বুধবার, ৭ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

সাত দফা নয়- এক দফা

মেজর (অব.) মো. আখতারুজ্জামান

সাত দফা নয়- এক দফা

সবাই বলবে এই সাত দফা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের সময় লাগবে। এখানে কোনো সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি তাহলে কি আমরা এ সরকারকে মেনে নিলাম? জনমত গঠনের জন্য আন্দোলনের প্রয়োজন পড়ে কি? তবে কি আমরা আন্দোলনের পথ থেকে সরে আসার চেষ্টা করছি? আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনো সহিংস আন্দোলনের পক্ষে নই। আমি সাংগঠনিকভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে এগুনোর নীতিতে বিশ্বাসী।

সরকার সাত দফা মানবে না এবং মানারও কোনো সুযোগ নেই। দফাগুলোতে একটু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে এর স্ববিরোধিতা বেরিয়ে আসবে। আমাদের তাই এক দফার চিন্তা করতে হবে যার ইঙ্গিত ম্যাডাম সেদিন তার বক্তব্যে দিয়েছেন।

প্রথমে মুক্ত মন নিয়ে সাত দফা বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। সাত দফার প্রথম দফা হলো- 'জাতীয় নির্বাচন অবশ্যই নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে'। খুব সুন্দর এবং ন্যায্য কথা; কিন্তু কে কার কথা শোনে! প্রথম দফা দাবির দুটি অংশ। এক. জাতীয় নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে। দুই. নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। কিন্তু জাতীয় নির্বাচন কখন হবে সেই প্রশ্নের জবাব কে দেবে? আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কি ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? যদি হয়ে থাকে তাহলে আমি বলব আমরা আমাদের রাজনৈতিক সমস্যার একশ ভাগ সমাধান করে ফেলেছি। তাই এ মুহূর্তে আমাদের কোনো রাজনৈতিক বিরোধ নেই এবং সহিংস আন্দোলনেরও প্রয়োজনীয়তা শেষ। কিন্তু চরম রাজনৈতিক বাস্তবতা হলো বর্তমান সমস্যার মূলেই আছে আগামী নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে। সরকার পরিষ্কারভাবে বলে যাচ্ছে আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে ২০১৯ সালে যা আমরা ২০ দল মেনে নিচ্ছি না এবং ২০ দল অন্য কোনোও ঘোষণা করছে না বা ২০ দল কবে নির্বাচন চায় তাও সরকারের কাছে খোলাসা করে দাবিও করছে না। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যতক্ষণ পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে দুপক্ষের মতৈক্য না তৈরি হবে ততক্ষণ পর্যন্ত সাত দফা কোনো গুরুত্বই বহন করবে না এবং দাবিগুলো বাস্তবায়নের কোনো প্রয়োজনীয়তাও সরকার মনে করবে না।

প্রথম দাবির দ্বিতীয় অংশ হলো নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে; কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে মতৈক্য তৈরি না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এ দাবি তোলা আমার মতে অবিবেচনাপ্রসূত ও অপরিপক্ব। তবে ২০ দল যদি সরকারের পরিকল্পনা মোতাবেক আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০১৯ সালে করতে রাজি হয়ে যায় তাহলে আমি দুঃখিত আমার ভুল বোঝার জন্য। সে ক্ষেত্রে সন্দেহের অবকাশ নেই যে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে দাবিটি খুবই যৌক্তিক এবং সময়োপযোগী! কারণ এখন থেকেই শুরু না করলে সরকারকে এ দাবি আগামী চার বছরেও মানাতে বাধ্য না-ও করা যেতে পারে! তাই এ দেশের সচেতন রাজনৈতিক কর্মীরা মনে করে এই এক নম্বর দাবির মাধ্যমে বিএনপির মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা সরকারের দালালরা আন্দোলনের পিঠে ছুরিকাঘাত করে বিএনপিকে সরকারের ফাঁদে ফেলে দিয়েছে। এক নম্বর দাবির মাধ্যমে ২০১৯ সালের নির্বাচনের দিনক্ষণ মনে হয় চূড়ান্ত পরিণতির দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।

এবার আসি দ্বিতীয় দফার দাবিতে। দ্বিতীয় দফা দাবি হলো- 'নির্বাচন ঘোষণার আগেই প্রতিদ্বন্দ্বী সব পক্ষের সম্মতিতে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও বর্তমান আরপিও সংশোধন।' এ দাবির অন্যতম দাবি নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও বর্তমান আরপিও সংশোধনের ব্যাপারে সরকারের আপত্তির তো কোনো কারণ সাধারণভাবে থাকার কথা নয়। তা ছাড়া নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন তো চলমান নির্বাচনী প্রক্রিয়া যা সব জাতীয় নির্বাচনের আগেই সব সময়ই করা হয়ে থাকে। জাতীয় নির্বাচন ঘোষণার আগে প্রথমেই নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং পুনর্গঠিত নির্বাচন কমিশন নতুন জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করে। এটিই রীতি। এখন মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন হলো প্রতিদ্বন্দ্বী সব পক্ষের সম্মতি কি কখনো পাওয়া যাবে? যদি পাওয়া না যায় তখন কিভাবে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা হবে? প্রতিদ্বন্দ্বী সব পক্ষের সম্মতি যে কোনো সমস্যার দ্রুত সমাধান নিশ্চিত করে। আমরা যদি কোনো জাতীয় স্বার্থের ব্যাপারেও সবাই একমত হতে পারতাম তা হলে তো আমরা এতদিনে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু আমরা কি কখনই কোনো বিষয়ে সবাই মিলে সম্মত হতে পারছি? আমরা যেখানে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো ব্যাপারেই একমত হতে রাজি নই, এমনকি মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত জাতির পিতা ও মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা বা ঘোষকের ব্যাপারে দুই মেরুতে অবস্থান করি সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী সব পক্ষের সম্মতিতে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করার প্রস্তাব দিয়ে নিজেদের জাতির সামনে হেয়ই কি করা হচ্ছে না? যেখানে আমরা সব পক্ষের সম্মতির কথা বলছি সেখানে কি আওয়ামী লীগের সঙ্গে একমত হতে পারব? যদি আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে একমত হতে পারি তাহলে তাদের সঙ্গে আমাদের বিরোধ কোথায়? সব পক্ষের সম্মতির কথা বলে আমরা কি জাতির সামনে প্রবঞ্চনা করছি না? সম্মতির কথা বলে আমরা কি সরকারের কাছে নিজেদের নতি স্বীকার করে নিচ্ছি না! এ ধরনের অন্তঃসারশূন্য দাবি কি কোনো সরকার মেনে নেবে? এ রকম স্ববিরোধী দাবি নিয়ে আন্দোলন করতে গেলে সেই আন্দোলন ব্যর্থ ছাড়া আর কি-ই বা হতে পারে!

এখন দেখি তৃতীয় দফা যা হলো- 'নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে মন্ত্রিসভা ও জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলোর সম্মতিতে গঠিত নির্দলীয় সরকারের হাতে দায়িত্ব দেওয়া।' এ দাবিটি কি বাস্তবসম্মত এবং পালনযোগ্য? প্রথম কথা হলো নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবে কে? যদি এক নম্বর দাবি পূরণ হয়ে যায় তাহলে তো সরকারও থাকে না সংসদও থাকে না। তাছাড়া নির্বাচন তফসিল ঘোষণা করবে দুই নম্বর দাবি পূরণের মাধ্যমে গঠিত নির্বাচন কমিশন, সেখানে মন্ত্রী পরিষদ থাকবে কী করে এবং সংসদ থাকা অবস্থায় নির্বাচনের তারিখইবা ঘোষণা হবে কিভাবে? কাজেই এক নম্বর দাবি পূরণ হলে তিন নম্বর দাবির কোনো প্রয়োজনীয়তা থাকে না।

চার নম্বর দাবি হলো- 'ভোটের তারিখ ঘোষণার পর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সারা দেশে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা।' এ দাবিটি তো এ মুহূর্তে অপ্রয়োজনীয়, কারণ সশস্ত্র বাহিনী তো নিয়োগ করা হবে এক দফা দাবি বাস্তবায়নের মাধ্যমে গঠিত নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের দায়িত্ব। তাহলে এ দাবি এখন উঠানোর কি যৌক্তিকতা? এটি বরং সব দলের আলোচনার এজেন্ডা বা তৎপরবর্তী সিদ্ধান্ত হতে পারে। তা ছাড়া সব প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষের তথাকথিত সম্মতিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয় তাহলে নির্বাচনও তো সব প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষের সম্মতিতেই হবে তাহলে সেখানে সশস্ত্র বাহিনী লাগবে কেন? দাবিগুলো খুবই গোলমেলে এবং অর্থবহ! এ দাবিটি অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে!

পাঁচ নম্বর দাবি হলো- 'নির্বাচনের প্রচার শুরুর আগেই সন্ত্রাসী গ্রেফতার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালানোর পাশাপাশি 'চিহ্নিত ও বিতর্কিত' ব্যক্তিদের প্রশাসনের দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা। এ দাবিটিও এ সরকারের কাছে কতটুকু যুক্তিপূর্ণ হচ্ছে সেটিও বিবেচনা করা উচিত ছিল। প্রথম দাবি বর্তমান সরকার মেনে নিলে এ কাজটি তো করবে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার।

ছয় নম্বর দাবি হলো- "সব রাজবন্দীকে মুক্তি এবং রাজনৈতিক নেতাদের নামে থাকা 'মিথ্যা ও হয়রানিমূলক' মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।" এক নম্বর দাবি আদায় করতে পারলে তো কোনো রাজবন্দীই থাকবে না। কাজেই এ দাবিটির যৌক্তিকতাও বোধগম্য নয়। এ দাবিটির মাধ্যমে যারা দাবিগুলো ম্যাডামের কাছে উপস্থাপন করেছে তাদের সম্বন্ধে সচেতন মহলে গভীর সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে।

সাত নম্বর দাবি হলো- "এ সরকারের সময়ে 'বন্ধ করে দেওয়া' সব সংবাদপত্র ও টেলিভিশন খুলে দিতে হবে এবং আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানসহ আটক সব সাংবাদিককে মুক্তি দিতে হবে।" এ দাবিটি কি এ সরকারের কাছেই করা হচ্ছে? যদি তাই হয় তাহলে 'এ সরকারের সময়' কথাটি ব্যবহার করা হলো কোন উদ্দেশ্যে যা সচেতন মানুষের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ দাবিটির বেলায়ও বলা যায় এক নম্বর দাবিটি আদায় করতে পারলে এ দাবিটির প্রয়োজনীয়তা থাকে না।

সাতটি দাবি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে প্রথম দাবিটি আদায় করতে পারলে বাকি ছয়টি দাবি এমনিতেই আদায় হয়ে যাবে এবং বর্তমান সরকারেরও বাকি ছয়টি দাবি মেনে নিতে তেমন কোনো আপত্তি থাকবে না বলেই প্রতীয়মান হয়। এখন সমস্যা হবে দাবিটি নিয়ে। প্রথম দাবিটি হলো 'জাতীয় নির্বাচন অবশ্যই নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে।' আগেই বলেছি খুবই সুন্দর এবং ন্যায্য কথা; কিন্তু কে কার কথা শুনবে? প্রথম দফা দাবির দুটি অংশ। এক. জাতীয় নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে। দুই. নির্দলীয়- নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। এক নম্বর অংশটি বর্তমান সরকার চোখ বন্ধ করে মেনে নেবে এবং সবাইকে উদাত্ত আহ্বান জানাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে তাদের অধীনে অংশগ্রহণ করার জন্য এবং তারা তাদের মতে যথাসময়ে নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে বলে গ্যারান্টি দেবে, কিন্তু তাদের জীবন থাকতে প্রথম দাবির দ্বিতীয় দাবি মেনে নেবে না এবং সময়ের বাস্তবতার নিরিখে মেনে নিতে পারবে না। প্রথম দাবিটি সরকার এভাবে সংশোধন করে মেনে নিতে চাইবে যে, 'জাতীয় নির্বাচন অবশ্যই বর্তমান সরকারের অধীনে হতে হবে।' সরকার হয়তো আরও বলবে যে, বাকি ছয়টি দাবিও তারা মেনে নেবে। সরকার যদি এখন বলে একটি সংশোধনীসহ ২০ দলের সাতটি দাবিই তারা মেনে নেবে কিন্তু ২০ দলকে শুধু তাদের সাতটি দাবির মাত্র একটি দাবি থেকে দুটি শব্দ 'নির্দলীয়-নিরপেক্ষ' বাদ দিয়ে শুধু একটি শব্দ 'বর্তমান' প্রতিস্থাপিত করবে। প্রশ্ন হলো ২০ দল কি তা মানবে বা মানতে পারবে? ২০ দলের দাবির মূল নির্যাস হলো এ দুটি শব্দ 'নির্দলীয়-নিরপেক্ষ'। যেখান থেকে সরে আসার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। যদি ২০ দল এ দুটি শব্দ 'নির্দলীয়-নিরপেক্ষ' তাদের সাত দফা দাবি থেকে বাদ দিতে পারে তাহলে বলা যায় বাংলাদেশের রাজনীতির চলমান সংকট আগামী চার বছরের জন্য মিটে গেল।

২০ দলের নীতি-নির্ধারকরা তাদের সাত দফা দাবি তৈরি করতে নিজেদের এক মহা সংকটে ফেলে দিয়েছে। ২০ দল যদি এখন কোনো সংলাপে বসে তাহলে তাদের পাওয়ার কিছুই থাকবে না। আমার মতো একজন দলের ক্ষুদ্র কর্মীর কাছে ২০ দলের সাত দফা দাবির এ রকম বিশ্লেষণ হতে পারে তাহলে সরকারের বাঘা বাঘা নেতাদের বিশ্লেষণ কি হবে তা আমার ক্ষুদ্র ভেদ বুদ্ধির বাইরে।

দলের কাছে আমার সবিনয় নিবেদন থাকবে এ মুহূর্তে সাত দফা দাবি বাদ দিয়ে শুধু এক দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনে এগিয়ে যাওয়া। জাতির সামনে দেওয়া আগেকার সাত দফার প্রথম দফাটিকে সংশোধন করা হোক যে, 'আগামী ছয় মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের জন্য নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হোক'। ২০ দলকে আগামী ছয় মাসের লক্ষ্য স্থির করে মরণপ্রাণ সংগ্রামে নামা উচিত। আমাদের নতুন করে হারানোরও কিছু নেই এবং সরকারের কাছ থেকে পাওয়ারও কিছু নেই। সরকার আমাদের একবিন্দুও ছাড় দিবে না। আমাদের সাহায্যেও কোনো বিদেশি বন্ধু এগিয়ে আসবে না। আমাদের পথ আমাদেরই করে নিতে হবে। এগুতে পারলে বন্ধুর অভাব হবে না। ম্যাডামের পাশে ষড়যন্ত্রকারীরা ঘিরে আছে। তাদের কাছ থেকে মুক্তির একমাত্র পথ চূড়ান্ত আন্দোলনে আর সময় নষ্ট না করে ঝাঁপিয়ে পড়া। আন্দোলন যত দেরি হবে ষড়যন্ত্রকারীরা তত বেশি শক্তিশালী হবে। ম্যাডামের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যাচ্ছে। যত দেরি হবে ততই সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাবে।

পরাজয় মানে চূড়ান্ত পরাজয় নয়। আজকে হেরে যাওয়ার অর্থ এই নয় যে আগামীতেও হেরে যাব। রাজনীতিতে হার-জিত রাজনৈতিক খেলা। রাজনীতিতে হারাটাও রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। ভারতের কংগ্রেস ১০ বছর ক্ষমতায় থেকে হেরে গেছে, পশ্চিমবঙ্গে বামেরা ২৬ বছর ক্ষমতায় থেকে হেরে গেছে, তারা কি ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছে? আওয়ামী লীগ ২১ বছর ক্ষমতায় ছিল না, তাদের জনসভা করতে দেওয়া হয়নি, জনসভায় বোমা মারা হয়েছে, শেখ হাসিনার সভায় গ্রেনেড হামলা হয়েছে, আমরা তো তখন ক্ষমতায় ছিলাম, বিচার করেছিলাম কি? কোথায় এখন ওইসব জাতীয়তাবাদী পুলিশ ও সরকারি আমলারা যারা দলের রাজনৈতিক নেতাদের বুড়ো আঙ্গুল দেখাতো, বিএনপি নেতাদের দেশপ্রেম শেখাতো! ১/১১ এর সময় আওয়ামী নেতাদের টর্চার করে পয়সা কামিয়ে এখন তাদের চামড়া বাঁচানোর জন্য বিএনপিকে আন্দোলন শেখায়! এতকিছুর পরও ২১ বছর পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যেতে পেরেছে তা দেখে আমরা ধৈর্য ধরতে পারি না! আমাদের অবশ্যই ধৈর্য ধরতে হবে। জনগণ আমাদের সঙ্গে কিন্তু সন্ত্রাসী কাজ পছন্দ করে না।

আমাদের সামনে এখন দুটি পথ খোলা। হয় চূড়ান্ত আন্দোলন করে ছয় মাসের মধ্যে সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়া শেষ করতে হবে, আর না হলে সরকারের সঙ্গে আপস করে সবাই যেভাবে চলছে আমাদেরও সেভাবে চলে সময়ের অপেক্ষা করতে হবে। চোরাবালিতে পড়ে বেশি নড়াচড়া করলে আরও বেশি বালিতে আটকে যেতে হয়। মুসলিম লীগ আইয়ুব খানকে এনে ক্ষমতা হারিয়ে ছিল, মওলানা ভাসানী নির্বাচন বয়কট করে রাজনীতিতে পিছে পড়ে গিয়েছিলেন, প্রেসিডেন্ট সাত্তারের বিকল্প এরশাদকে পছন্দ করতে গিয়ে বিএনপি নয় বছর ক্ষমতার বাইরে ছিল, জামায়াতকে ভালোবাসা দিতে গিয়ে এখন কত বছর ক্ষমতার বাইরে থাকতে হয় তা একমাত্র আল্লাহপাকই জানেন। তবু আমি আশাবাদী, সময় ফুরিয়ে যায়নি বা সম্ভাবনার সব পথ বন্ধ হয়ে যায়নি। তাই বিখ্যাত লেখক হুমায়ূন আহমেদের কথা টেনে বলতে চাই- 'এই দিন দিন না আরও দিন আছে, এ দিনেরে নিয়ে যাবে সেই দিনেরই কাছে।'

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য।

 

 

সর্বশেষ খবর