রবিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৪ ০০:০০ টা
খোলা কলাম

খালেদা জিয়ার লড়াই এবং \\\'ওসি থেকে কনস্টেবল\\\'

কাজী সিরাজ

খালেদা জিয়ার লড়াই এবং \\\'ওসি থেকে কনস্টেবল\\\'

গত ১২ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদের কাছে শপথ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৪৯ সদস্যের নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নতুন মন্ত্রীদের শপথবাক্য পাঠ করানোর পর দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনায় এসেছে। (১) দশম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে বলে যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, সেই সংসদ নির্বাচনটি কেমন ছিল এবং তার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু, (২) এরশাদের জাতীয় পার্টির সদস্যরা মন্ত্রিসভায় যোগদানের পর সংসদে বিরোধী দলের কোনো অস্তিত্ব আর থাকল কিনা? বাংলাদেশ সংবিধানের ৬৫ (২) অনুচ্ছেদে বলা আছে যে, 'একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকাসমূহ হইতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আইনানুযায়ী নির্বাচিত তিন শত সদস্য লইয়া এবং এই অনুচ্ছেদের (৩) দফার কার্যকরতাকালে উক্ত দফায় বর্ণিত সদস্যদিগকে (সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্যরা) লইয়া সংসদ গঠিত হইবে এবং সদস্যগণ সংসদ সদস্য বলিয়া অভিহিত হইবেন।' পাঠক লক্ষ্য করুন, সংবিধানে স্পষ্ট নির্দেশ আছে যে, নির্বাচন হতে হবে প্রত্যক্ষ অর্থাৎ একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ীরাই জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি হবেন। প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থী বেছে নেওয়ার সুযোগ পায়। সংসদে নিজের পছন্দের প্রতিনিধি পাঠানোর এ সুযোগ নিছক সুযোগ নয়, এটা জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু ৩০০ একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকার মধ্যে ১৫৩ এলাকা থেকে সদস্যরা নির্বাচিত(?) হয়ে গেছেন বিনা ভোটে। প্রধান বিরোধী দলসহ কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীও ওইসব আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পাননি। এ নির্বাচন ছিল অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর অংশগ্রহণহীন একটি একদলীয় নির্বাচন। সভ্য গণতান্ত্রিক কোনো দেশে এ ধরনের নির্বাচনের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই, স্বীকৃতিও নেই।

জাতিসংঘ রেজুলিউশনে সদ্য-বিগত সরকারি দল ও বর্তমান প্রধান বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে কোনো জাতীয় নির্বাচন গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হয় না। কাজেই সব দলের অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন যে কোনো জাতীয় নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার গুরুত্বপূর্ণ পূর্বশর্ত। প্রধান বিরোধী দলসহ অন্যান্য ভিন্ন মতাবলম্বীরা এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি তা সবারই জানা। এ নিবন্ধে আমরা সেই প্রসঙ্গে যাচ্ছি না। তবে এ নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণমূলক একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের শর্ত পূরণ করেনি। অপরদিকে ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ১৪৭ আসনের নির্বাচনেও ভোটারের উপস্থিতি ছিল সর্বকালের সর্বনিম্ন- যদিও ইসি বলেছে ৪০.৫৬ শতাংশ। কেউ বিশ্বাস করছে না (সরকার সমর্থকরা ছাড়া) এই পরিসংখ্যান। এখন নির্বাচন কমিশনের দেওয়া পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে নবগঠিত সরকারের মন্ত্রী-মিনিস্টাররা বলতে শুরু করেছেন যে, জনগণ তাদের ম্যান্ডেট দিয়েছে পাঁচ বছরের জন্য; তাই এ সরকার পাঁচ বছরই ক্ষমতায় থাকবে। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া ভোটের হিসাব বিশ্বাসযোগ্য হয়নি- এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, প্রদত্ত ভোটের এই হার প্রদর্শনের পেছনে একটা চালাকি আছে। গত কয়েকটি নির্বাচনে লক্ষ্য করা গেছে, প্রদত্ত ভোটের ৪০ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পায় আওয়ামী লীগ। হিসাবটা এ জন্যই দেওয়া হয়েছে, আওয়ামী লীগকে যারা ভোট দেয় তারা ঠিকই ভোট দিয়েছে। ভোট দেয়নি বিএনপি-জামায়াত সমর্থক আর নিরপেক্ষ ভোটাররা। যদি ধরেও নেওয়া হয় যে, নির্বাচন কমিশনের দেওয়া হিসাব এবং সরকারের পকেটে রাখা প্রদত্ত ভোটের সার্টিফিকেটটা সত্য, তাহলেও তারা কি এই সরকারকে নির্বাচিত সরকার বলতে পারেন? এই হিসাব তো ১৪৭ আসনের। সরকার গঠন করার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠ ১৫৩ আসনে তো বিনা ভোটেই কাম শেষ। তাহলে কি দাঁড়াল? সংবিধান আর আইনের জিলাপির প্যাঁচ দেখিয়ে লাভ নেই। দেশ-দুনিয়া জানে ওই আসনগুলোতে প্রত্যক্ষ নির্বাচন হয়নি। নৈতিকতার বিবেচনায় ও জনগণের দৃষ্টিতে বর্তমান সরকার নিজেদের প্রকৃত গণনির্বাচিত সরকার দাবি করতে পারে না। কাজেই এ নির্বাচন (দশম সংসদ) ও সরকারের নৈতিক ভিত্তি খুবই দুর্বল এবং এর গ্রহণযোগ্যতার যে প্রশ্ন দেশ-বিদেশে দেখা দিয়েছে এই ভয়ঙ্কর সংকট শুধু শেখ হাসিনার এই তৃতীয় সরকারের নয়, এ সংকট আমাদের গণতন্ত্রের, এ সংকট আমাদের জাতীয় সংকট। গণতন্ত্রের এ সংকট সভ্য দুনিয়ায় আমাদের মাথা হেঁট করে দিল। এই অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য অতি দ্রুত সব দলের অংশগ্রহণমূলক একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করা জরুরি। ছিয়ানব্বইর ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ টিকিয়ে রাখা হয়নি; ওই নির্বাচন এবং তার মাধ্যমে গঠিত সরকারের লেজিটিমেসির সংকটও অস্বীকার বা অগ্রাহ্য করেনি তৎকালীন খালেদা জিয়ার সরকার। সংসদ ভেঙে দিয়ে তিন মাসের মধ্যেই সপ্তম সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল এবং সেই নির্বাচনেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এরশাদের সমর্থনে লীগ সরকার গঠিত হয়েছিল। বিএনপি-জামায়াত সেই সরকারের বিরুদ্ধে তুমুল আন্দোলন করেছে, তবে সেই সরকারে কোনো লেজিটিমেসি সংকট ছিল না। কিন্তু বর্তমান সরকার তীব্র গ্রহণযোগ্যতা সংকটে পড়েছে শুরুতেই। যারা এ সরকারকে নির্বাচিত সরকার বলে আনন্দ-উল্লাস করছেন, তারাও জানেন, এ নির্বাচনটা কেমন হয়েছে। এ সরকার দিয়ে যদি তারা আগামী পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার দাবি করে, তাহলে শুধু পাঁচ বছর কেন, রূপকল্প বাস্তবায়নের জন্য-২০৪১ সাল পর্যন্তই ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার আগাম ঘোষণা দিয়ে দিতে পারে। কিন্তু 'বার বার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান...' এটা এত সহজ হবে কি? বর্তমানে হঠাৎ শান্ত-শীতল রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অনেক অভিজ্ঞ রাজনৈতিক বিশ্লেষক টর্নেডোর অশনি সংকেত বলে মনে করছেন। টর্নেডো আগাম কোনো পূর্বাভাস না দিয়ে আকস্মিক সব কিছু লণ্ডভণ্ড করে দেয়। সরকার পক্ষের বিষয়টি অনুধাবন করা উচিত। উচিত হবে দ্রুত সমঝোতায় পৌঁছে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা। উদ্যোগটা সরকারকেই নিতে হবে।

বর্তমান সংকট নিরসনকল্পে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করে এরশাদের জাতীয় পার্টিকে সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসিয়েই কিস্তিমাৎ করে ফেলবে বলে সরকার যদি ভাবে ভুল করবে। সবারই স্মরণ থাকার কথা, ১৯৮৮ সালের সাজানো-পাতানো নির্বাচনের (যাতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করেনি) মাধ্যমে গঠিত সংসদে জেএসডি সভাপতি আ স ম রবকে বিরোধী দলের নেতা বানিয়েছিলেন হু মু এরশাদ। তখন সেই বিরোধী দলকে বলা হতো 'গৃহপালিত বিরোধী দল'। এখনো ওই রকম একটা 'গৃহপালিত বিরোধী দল' দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। সাবেক রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে মন্ত্রীর মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর দূত নিযুক্ত করায় তিনি নাকি বেজায় আনন্দিত হয়ে শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদপত্র পাঠিয়েছেন। এটা একটা হাস্যকর বিষয়। 'ওসি থেকে কনস্টেবল' হয়ে কেউ খুশি হয়? যদি হয়, এটা সুস্থতার লক্ষণ নয়। বলা হচ্ছে, জাতীয় পার্টি নাকি সংসদে বিরোধী দলের 'ভূমিকা' পালন করবে। ভূমিকা পালন করার প্রশ্ন আসে কেন? বিরোধী দল বিরোধী দল হিসেবে দায়িত্ব পালন করাই তো স্বাভাবিক। স্পিকার কর্তৃক রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতার স্বীকৃতি দিয়ে চিঠি দেওয়ার পর জাতীয় পার্টি সরকারের অংশীদার হয় কী করে।

দেশে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অর্থবহ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিতকরণে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তার নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে অবশ্যই ভূমিকা রাখতে হবে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, বেগম জিয়া তখনই সঠিক ভূমিকা পালনে সক্ষম হবেন, যখন অতীতের ভুল-ভ্রান্তির চুলচেরা বিশ্লেষণ করে আত্দসমালোচনা করবেন এবং ভুল শোধরাবেন। সদ্য বিগত লীগ সরকারের শেষ বছর তারা দেশব্যাপী তুমুল আন্দোলন করেছে। ধারণা করা হয়েছিল, আন্দোলনের মুখেই সরকারের পতন হবে অথবা সরকার বিদায় নিতে বাধ্য হবে। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছেন। ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান করলে দুটি বিষয় খুব স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। (১) বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া তার দলের বর্তমান নেতৃত্ব কাঠামো অবিশ্বস্ত, ভীতু এবং শাসক লীগের বিরুদ্ধে সফল আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে অক্ষম। এদের অনেকে সমাজে দুর্নীতিবাজ হিসেবে চিহ্নিত। বিএনপি গঠনতন্ত্রের ৭ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তারা দলের সদস্যপদ লাভেরও অযোগ্য; অথচ এদের বানিয়ে রাখা হয়েছে নেতা, কেউ কেউ আবার নীতিনির্ধারক! এক সময় এদের সহায়-সম্পদ কিছুই ছিল না প্রায়। আর এখন সম্পদের হিসাব রাখার জন্য কর্মচারী লাগে। এদের হারানোর ভয় এখন এত বেশি যে, আন্দোলনে নেতৃত্বদানের ঝুঁকি তারা নেন না। নেতারা মাঠে নামেন না বলেই লড়াকু কর্মী-সমর্থকরাও পথে নামেন না। তাছাড়া লুটেরা হিসেবে চিহ্নিতরাই আবার গদি পেয়ে লুটপাট করার সুযোগ নেবে তা-ও চায় না তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। আশ্চর্য, এরাই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পছন্দের বাছাই। সরকারও এদের আমলনামা জানে। আমলনামা ধরে টান দিয়ে সরকারও অনেককে ঘরে ঢুকিয়ে দিয়েছে। তারাই বেগম জিয়াকে শেষ লজ্জাটা দিয়েছে গত ২৯ ডিসেম্বর 'মার্চ ফর ডেমোক্রেসি' প্রোগ্রামে। অথচ হাজারো মানুষ অপেক্ষায় ছিল রাস্তায় নামার জন্য। বাইরের জেলাগুলো থেকেই প্রায় ৫০ হাজার লোক ঢাকায় এসে গিয়েছিল বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এসব দুষ্ট ক্ষত সাফ না করতে পারলে জনসমর্থন থাকা সত্ত্বেও পদে পদে বিপদে পড়বেন, বিফল হবেন বেগম জিয়া-তারেক রহমান। (২) ১৮ দলীয় জোট গঠন করে বিএনপির কোনো লাভ হয়নি। বরং একটা বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একমাত্র জামায়াত ছাড়া দেশব্যাপী কারও কোনো জনসমর্থন নেই। অধিকাংশেরই পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটিও নেই। বিএনপির ছায়ায় তারা লাভবান হচ্ছে। বড় বড় জনসভায় বক্তৃতা দিতে পারছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, জামায়াতের সংগঠন থাকলেও তারা এখন বিএনপির ঘাড়ে সওয়ার হওয়া রাজনৈতিক বোঝা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার এরা ঘোরবিরোধী শক্তি ছিল। একাত্তরে তাদের দ্বারা সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের কথা বয়স্করা এখনো ভোলেনি, নতুন প্রজন্মের জন্য তা ধারণ করে আছে কালের ইতিহাস। বিএনপি নেতৃত্বের একটি প্রভাবশালী অংশ তাদের নির্বাচনে জেতার একটা বড় শক্তি মনে করে। তারা ভাবে জামায়াতিদের সঙ্গে রেখে মুসলিম ভোটারদের প্রলুব্ধ করা যাবে। কিন্তু তেমন প্রবীণ ভোটারের সংখ্যা এখন প্রায় নিঃশেষ হয়ে গেছে- যারা জামায়াত আর পাকিস্তান প্রেমের কারণে কাউকে সমর্থন জানায়। সে কারণে জামায়াতের সমর্থন ৮-৯ শতাংশ থেকে কমে তিন-চার শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। তবে এরা সংগঠিত ও সুশৃঙ্খল। এদের এখনকার লাইফব্লাডও নতুন প্রজন্ম। প্রবীণদের প্রভাবে এরা পুরাতন পাকিস্তানি ধ্যান-ধারণা ধারণ করে আছে এবং এরাই লক্ষ্য অর্জনের জন্য, বিশেষ করে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডিত তাদের নেতাদের জীবন এবং দলের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বিএনপির ঘাড়ে চড়ে সহিংসতার বিষ ছড়াচ্ছে। সরকারের ওপর জনগণ ক্ষুব্ধ থাকলেও জামায়াতের সহিংতার কারণে ১৮ দলীয় জোটের আন্দোলন কর্মসূচিতে ব্যাপকভাবে অংশ নেয়নি। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলনকে তারা জামায়াত রক্ষার আন্দোলনে পরিণত করে ফেলায় সরকার সুযোগ নিয়েছে এবং বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গে মৌলবাদী কাতারে নামিয়ে দিয়ে চরম নিগ্রহের রোলার চালিয়ে দিতে পেরেছে। একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধী এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে জাতীয় জনমত এখন এতটাই জাগ্রত ও যূথবদ্ধ যে, জনগণের একটা বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ বিএনপির প্রতি অনুরক্ত থাকলেও বিএনপির পক্ষে মাঠে নামছে না, এমনকি বেগম খালেদা জিয়া ডাক দেওয়ার পরও।

এসব কিছু ভেবেই বিএনপিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বেগম খালেদা জিয়া জামায়াতের সঙ্গে তাদের ঐক্য স্থায়ী নয় বলে যে ঘোষণা দেশি-বিদেশি মিডিয়ায় দিয়েছেন, অনেক পর্যবেক্ষক তাকে স্বাগত জানিয়ে বলছেন, সম্পর্কটা ত্যাগ করার এখনই সময়। তারা মনে করেন, বেগম জিয়া ১৮ দলের পেছনে সময় খরচ না করে নিজ দলের পেছনে সময় দেওয়াটাই হবে অধিকতর লাভের। ১৮ দলকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া মানে জামায়াতকে গুরুত্ব দেওয়া, ১৮ দলের ব্যানারে জামায়াতকে আশ্রয় দেওয়া ও রক্ষা করার চেষ্টা বলেই বিবেচিত হচ্ছে সব মহলে। এই মহলের মতে, বেগম জিয়ার এখন প্রতিদিনই মূল দল ও এর বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী দলকে নিয়ে শলাপরামর্শ, সভা-সমাবেশে সময় দেওয়া উচিত। তাতে দল আবার সুসংগঠিত হবে এবং সব স্তরের নেতা-কর্মী উদ্বুদ্ধ হবে। অপরদিকে তারা রাজাকার না হয়েও রাজাকার গালি খাওয়া থেকে রেহাই পাবে। গত ১৫ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে বেগম খালেদা জিয়ার ভাষণ সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। অভিমত পাওয়া যাচ্ছে, এভাবে গণতান্ত্রিকভাবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচির মাধ্যমে এককভাবেই বিএনপি অথবা জামায়াতকে বাদ দিয়ে অন্যদের নিয়ে জোটবদ্ধভাবে একটা জাগরণ সৃষ্টি করতে পারে। জামায়াতি সহিংসতার পথ পরিহার করে বেগম জিয়ার নেতৃত্বে শান্তিপূর্ণ অভিযান আবার একদলীয় স্বৈরশাসনের বিপদ থেকে জাতিকে রক্ষা করতে পারে। ১৫ তারিখের সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তব্য থেকে পরিষ্কার হয়ে গেছে, লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার অসমাপ্ত লড়াইয়ের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হলো।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট।

ই-মেইল :[email protected] 

 

 

 

সর্বশেষ খবর