সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা
ধর্ম

ইসলামে বিলাসিতা

মুহাম্মদ আরিফুর রহমান জসিম

আজকের সমাজে প্রচণ্ড সুখভোগে উন্মত্ত হয়ে, পার্থিব জীবনে ইচ্ছা-শান্তির, উপায়-উপকরণ খুঁজে চলেছে মানুষ। মানুষের ব্যবহারিক জীবনে আবাসিক গৃহে সৌন্দর্য ও সাজসজ্জার নামে বিলাসিতা পড়েছে। মনোহর বিলাস-সামগ্রীতে মানুষ উচ্ছৃঙ্খল প্রতিযোগিতা করেছে দীন পালনের মাঝে জান্নাত লাভের ভরসা না করে। স্বীয় কর্মের মাঝে স্বরচিত স্বর্গের আশা করছে। মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, 'কুফরিতে মানুষ এক মতাবলম্বী হয়ে পড়বে এ আশঙ্কা না থাকলে দয়াময় আল্লাহকে যারা অস্বীকার করে তাদের (কাফেরদের) তিনি দিতেন গৃহের রৌপ্যনির্মিত সোপান ও গৃহদার, বিশ্রামের জন্য পর্যাপ্ত এবং সৌন্দর্যালঙ্কার। কিন্তু এসব তো পার্থিব জীবনের ভোগ সম্ভার। সাধারণদের (মুক্তাকি) জন্য তোমার প্রতিপালকের কাছে রয়েছে পরকালের কল্যাণ।' (সূরা আয-যুখরুখ : ৩৩-৩৫) পবিত্র কোরআনে আরও বলা হয়েছে, সুতরাং পার্থিব জীবনের অধিক সাজসজ্জা ও সৌন্দর্যাদি তো আল্লাহর তরফ থেকে কাফেরদের জন্য প্রদেয়। কিন্তু যেহেতু তাদের সবটুকু প্রদান করলে অজ্ঞ মানুষ এই ধারণা করবে যে, কাফেররা ঐশ্বর্য পেলে, কুফরিতেই ধনলাভ হয়, ধর্ম করলে কাঁদতে হয়। আল্লাহ তাদের ওপর সন্তুষ্ট ও সদয় বলেই তো তাদের এত বিত্তবৈভব প্রদান করেন। অতএব ধর্মে কিছু নেই। ফলে কুফরিতে মানুষ মেতে উঠত। অথচ বিষয়-সম্পদ তাদের ফিতনার জন্যই দেওয়া হয়। তিনি মুসলিমকে ফিতনায় ফেলতে চান না। তিনি মুমিনের জন্য আখিরাতকেই পছন্দ ও নির্ধারিত করে রেখেছেন। তবে পার্থিত সুখ-সম্ভোগ ও সৌন্দর্যকে তাদের জন্য একেবারে অবৈধ করেননি। (সূরা আল-আ'রাফ : ৩২) বিলাসিতার ব্যাপারে হাদিস শরিফে আছে, রাসূল (সা.) সাজসজ্জার ব্যাপারে অতিরঞ্জন করা ও উন্মত্ত হওয়াকে পছন্দ করেননি। তাই তো প্রিয় রাসূল (সা.) দেয়ালে পর্দা দেখলে ছিঁড়ে ফেলতেন। (মুসলিম) দরজায় মূল্যবান সৌন্দর্যখচিত পর্দা দেখলে সে ঘরে তিনি প্রবেশ করতেন না। উলি্লখিত কোরআন ও হাদিসের বর্ণনানুযায়ী বলা যায়, ঘরকে অতিশয় সৌন্দর্য ও বাহারে সুশোভিত করা মাকরুহ তাহরিমি বা হারাম। কারণ তাতে অপব্যয় হয় এবং পার্থিব জীবনের ওপর চিত্তাকৃষ্ট হয়। অতএব, গৃহকর্তার উচিত সর্বদিক বজায় রেখে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা। অবশ্য এ কথা খেয়াল রাখতে হবে যে, ইসলামে পবিত্রতা, পরিচ্ছন্নতা, সুন্দরতা বাঞ্ছিত ও ইপ্সিত কর্ম। তবে তাতে বাড়াবাড়ি করে অর্থের অপচয় করা ইসলামের দৃষ্টিতে নিন্দিত অপকর্ম। মুসলমানের যা উচিত তা এই যে, সে পরিবেশকে সুন্দর ও রুচিসম্পন্ন করে গড়ে তোলার জন্য গৃহাঙ্গন, বহির্বাটি ও বাড়ির বাইরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবে। খেয়াল রাখবে, যাতে কোনো প্রকারের আবর্জনা-ময়লাদি তার ব্যক্তিত্ব ও বাড়িতে কলঙ্ক না এঁকে দেয়। পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে নবী করিম (সা.) বলেন, তোমরা তোমাদের গৃহের আঙিনা (সম্মুখ ভাগকে) পরিচ্ছন্ন রাখ। (সহীহুল জামে-৩৯৪১) মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের বিলাসিতা বর্জন করার তৌফিক দিন।

লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর