বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

বিদেশে অর্থ পাচার

বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছরই বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে বিপুল অঙ্কের অর্থ। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) হালনাগাদকৃত হিসাব অনুসারে ২০১২ সালে বাংলাদেশ থেকে অন্তত ১৭৮ কোটি ডলার বা ১৩ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা অবৈধভাবে বিভিন্ন দেশে পাচার হয়েছে। এর আগের বছর পাচার হয়েছিল ৬০ কোটি ডলার। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ৪ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা। ২০১২ সালে যে পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে তা দেশের স্বাস্থ্য খাতের বাজেটের চেয়েও বেশি। নতুন প্রাক্কলন অনুসারে এক দশকে অর্থাৎ ২০০৩-২০১২ মেয়াদে বাংলাদেশ থেকে অন্তত এক হাজার ৩১৬ কোটি ডলার অর্থাৎ এক লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এই সময়কালে গড়ে প্রতি বছর পাচার হয়েছে ১৩১ কোটি ৬০ লাখ ডলার। আলোচ্য ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়েছে ২০০৬ সালে, যার পরিমাণ ২৬৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার। টাকার অঙ্কে ২০ হাজার ৫৭৬ কোটি। তারপর ২০০৭ সালে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ ২৪৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার বা ১৮ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা। জিএফআই বলছে, ট্রেড মিসইনভয়েসিং বা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে চালানের গরমিলের মাধ্যমেই বেশি পরিমাণ অর্থ উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। পণ্য আমদানি-রপ্তানির চালানে প্রকৃত মূল্য আড়াল করে একদিকে যেমন কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে মোটা অঙ্কের অর্থ দেশে না এনে বাইরেই রেখে দেওয়া হয়েছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ২০০৩-১২ সময়কালে উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে অন্তত ছয় লাখ ৬০ হাজার কোটি ডলার অবৈধ পথে বেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে ২০১২ সালেই বেরিয়ে গেছে ৯৯ হাজার ১২০ কোটি ডলার, যা কিনা আগের বছরের চেয়ে ৯ শতাংশ বেশি। প্রতিবেদন অনুসারে, ২০০৩-২০১২ সময়কালে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়েছে চীন থেকে, যার পরিমাণ এক লাখ ২৫ হাজার কোটি ডলার। বিদেশে অর্থ পাচারের দিক থেকে বাংলাদেশের স্থান ৫১তম। দেশ থেকে প্রতি বছর বিশেষত নির্বাচনের আগ মুহূর্তে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়ে যাওয়া উদ্বেগজনক ঘটনা। সুশাসন ও গণতন্ত্রায়নের অভাবে অনেকে ভয়ে পড়েও বিদেশে অর্থ পাচার করছে। কালো টাকার মালিকদের অর্থপাচারের পাশাপাশি নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় 'সাদা টাকা'ও পাচার হয়ে যাচ্ছে এবং অর্থনীতির জন্য বিসংবাদ ডেকে আনছে।

সর্বশেষ খবর