রবিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৪ ০০:০০ টা

গুডবাই জাগরণ মঞ্চ, এবার জাগরণ লীগ!

কাজী সিরাজ

গুডবাই জাগরণ মঞ্চ, এবার জাগরণ লীগ!

বেশি দিনের কথা নয়। এই তো মাত্র ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। পাঁচ তারিখ থেকেই উত্তাল শাহবাগ। লাখো কণ্ঠে বুলন্দ আওয়াজ- একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে কোনো আপস চলবে না, তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই, মৃত্যুদণ্ড চাই। মুহূর্তে গর্জে উঠেছিল ঢাকা, সমগ্র বাংলাদেশ। প্রেক্ষাপটটাও সবার জানা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতাদের বিচার চলছিল। ইতোমধ্যে ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হলো বাচ্চু রাজাকার (অনুপস্থিতিতে)। ব্যত্যয় ঘটল জামায়াতের শীর্ষ নেতা আবদুল কাদের মোল্লার বেলায়। তাকে দেওয়া হলো যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। রায় ঘোষণার পর সারা দেশে যেন বিজয়ীর হাসি হেসেছে জামায়াত, তাদের নেতা-কর্মীরা। রায় শুনে আদালত কক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় হাস্যোজ্জ্বল মুখে 'ভি' চিহ্ন দেখিয়ে গেলেন কাদের মোল্লা। কাদের মোল্লার দেখানো 'ভি' চিহ্ন এবং জামায়াতিদের চাপা উল্লাস ক্রোধের আগুন ধরিয়ে দিল নতুন প্রজন্মের কিছু দেশপ্রেমিক তরুণের বুকে। তাদের কোনো দল ছিল না, সংগঠন ছিল না। ছিল শুধু আধুনিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়, শাহবাগ চত্বরে তাদের প্রতিবাদী মানববন্ধনে জনস্রোতের তরঙ্গ এভাবে আছড়ে পড়বে প্রতিবাদী তরুণরাও হয়তো তা ভাবেনি। একটি সৎ ও ন্যায্য আবেগতাড়িত আহ্বানে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ভোর না হতেই কয়েক লাখ লোকের সমাবেশ ইতিহাস গড়ে দিল। স্বতঃস্ফূর্তভাবে শিশু-কিশোর, যুব-তরুণ, নারী-পুরুষ, আবালবৃদ্ধবনিতার এমন সমাবেশ বাংলাদেশে আমাদের জীবনে কখনো দেখিনি। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত অবিরাম রাজপথে এমন জনসমুদ্রের উত্তাল গর্জনকে উপেক্ষা করতে পারেনি সরকার। ধারণাটা এমন ছিল যে, সরকার রাজনৈতিক সুবিধা লাভের আশায়, বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াত ঐক্যে আর সখ্যে ফাটল ধরিয়ে জামায়াতের ভোটব্যাংক দখল করার লোভে তলে তলে জামায়াতের সঙ্গে আপস-অাঁতাত করে ফেলেছে। জামায়াত-শিবিরের মধ্যে স্বস্তি, উচ্ছ্বাস এবং সরকারের মৌনতা এ ব্যাপারে সন্দেহ আরও বাড়িয়ে দেয়। জাগরণ মঞ্চের উত্থানে সরকার ভীত হয়ে পড়ে। তাই শুরু থেকেই সরকার ওই জাগরণ মঞ্চকে জাগরণ লীগ বানানোর চেষ্টা করে। ১৮ দলীয় জোটের আন্দোলন, বিশেষ করে জামায়াত-শিবিরের বেপরোয়া সহিংস লড়াইয়ে সরকারের অন্তরাত্দা তখন কাঁপছিল। এর মধ্যে জাগরণ মঞ্চকে সরকার মনে করল 'গোদের উপর বিষফোঁড়া' হিসেবে। তারা কৌশল নিয়েছিল দুটি_ এক. একে গুঁড়িয়ে দাও, দুই. একে দখল কর। বিএনপি যদি দলগতভাবে জাগরণ মঞ্চের স্বপক্ষে দাঁড়াত, ওই মঞ্চ অাঁতুড়ঘরেই 'ওয়াশড আউট' হয়ে যেত হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে পরিচালিত 'অপারেশন ফ্ল্যাশ আউট'-এর মতো কোনো অভিযানের মাধ্যমে। বিএনপির 'রাজনৈতিক পণ্ডিতদের' ভুলে সরকারকে সে পথে যেতে হয়নি। মঞ্চ প্রতিষ্ঠার পঞ্চম দিনে জাগরণ মঞ্চের সঙ্গে একাত্দতা প্রকাশের দুই দিন পরই অবস্থান পাল্টে ফেলে বিএনপি। জাগরণ মঞ্চকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলে তারা। মঞ্চের নেতা-সংগঠক-কর্মী-সমর্থকদের নষ্ট-ভ্রষ্ট বলে কু-মন্তব্য করেন দলের নেত্রী। এতে বিএনপির দুটি মারাত্দক ক্ষতি হয়ে যায়-

এক. স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ আওয়ামী লীগের প্রচারণাকেই সত্য বলে ধরে নেয় যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তারাও চায় বলে বিএনপি নেতারা যা বলেন, তা তাদের মনের কথা নয়, তারা আসলেই এই বিচার চায় না এবং বিচার প্রক্রিয়াকেও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, আন্তর্জাতিক মানের অভাব, অস্বচ্ছ ইত্যাদি কথামালার প্যাঁচে ফেলে বাধাগ্রস্ত করতে চায়। এর ফলে দলটি আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রগতিশীল গণতন্ত্রীদের একটি বড় অংশের সমর্থনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এটা যে তাদের দলের জন্য কত বড় ক্ষতি তা তারা বোঝে কিনা সে ব্যাপারেও সন্দেহ করেন তাদের বহু অনুরাগী। তারা বোধ হয় এটা বুঝতে চান না যে, জামায়াত তাদের প্রয়োজনে বিএনপির নিরঙ্কুশ সমর্থন কাজে লাগাতে চায় কিন্তু বিএনপির প্রয়োজনে তাদের নিরঙ্কুশ সমর্থন দিতে হিসাব কষে তাদের দলীয় লাভালাভ। উপজেলা নির্বাচনে তো তার প্রমাণ পাওয়াই গেল। অনেক উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী প্রায় সমান সমান ভোট পেয়েছে- যেখানে বিএনপি প্রার্থীর কোনো খবরই নেই- বিজয়ী হওয়া এই বার্তাই দেয় যে, জামায়াতে ইসলামী বিএনপির বিশ্বস্ত মিত্র নয়।

দুই. কার্যত ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে জাগরণ মঞ্চের ভূমিকা বিএনপির প্রতিকূলেই গেছে। এ জন্য জাগরণ মঞ্চের ভূমিকার চেয়ে বিএনপির ভুল ও দোষই বেশি। তারা সরাসরি মঞ্চের বিরোধিতা করতে থাকেন তখন থেকেই। বর্ণচোরা জামায়াতি বা জামায়াতপন্থি বুদ্ধিজীবীদের কেউ কেউ বিভিন্ন টকশোতে এবং লেখালেখিতে এমন ভাব দেখিয়েছেন যে, জাগরণ মঞ্চের 'নাস্তিকদের' মুখের কাছে পেলে পানি ছাড়াই গিলে ফেলবেন। অথচ যারা এসব কথা বেশি বলেছেন, 'নাস্তিক' 'নাস্তিক' করেছেন (একজন মুসলমান আরেকজন মুসলমানকে কিছু না জেনেশুনে নাস্তিক ডাকা কি সমীচীন?) তাদের যারা চেনেন, তারা জানেন যে, এরা কখনো পশ্চিমদিকে ফিরে মাথানত করেছে কিনা সন্দেহ। অথচ বিএনপি যদি শুরু থেকে জাগরণ মঞ্চের পক্ষে দাঁড়াত, এর আয়ুষ্কাল সরকার দুই সপ্তাহও অতিক্রম করতে দিত না। জাগরণ মঞ্চের আয়ুবৃদ্ধি বিএনপির জন্য ক্ষতির কারণ তো কিছুটা হলেও হয়েছে। তা হতো না যদি উলঙ্গভাবে তারা জামায়াত-হেফাজতের মতো জাগরণ মঞ্চের প্রকাশ্য বিরোধিতা না করত। বিএনপি পাশ থেকে সরে যাওয়ায় শাসক লীগ জাগরণ মঞ্চকে ষোলআনাই তাদের কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। সফলও হয়েছে তারা।

এটা সবাই লক্ষ্য করেছেন যে, জাগরণ মঞ্চকে নিয়ন্ত্রণে আনার বা বাগে আনার জন্য সরকার নানা কৌশল অবলম্বন করেছে। প্রথম ক'দিন সরকারের অনেক প্রভাবশালী নেতা-মন্ত্রীকে বক্তৃতা করতে না দিয়ে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল, কাউকে কাউকে মঞ্চকর্মীরা পানির বোতল ছুঁড়ে মেরেছিল, এমন কি ছাত্রলীগের মস্তবড় নেতাকেও মঞ্চের ওপর থাকতে দেওয়া হয়নি; বোঝা গিয়েছিল, এ মঞ্চ প্রকৃতই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী একটি নির্দলীয় মঞ্চ। সরকারের নীতিনির্ধারকদের দস্তুর মতো ঘাম ঝরার দশা। হঠাৎ দেখা গেল মঞ্চের ওপরে-নিচে চারদিকে ঘুর ঘুর করতে লাগলেন নাট্য সংগঠক নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, কর্নেল তাহেরের ভাই সাবেক জাসদ গণবাহিনী নেতা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার নিযুক্ত ভিসি (শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে পদ ছেড়ে দিতে হয়েছে তাকে) অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ. আ. ম. স আরেফিন সিদ্দিক, পিজির পরিচালক অধ্যাপক প্রাণ গোপাল, রামেন্দু মজুমদার, হাসান ইমাম প্রমুখ লীগপন্থি বুদ্ধিজীবী সংস্কৃতিসেবী। নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু তো সারাক্ষণ মঞ্চের ওপরেই ছিলেন ডা. ইমরান এইচ সরকারের একেবারে ঘাড়ের সঙ্গে লেগে। অনেক সময় দেখা গেছে, বক্তৃতার সময় ইমরানকে পেছন থেকে নাটকের মতো প্রমোট করছেন। সেই ডা. ইমরানকে পুলিশ চরমভাবে লাঞ্ছিত করল, সরকারি দলের ক্যাডার এবং পুলিশ মিলে জাগরণ মঞ্চের নেতা-কর্মী-সংগঠকদের রাস্তায় ফেলে এভাবে বেধড়ক পেটাল কিন্তু এসব শাসকদলীয় রথী-মহারথীরা এখন কোথায়? একমাত্র দেশের প্রবীণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক কামাল লোহানী ছাড়া কেউ তাদের পাশে নেই। এরা এখন জাগরণ মঞ্চের পাশে নেই কেন? জবাব একেবারেই সহজ। আদর্শের তাগিদে নয়, সরকারের বিলানো (পদকসহ) নানা প্রকার উপকার ও সুবিধাভোগী ব্যক্তিরা মঞ্চের পক্ষে তখন দাঁড়িয়েছিলেন সরকারের প্রয়োজনে, সরকারের ইচ্ছায়, এখন সরেও গেছেন সরকারের প্রয়োজনে ও ইচ্ছায়।

জাগরণ মঞ্চের নেতা-কর্মী-সংগঠকদের ওপর বর্বরোচিত হামলার পেছনে সরকারের উদ্দেশ্যটা কি? সরকারের কথা বললাম এ কারণে যে, সরকারি ইন্ধন-উসকানি ছাড়া শাসক লীগের ক্যাডার এবং পুলিশ এ ধরনের আচরণ অন্তত জাগরণ মঞ্চের সঙ্গে করতে পারে না। শাসক লীগের ছাত্র সংগঠনের এক নেতা তো বলেই দিয়েছেন, জাগরণ মঞ্চের আর প্রয়োজন নেই।

হামলার সূত্র এবং এর অন্তর্নিহিত কারণ শোনা যায় মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারের মুখেই। ৩ এপ্রিল শুক্রবার মঞ্চের নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশের বর্বরোচিত হামলা সম্পর্কে তিনি বলেন, "গণজাগরণ মঞ্চের কর্মসূচি সরকারের বিরুদ্ধে চলে যাওয়ায় পরিকল্পিতভাবে সরকার তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী ও পুলিশ দিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। 'লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা' কর্মসূচিতে ইসলামী ব্যাংকের টাকা নেওয়ার প্রতিবাদ করাসহ যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে সরকারের অাঁতাতের চেষ্টার বিরোধিতা আমরা করি। এতে সরকার আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়। সরকারের ভেতরের একটি মহল গণজাগরণ মঞ্চের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে। তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে চাইছে। মঞ্চ প্রতিষ্ঠার পর থেকে একটি মহল আমাদের চরিত্র হননের চেষ্টা করে আসছিল। তারই ধারাবাহিকতা আজকের এই হামলা।" (দৈনিক মানবজমিন, ৪ এপ্রিল-২০১৪)। মঞ্চ মুখপাত্রের এ বক্তব্যের মাধ্যমে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে, লীগ সরকার গণজাগরণ মঞ্চের কার্যক্রম আর সহ্য করতে চাইছে না। 'মঞ্চ ভেঙে' গুঁড়িয়ে দিতে চাইছে সরকার। শাহবাগ শুধু নয়, দেশের কোনো 'বাগেই' জাগরণ মঞ্চের সরব উপস্থিতি চায় না সরকার।

২০১৪ সালের এপ্রিলে এসে গণজাগরণ মঞ্চ আবার প্রমাণ করল, তারা কোনো দলের নয়, এ মঞ্চ একাত্তরের, এ মঞ্চ দেশের। সরকারি কূটকৌশলের কাছে তারা হয়তো কিছুটা পরাভূত হয়েছিল, আবার তারা দেশের প্রয়োজনে একাত্তরের টানে জেগে উঠেছে, ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সরকার এই বিশাল শক্তিকে ক্যাশ করতে চেয়েছিল। সম্পূর্ণভাবে সফল না হয়ে এখন 'ভানুমতীর খেল খেলছে', তছনছ করে দিতে চাইছে মঞ্চকে। ডা. ইমরানের চরিত্র হননের মাধ্যমে চেষ্টা করছে মঞ্চ ভেঙে দিতে। কিন্তু সরকার ভাঙার চেষ্টা করলেও মঞ্চের চেতনা ধ্বংস করতে পারবে বলে মনে হয় না।

উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকার-জামায়াত তলে তলে একটা সমঝোতা প্রয়াস নিয়ে গুঞ্জন উঠেছিল, নির্বাচনে জামায়াতের বিস্ময়কর সাফল্য গুঞ্জনকে সত্যে পরিণত করে। ৩৬ উপজেলায় চেয়ারম্যান এবং ১২০ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়ে তারা তাক লাগিয়ে দিয়েছে। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের মৈত্রীর বন্ধন প্রকাশ্য। কিন্তু ফলের চিত্র বলছে, জামায়াত প্রাপ্ত এক-চতুর্থাংশ আসনে জয় এসেছে আওয়ামী লীগ-জামায়াত অাঁতাত বা সমঝোতার মাধ্যমে। দেখা যাচ্ছে, জামায়াত প্রাপ্ত কিছু চেয়ারম্যানের জায়গায় ভাইস চেয়ারম্যান পেয়েছে আওয়ামী লীগ, আবার অনেক আসনে ভাইস চেয়ারম্যান পেয়েছে জামায়াত, সেখানে সব চেয়ারম্যান জিতেছে আওয়ামী লীগের। কিন্তু এটা তো হওয়ার কথা নয়, সব জায়গায় চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান পদ তো ভাগাভাগি হওয়ার কথা বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে। উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতের ভোটব্যাংক ভোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগকে লোভাতুর করে তুলেছে। তারা একাত্তরের চেতনা, আদর্শের কথা আর মনে রাখার তাগিদ অনুভব করছে না। মুনতাসির মামুন বলেছেন, টাকার কাছে আদর্শ বিক্রি হয়ে গেছে। তার সঙ্গে আমি আরেকটু যোগ করে বলতে চাই, ভোটের রাজনীতির কাছে আদর্শের রাজনীতি পরাভূত হয়েছে। একটি অস্বাভাবিক ও ভোটারবিহীন একপক্ষীয় নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত বর্তমান সরকার নৈতিক অবৈধতার সংকটে ভুগছে। তাদের ওপর একটি অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের চাপ বাড়ছে দিন দিন- জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সব মহল থেকে। ভারতের আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য ফল লীগ সরকারের জন্য নতুন শঙ্কা সৃষ্টি করেছে। খড়কুটো ধরে হলেও বেঁচে থাকার চেষ্টার মতো লীগ সরকারও জামায়াতের সমর্থন নিয়ে টিকে থাকতে চাইছে বলে মনে হয়। এখন জামায়াতের সঙ্গে জোট করে ভোট করার অপরাধে বিএনপি ও খালেদা জিয়াকে গালমন্দ করার কোনো নৈতিক অধিকার নেই আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার, তারা মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। জাগরণ মঞ্চের নেতা-কর্মী-সংগঠকদের ওপর হামলার পেছনে এই রাজনৈতিক সমীকরণই প্রধান বলে মনে হয়। সংগঠনের নেতৃত্বের কোন্দল, ডা. ইমরানের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ, মঞ্চকে রাজনৈতিক দল করার কারও পরিকল্পনা ইত্যাদি অভিযোগ অজুহাত মাত্র। এসব তো সাংগঠনিকভাবেই আলোচনা করা যেত। সংবাদ সম্মেলন করার কী প্রয়োজন ছিল?

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট।

ই-মেইল :  [email protected]

 

সর্বশেষ খবর