সোমবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

গোবিন্দ হালদারের মহাপ্রয়াণ

বাংলাদেশের মহান বন্ধু গীতিকবি গোবিন্দ হালদার আর নেই। ৮৫ বছর বয়সে কলকাতার একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন এ জীবন্ত কিংবদন্তি। দীর্ঘদিন ধরে রোগ-শোকে ভুগছিলেন তিনি। হারিয়ে ফেলেছিলেন দৃষ্টি ও বাকশক্তি। কিডনিসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগেও আক্রান্ত ছিলেন তিনি। গোবিন্দ হালদারের জন্ম অবিভক্ত যশোর জেলার বনগ্রামে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তার পরিবার ভারতে চলে যায়। গোবিন্দ হালদার ১৯৭১ সালে চাকরি করতেন ভারতের আয়কর বিভাগে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর ভয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শরণার্থীদের দেখে তিনি আবেগতাড়িত হয়ে ওঠেন। মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে লেখেন কালজয়ী সব গান। মুক্তিযোদ্ধা তথা বাংলাদেশের মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে তার লেখা গানের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। গোবিন্দ হালদারের লেখা অবিস্মরণীয় গানগুলোর মধ্যে আছে- 'মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি', 'পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, রক্ত লাল, রক্ত লাল', 'এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা', 'পদ্মা, মেঘনা, যমুনা তোমার আমার ঠিকানা'র মতো গান। গত ১৩ ডিসেম্বর গোবিন্দ হালদার কিডনির অসুস্থতায় কলকাতার একটি হাসপাতালে ভর্তি হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সঙ্গে কথা বলেন ও চিকিৎসার খরচ বহনের আশ্বাস দেন। ২২ ডিসেম্বর রাতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ভারত সফরকালে অসুস্থ গীতিকবিকে হাসপাতালে দেখতে যান। ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের এ অসামান্য কলমসৈনিকের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, বিএনপি চেয়ারপারসনসহ বাংলাদেশের বিশিষ্টজনরা তাদের শোক জানিয়েছেন। কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে এ মহান কবির প্রতি শ্রদ্ধা। গোবিন্দ হালদারের মৃত্যুর মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ তাদের একজন অকৃত্রিম বন্ধুকে হারাল। ভারতীয় নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও যিনি বাংলাদেশকে তার হৃদয়ে স্থান দিয়েছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে কালজয়ী গান রচনার মাধ্যমে তিনি যে ভূমিকা রেখেছেন তা বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে। গোবিন্দ হালদারকে আমাদের শেষ শ্রদ্ধা।

সর্বশেষ খবর