শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৪ ০০:০০ টা

ট্যানারি শিল্প স্থানান্তর

রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সাভারের হেমায়েতপুরে ট্যানারি শিল্প সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে। ১১ বছর আগে হেমায়েতপুরের হরিণধরায় আনুষ্ঠানিকভাবে চামড়া শিল্পনগরী প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তারপর ১১ বছর কেটে গেলেও চামড়া শিল্পনগরী আদৌ চালু হবে কিনা তা এখনো সংশয়ের দোলাচলে দুলছে। চামড়া শিল্পনগরীতে ২৬৫টি কারখানা স্থাপনের জন্য স্বল্পমূল্যে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির লাইন স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। চামড়া শিল্পের তরল বর্জ্য পরিশোধনে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বসানো হয়েছে। কিন্তু মামলার কারণে আটকা পড়েছে ৪৪৫ কোটি টাকার এ প্রকল্প। সময় মতো সাভারের চামড়া শিল্পনগরী চালু না হওয়ায় একদিকে কোটি কোটি টাকার মেশিনপত্র অব্যবহৃত অবস্থায় নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে হাজারীবাগে চামড়া শিল্প বিদ্যমান থাকায় রাজধানীর বিশাল এলাকার পরিবেশ দূষণের শিকার হচ্ছে। ট্যানারির তরল-কঠিন বর্জ্য, ধোঁয়া, উৎকট দুর্গন্ধে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন, সৃষ্টি করছে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ ঝুঁকি। চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রায় আড়াইশ কারখানা থেকে প্রতিদিন ২২ হাজার ঘনমিটার ক্রোমিয়াম, সালফার, অ্যামোনিয়াসহ ক্ষতিকর নানা বর্জ্য নির্গত হয়। বাতাস আর পানিতেও ছড়িয়ে আছে ট্যানারির বিষ। নানাভাবে এ বিষে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। হাজারীবাগ, লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর, জিগাতলা এবং ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরের কয়েকটি এলাকার ৩০ লক্ষাধিক মানুষ এ বিষে সরাসরি আক্রান্ত। বর্জ্য-বিষের সঙ্গে সহাবস্থান করে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ট্যানারি শিল্পে কর্মরত লক্ষাধিক শ্রমিক। তাদের অনেকেরই শারীরিক অবস্থা শোচনীয়, অন্যরাও আছে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখোমুখি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্যানারিতে ব্যবহৃত রাসায়নির দ্রব্য মানবদেহে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দেয়। ইতোমধ্যে ওই এলাকায় ক্যান্সার, চর্মরোগসহ নানা রোগবালাই ছড়িয়ে পড়েছে। এ বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় হাজারীবাগ থেকে চামড়া শিল্প স্থানান্তর। সাভারে এ উদ্দেশ্যে চামড়া শিল্পনগরী স্থাপনের পরও স্থানান্তরে সময়ক্ষেপণ দুর্ভাগ্যজনক।

সর্বশেষ খবর