বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

হুমকির মুখে সুন্দরবন

সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে সাড়ে তিন লাখ লিটার জ্বালানি তেলবাহী ট্যাঙ্কার দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ায় নদীজুড়ে তেল ছড়িয়ে পড়েছে। বাদাবনের জীববৈচিত্র্যের জন্য নদীতে ভাসমান তেল বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নদী বা সাগরে ছড়িয়ে পড়া জ্বালানি তেল দ্রুত সরিয়ে সংশ্লিষ্ট জলাশয়কে দূষণ প্রক্রিয়া থেকে রক্ষার কোনো প্রযুক্তি বাংলাদেশের হাতে নেই। আশঙ্কা করা হচ্ছে, নদীতে ছড়িয়ে পড়া জ্বালানি তেল জোয়ার ভাটায় সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। তেলের স্তর পানির স্বাভাবিক অক্সিজেন প্রবাহে যেহেতু বাধা সৃষ্টি করে, সেহেতু এর প্রভাবে সুন্দরবন এলাকার গাছপালার যেমন মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে তেমনি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, কচ্ছপ, ডলফিন, কাঁকড়া, শামুকসহ অন্যান্য জলজপ্রাণীর জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। সুন্দরবন এলাকায় ভিড় করা অতিথি পাখির জন্যও বিপদ সৃষ্টি করতে পারে নদীতে ভাসমান তেলের স্তর। স্মর্তব্য, অতীতে বেশ কয়েকবার চট্টগ্রাম এলাকায় সমুদ্রের পানিতে তেল ছড়িয়ে পড়ায় মাছ ও কচ্ছপসহ বেশ কিছু সামুদ্রিক প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশের নদী বা সাগরে ছড়িয়ে পড়া তেলের স্তর দ্রুত অপসারণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এ ক্ষেত্রে প্রকৃতির দয়ার ওপর আমাদের নির্ভর করতে হচ্ছে। ভাটার প্রভাবে তেলের স্তর সাগরমুখী হলে সুন্দরবন ও সংলগ্ন এলাকার জীববৈচিত্র্য বড় বিপর্যয় থেকে হয়তো রক্ষা পাবে। তবে সে ক্ষেত্রেও সাগরপ্রান্তে মাছসহ জলজপ্রাণীর যে ক্ষতি হবে তা দুর্ভাগ্যজনক। ১০ হাজার বর্গকিলোমিটারের সুন্দরবন বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। বিশ্বের এই বৃহত্তম বাদাবনের সংরক্ষণে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে কিনা এ ব্যাপারে জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা ইউনেস্কোর উদ্বেগও রয়েছে। প্রকৃতিবিদদের বিরোধিতা সত্ত্বেও সুন্দরবন সংলগ্ন রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের তোড়জোড় যখন চলছে তখন এ বাদাবন সংলগ্ন নদীতে তেলের ট্যাঙ্কার ডুবির ঘটনা সুন্দরবনের অস্তিত্ব সম্পর্কে যত্নবান হওয়ার তাগিদ সৃষ্টি করেছে। আমরা আশা করব, শ্যালা নদীতে ছড়িয়ে পড়া তেলের স্তর থেকে সুন্দরবনকে রক্ষায় সম্ভাব্য সব উপায় অনুসরণ করা হবে। এ ঘটনা বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে বিবেচিত সুন্দরবনের অস্তিত্বের জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে, এমন সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে সরকারকে বিরত থাকতে উদ্বুদ্ধ করবে এমনটিও কাম্য।

 

 

সর্বশেষ খবর