বুধবার, ৭ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

সংঘাত কাম্য নয়

সন্ত্রাস সংঘাত কিংবা হরতাল অবরোধ সভ্য সমাজের রাজনীতির অনুষঙ্গ বলে বিবেচিত হতে পারে না। কিন্তু এর একটির সূত্র ধরে আরেকটি জাতির ঘাড়ে যেভাবে চেপে বসছে তা জনপ্রত্যাশার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। নেতিবাচক রাজনীতির অপপ্রভাব থেকে জাতিকে রক্ষার ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতাও জনমনকে আহত করছে। দেশবাসী চায় সুস্থ পরিবেশ। রাজপথে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরার অধিকার। জীবিকা অর্জনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা থাকবে না এমনটিও তাদের কাম্য। সভ্য সমাজের প্রতিটি সরকার জনগণকে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ এবং উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত হয়। অবাঞ্ছিত হলেও সত্যি- নিজেদের সভ্য দুনিয়ার অংশ হিসেবে ভাবার ক্ষেত্রে আমাদের কর্তাব্যক্তিদের কার্পণ্য রয়েছে। এ কার্পণ্যের বিষয়টি জাজ্বল্যমান হয়ে উঠেছে সংঘাতপ্রবণ রাজনৈতিক কর্মসূচি এড়ানোর ক্ষেত্রে। ৫ জানুয়ারিতে সরকার ও বিরোধী দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির পর বিরোধী দলের লাগাতার অবরোধের ডাক দেশবাসীকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির পরিণতিতে চারজনের প্রাণহানি ও ৩০০ জন আহত হওয়ার ঘটনাও রাজনৈতিক নেতৃত্বের দায়িত্বহীনতাকেই দেশবাসীর সামনে স্পষ্ট করেছে। গত বছর রাজনৈতিক সহিংসতায় আড়াই হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডের কারণে। স্বাভাবিক মৃত্যু মানুষের একটি সহজাত অধিকার। রাজনৈতিক হানাহানি ও সংঘাতে এ অধিকার হাত ছাড়া হতে চলেছিল। নতুন বছরের শুরুতেই একের পর এক সহিংসতায় একদিকে যেমন হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে অন্যদিকে বিপর্যস্ত হচ্ছে অর্থনীতি। জিডিপির উচ্চ প্রবৃদ্ধি সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে অভ্যুদয়ের যে আশা সৃষ্টি করেছিল রাজনৈতিক সহিংসতা তা অনিশ্চিত করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আজকের বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে রাজনীতিকদেরই আত্দত্যাগে। দেশের স্বাধীনতার জন্য তাদের অবদান প্রাতঃস্মরণীয়। কিন্তু গত বছর নির্বাচন নিয়ে তারা যে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন তা দুর্ভাগ্যজনক। নিজেদের নাক কেটে অপরের যাত্রাভঙ্গের অবিমৃষ্যকারিতা কখনই কাম্য হওয়া উচিত ছিল না। সরকার এবং বিরোধী দল দুই পক্ষই যে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের পক্ষে তা তাদের বক্তব্যে স্পষ্ট। এ নির্বাচন কিভাবে হবে তা নিয়ে একমত হতে পারেননি তারা নিছক জেদের কারণে। সরকার ও বিরোধী দলের আস্থার সংকট অতীতে রাজনীতিকদের জন্য বিপর্যয় ডেকে এনেছে। দেখে শুনে মনে হচ্ছে, কেউই তা থেকে শিক্ষা নেননি। বলা হয়, ইতিহাসের শিক্ষা হলো ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নেওয়া। আমরা মনে করি, দেশবাসীকে তারা মৃত্যু উপত্যকার দিকে ঠেলে দেওয়ার যে বোকামি করছেন তা কারও জন্যই মঙ্গল ডেকে আনবে না। নিজেদের স্বার্থেই সংঘাতের বদলে সমঝোতার পথে তাদের এগিয়ে আসা উচিত।

সর্বশেষ খবর