সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ০০:০০ টা

স্বাস্থ্য খাতে বিশৃঙ্খলা

চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকারের একটি। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর থেকে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের পর বিধ্বস্ত বাংলাদেশে যখন চারদিকে নাই নাই ধ্বনি সে চরম দুর্দিনেও বঙ্গবন্ধু মানুষের এই মৌলিক অধিকার পূরণকে অগ্রাধিকার দেন। গত চার দশকে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে বাংলাদেশ তাৎপর্যপূর্ণভাবে এগিয়েছে। জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দও ক্রমান্বয়ে বাড়ানো হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা পেঁৗছে দেওয়ার চেষ্টা চলছে গ্রাম পর্যায়েও। সরকারি পর্যায়ে গড়ে তোলা হচ্ছে একের পর এক হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্ ও ক্লিনিক। বিপুল বরাদ্দ এবং সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্যসেবার মান কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। জনগণের ট্যাঙ্রে টাকায় পরিচালিত সরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে সরকারি খরচে পড়াশোনা করে যারা ডাক্তার হচ্ছেন, তাদের এক অংশ সাধারণ মানুষের প্রতি কোনো দায় অনুভব করছেন না। গ্রামাঞ্চলের স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্ কিংবা ক্লিনিকে যেসব চিকিৎসককে নিয়োগ করা হয় তাদের এক বড় অংশই গ্রামীণ জনগণের সেবা করাকে উটকো ঝামেলা হিসেবে ভাবছেন। যে কোনো ছুঁতোয় তারা চলে আসছেন শহরাঞ্চলে। কিংবা কেউ কেউ শহরে অবস্থান করে সেখান থেকে মাঝে-মধ্যে কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত হয়ে খাতাপত্রে স্বাক্ষরদানের মধ্যেই নিজেদের দায় সীমাবদ্ধ রাখছেন। স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি-অনিয়ম সমার্থক শব্দে পরিণত হওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নতুন আইন প্রণয়নের চিন্তাভাবনা চলছে। স্বাস্থ্য খাতের বিশৃঙ্খলা দূর ও সেবার মান নিশ্চিত করা হবে নতুন আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য। এই আইনে স্বাস্থ্য খাতের যন্ত্রপাতি ও ওষুধ কেনা, উৎপাদন ও বিতরণ, পদোন্নতিসহ অন্যান্য বিষয়ে দিকনির্দেশনা থাকবে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে অবহেলা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। বিশেষত গ্রামাঞ্চলে ডাক্তারদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সরকার যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে তা সুরাহার চেষ্টা করা হবে। আমরা মনে করি, স্বাস্থ্য খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় চিকিৎসক রাজনীতির অবসান ঘটাতে হবে। যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে সে সরকারের লেজুড়বৃত্তির মাধ্যমে সুবিধা অর্জনের অচিকিৎসাসুলভ মনোভাবের ইতি ঘটাতে হবে।

সর্বশেষ খবর