্রতিবেশী দেশে পাচার হয়ে গেলে সে সুফল হাতছাড়া হওয়ার নিয়তিই অনিবার্য হয়ে ওঠে। এই অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থার উদ্ভব ঘটছে ট্যানারি মালিকদের অশুভ সিন্ডিকেটের কারণে। চামড়া কেনা এবং সংরক্ষণে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাংক ঋণ দেওয়া সত্ত্বেও ট্যানারি মালিকদের মুনাফাখোরি মনোভাবের কারণে সংকট দানা বেঁধে উঠছে। চামড়ার বাজারে ধস নামানোর জন্য অসৎ সিন্ডিকেটের এ অপতৎপরতা দুর্ভাগ্যজনক। এ স্বার্থপর মনোভাব শুধু চামড়া ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, কোরবানির কল্যাণধর্মী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। কোরবানির চামড়া বিক্রি বাবদ প্রাপ্ত অর্থ মাদ্রাসা, মক্তব ও গরিব-দুঃখীদের দান করা হয়। চামড়ার দাম কৃত্রিমভাবে কমিয়ে রাখা হলে তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করা হবে। ট্যানারি মালিকরা তাদের মুনাফার লাগামহীন স্পৃহাকে সংযত করলে এ ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি হবে।

সর্বশেষ খবর