রবিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৪ ০০:০০ টা

নদী শাসনের ভাবনা

নদী শাসন ও নগরায়নকে এক সূত্রে বাঁধতে চাচ্ছে সরকার। এ ব্যাপারে একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের প্রস্তুতি চলছে। মহাপরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হলে বড় বড় নদীর বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল ভরাট করে সেখানে নৌবন্দর, নগর, শিল্প ও বাণিজ্য এবং পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। স্মর্তব্য, বাংলাদেশের বেশ কিছু নদী অস্বাভাবিক রকম প্রশস্ত। সে তুলনায় নদীর গভীরতা কম। এ কারণে পদ্মা মেঘনা যমুনার মতো বিশাল নদীতেও নাব্য সংকট দেখা দেয়। এসব নদীর কোথাও কোথাও প্রশস্ততা ২০-২২ কিলোমিটার হলেও গভীরতা ৮-৯ ফুট। শুষ্ক মৌসুমে নাব্য সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করে। নৌপথে পণ্য পরিবহন খরচ কম হওয়া সত্ত্বেও নাব্য না থাকায় নৌ পরিবহনের আওতা ক্রমান্বয়ে কমছে। এ সমস্যার সমাধানে বড় নদীগুলোর তীর ভরাট করে নগরায়ন ও শিল্পায়নের উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি নদীগুলোর গভীরতা বৃদ্ধির কথা ভাবা হচ্ছে। নদীর প্রশস্ততা কমিয়ে নদীর গভীরতা বাড়ালে নাব্য ধরে রাখা যেমন সম্ভব হবে, তেমন শিল্পায়ন ও নগরায়নের জন্য প্রয়োজনীয় জমি পাওয়াও সহজলভ্য হবে। তবে এ ধরনের পরিকল্পনা দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয়বহুল। নদীর পাড় টেকসইভাবে বাঁধানো এবং নদীকে দূষণমুক্ত রাখা সম্ভব হলে এ মহাপরিকল্পনা দেশের জন্য কল্যাণ রয়ে আনবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী নদী শাসন সম্ভব হলে বন্যা ও নদী ভাঙনের হাত থেকে অনেকাংশে যেমন রক্ষা পাওয়া যাবে তেমন নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা পাবে। মহাপরিকল্পনাকে সামনে রেখে যমুনা নদীর তীরবর্তী ১৮ কিলোমিটার এলাকাকে পাইলিংয়ের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। ওই এলাকার নদীর প্রশস্ততা তিন-চার কিলোমিটারে সীমাবদ্ধ রেখে নদী গড়ে ৬০ ফুট গভীর করা হবে। নদী থেকে উঠানো পলি দিয়ে ভরা হবে দুই পাড়। সেখানে আবাসন প্রকল্প, শিল্পবাণিজ্য কেন্দ্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ইকোপার্কসহ নগরায়ন করা হবে। এই প্রকল্প সফল হলে পদ্মা ও মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষেও নগরায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। আমাদের মতে, তাত্তি্বক বিবেচনায় সরকারের মহাপরিকল্পনাটি বেশ উৎসাহ উদ্দীপক হলেও এটির ভালো-মন্দ যথাযথ বাস্তবায়নের ওপর নির্ভরশীল। পরিকল্পনা অনুযায়ী এগুনো সম্ভব হলে নদী শাসন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আবাসন এবং শিল্পায়নের জন্যেও বিশাল পরিমাণ জায়গার সংস্থান হবে।

সর্বশেষ খবর