শিরোনাম
রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ০০:০০ টা

সুন্দরবনের সম্ভাবনা

সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘের অঙ্গ সংগঠন ইউনেস্কোর কাছ থেকে মিলেছে মহামূল্যবান এই তকমা। বিশ্বের বৃহত্তম বাদাবন বা ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট- সুন্দরবন হতে পারে বাংলাদেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র। পর্যটন আয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকার বিড়ম্বনার অবসান ঘটানো সম্ভব সুন্দরবনকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার মাধ্যমে। এ জন্য প্রয়োজন যাতায়াতের উন্নতমানের ব্যবস্থা, পর্যটকদের থাকা-খাওয়া ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। সুন্দরবনকে পর্যটক-বান্ধব এলাকায় পরিণত করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি প্রকল্প প্রণয়ন করা হলেও আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতা আর লালফিতার দৌরাত্দ্যে তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে উঠছে। ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের বিশ্বের বৃহত্তম বাদাবন এই সুন্দরবন ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ৬ বার রূপ বদলায়। খুব ভোরে এ বনভূমি আবিভর্ূত হয় এক রূপ, দুপুরে তার চেহারা অন্যরকম। পড়ন্ত বিকালে এই বনভূমি গ্রহণ করে আরেক রূপ। সন্ধ্যায় নেয় ভিন্ন সাজ। মধ্য ও গভীর রাতের সুন্দরবনের সৌন্দর্য আরেক রকম। আর চাঁদনী রাতের রূপের বর্ণনা দেওয়া যে কারোর পক্ষে কঠিন। সুন্দরবনের মোহনীয় সাজ পর্যটকদের মোহিত করে। কচিখালী সমুদ্রসৈকত থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার সুযোগ তো রয়েছেই। সুন্দরবন অনন্য রূপ ধারণ করেছে সুন্দরী, গেওয়া, পশুর, গরান, গোলপাতাসহ ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল ও ১৩ প্রজাতির অর্কিডের সমরোহে। এখানকার স্থলভাগে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার- বাঘকুলের মধ্যে যাকে সেরা হিসেবে ভাবা হয়। সুন্দরবনের হরিণ এমন কি বানরও সত্যিকার অর্থে অনন্য। লোনা পানির কুমির, বিশাল আকারের অজগর, সারা বিশ্বে বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতী ডলফিনসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর বিচরণক্ষেত্র এই দৃষ্টিনন্দন বাদাবন। এ কারণে দেশি-বিদেশি হাজারও পর্যটক সৌন্দর্যের ক্ষুধা মেটাতে এখানে ছুটে আসেন। কিন্তু ভ্রমণ আরও চিত্তাকর্ষক করতে অবকাঠামোসহ অন্যান্য সুবিধা আজও গড়ে ওঠেনি। ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘ সুন্দরবনের ১ লাখ ৩৯ হাজার ৭০০ হেক্টর এলাকাকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা করে। সুন্দরবনের ওপর প্রায় ৩০ লাখ মানুষ নির্ভরশীল। এর উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়া হলে বিশাল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনই শুধু নয়, আরও হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত হবে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুকীর্তিও তুলে ধরা হবে এই দেশপ্রেমসুলভ পদক্ষেপের মাধ্যমে।

সর্বশেষ খবর