শনিবার, ১৭ মে, ২০১৪ ০০:০০ টা

লঞ্চ দুর্ঘটনা

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার দৌলতপুরের কাছে মেঘনা নদীতে লঞ্চডুবিতে এ পর্যন্ত ৩২ জন যাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বেশ কিছু যাত্রী নিখোঁজ থাকায় আশঙ্কা করা হচ্ছে প্রাণহানির সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। পটুয়াখালীর গলাচিপায় লঞ্চ দুর্ঘটনার চার দিন না পেরুতেই আরেকটি লঞ্চ দুর্ঘটনা জনমনে অস্বস্তি ও উদ্বেগের ছায়া বিস্তার করছে। কাল বৈশাখী ঝড়ে লঞ্চটি ডুবে যায় বলে সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত খবরে বলা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, নৌযানের নকশা ও নির্মাণে ত্রুটি, চালকদের অদক্ষতা, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এবং আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ না করার কারণে বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে। লঞ্চ মালিকরা এ ব্যবসার মাধ্যমে ফুলেফেঁপে উঠলেও যাত্রীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে তাদের কোনো মনোযোগ আছে বলে মনে হয় না। শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ লঞ্চ অদক্ষ চালকদের দ্বারা চালানো হয়। ঢাকা-চাঁদপুর-বরিশাল রুটে চলাচলকারী শতাধিক লঞ্চের দিকে নজর দিলেই বিষয়টা স্পষ্ট হবে। এ রুটে সার্টিফিকেটধারী দক্ষ চালকের সংখ্যা মাত্র ১৩ জন। লঞ্চ চালনার ক্ষেত্রে যে নিয়মনীতি অনুসরণ করতে হয় অদক্ষ চালকরা তা প্রায়শই উপেক্ষা করেন। ফলে সামান্য ঝড় কিংবা অন্য কোনো কারণে লঞ্চডুবি নিয়তির লিখনে পরিণত হয়। বৈশাখ দুর্যোগপ্রবণ আবহাওয়ার মাস হিসেবে পরিচিত। অদক্ষ চালকদের পক্ষে আবহাওয়ার মতিগতি উপলব্ধি করা এবং সে অনুসারে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, প্রতিটি লঞ্চ দুর্ঘটনার পর দুর্ঘটনার কারণগুলো তদন্ত কমিটির রিপোর্টে তুলে ধরা হলেও প্রতিকারের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। ঢাকা-চাঁদপুর-বরিশাল রুটে মাত্র চার দিনের মধ্যে দুটি লঞ্চডুবিকে নিছক দুর্ঘটনা বলে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। কেন বারবার লঞ্চ দুর্ঘটনা ঘটছে, কেন লঞ্চ যাত্রীদের অসহায়ভাবে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে, এর সুরাহা হওয়া উচিত। নৌযান চলাচলের মৃত্যু উপত্যকা বলে পরিচিত গজারিয়ায় লঞ্চ দুর্ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের স্বজনদের প্রতি আমাদের শোক ও সান্ত্বনা। ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে_ আমরা এমনটিই দেখতে চাই।

সর্বশেষ খবর