বিমান ও অব্যবস্থাপনা সমার্থক শব্দ বলে বিবেচিত দীর্ঘদিন ধরে। তাজ্জব করার মতো তথ্য হলো জাতীয় পতাকা বহনকারী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সে এখন কোনো পরিচালনা পর্ষদ নেই। ২০ দিন আগে পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার পর থেকে চলছে শূন্যতা। প্রশাসনিক সব ধরনের কাজ বন্ধ সিদ্ধান্তের অভাবে। চলতি মাস থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে বিমানের ফ্লাইট চালু করার কথা থাকলেও তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে একই কারণে। দরপত্র আহ্বান থেকে শুরু করে আর্থিক-সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না পরিচালনা পর্ষদ না থাকায়। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির নিয়ম অনুযায়ী গত ৩০ ডিসেম্বর বিমানের বার্ষিক সভায় বিমানের চেয়ারম্যানসহ সব সদস্য পদত্যাগ করেন। সভায় ওই দিনই নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হয় এবং তা অনুমোদনের জন্য বিমান মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সেই ফাইল এখনো বিমানে ফিরে না আসায় শুরু হয়েছে এই বিড়ম্বনা। বিমানের পরিচালনা পর্ষদ না থাকায় এটি কার্যত এতিম প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। কথা ছিল মিসর থেকে উড়োজাহাজ এনে বিমানের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চালু করা হবে। এ উদ্দেশ্যে চলতি মাসের শুরুতে বিমানের একটি টিমের মিসর সফরের কথা থাকলেও তারা যেতে পারেনি পরিচালনা পর্ষদের নির্দেশনার অভাবে। বিমানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের এখন অফিসে যাওয়া-আসাই সার। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বছরের পর বছর ধরে লোকসান দিয়ে চলছে অব্যবস্থাপনার কারণে। দুনিয়ার অন্যসব আকাশ পরিবহন লাভজনকভাবে ব্যবসা চালানোর কৃতিত্ব দেখালেও দেশবাসীর ট্যাঙ্রে টাকার অপচয় করা বিমানের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৬ কোটি মানুষের একটি দেশে প্রায় এক কোটি মানুষ প্রবাসে কর্মরত। প্রতিবছর এক লাখেরও বেশি মানুষ হজব্রত পালনে আকাশ পরিবহনের সেবা নেয়। লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে ওঠার সব পূর্বশর্ত থাকা সত্ত্বেও অব্যবস্থাপনার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। সোনা চোরাচালানের বাহন হিসেবে বিমানের দুর্নাম কেনার পিছনেও অব্যবস্থাপনাগত গাফিলতি অনেকাংশে দায়ী। আমরা বার বার বলেছি জনগণের ট্যাঙ্রে টাকার অপচয় কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্তব্য হয়ে দাঁড়াবে এটি কাম্য হতে পারে না। সুব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা যখন এ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্বের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে তখন পরিচালনা পর্ষদ শূন্য থাকা বেহাল অবস্থাকেই উৎসাহিত করছে। আমরা আশা করব পরিচালনা পর্ষদ নিয়োগে ত্বরিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো দীর্ঘসূত্রতাই কাম্য হওয়া উচিত নয়।