বুধবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা
ধর্ম

ইসলাম ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার তাগিদ দেয়

মাওলানা মুহাম্মদ আশরাফ আলী

বিচারের ক্ষেত্রে সাক্ষীর গুরুত্ব অপরিসীম। বিচারের ভাগ্য নির্ধারণ করে বহুলাংশে সাক্ষ্য-প্রমাণের ওপর। বিচারে বিচারক যেহেতু সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে রায় দেন সেহেতু সাক্ষ্যদানের ক্ষেত্রে অসততার আশ্রয় নেওয়া হলে এবং তা আদালতের কাছে বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপস্থাপন করা গেলে বিচারকের পক্ষে তাতে প্রভাবিত হওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। এ জন্য বিচারের ক্ষেত্রে মিথ্যা সাক্ষীর কারণে অনেক নিরপরাধ লোকও শাস্তির সম্মুখীন হয়। অনেক অপরাধী মিথ্যা সাক্ষীর কারণে মুক্তি পায়। এর ফলে ন্যায়বিচারের সুযোগ নষ্ট হয়। সামাজিক শান্তি ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থায় ব্যত্যয় ঘটায়।

ইসলাম জীবনের সর্বক্ষেত্রে ন্যায় প্রতিষ্ঠার পক্ষে এবং এ ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন সূরায় সর্বাবস্থায় সুবিচার প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বিচারের ক্ষেত্রে বিশ্বাসীরা যাতে ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্য দান করে সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পবিত্র কোরআনের আল মায়েদার ৮ নম্বর আয়াতে। মহান আল্লাহ বান্দাদের উদ্দেশে ইরশাদ করেছেন, 'হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহতায়ালার জন্য ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্যদানে বদ্ধপরিকর হও। আর কোনো সম্প্রদায়ের শত্রুতা যেন তোমাদের সুবিচার না করায় প্ররোচিত করে তোমাদের গুনাহে লিপ্ত করার কারণ হয়ে না দাঁড়ায়। তোমরা সুবিচার কর, নিশ্চয়ই সুবিচার করাই তাকওয়ার অধিক নিকটবর্তী।'

অন্যান্য জীবের মতো পৃথিবীর সব মানুষও আল্লাহর সৃষ্টি। মিথ্যা সাক্ষ্য কিংবা ত্রুটিযুক্ত বিচারের কারণে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হোক তা আল্লাহর কাছে কাম্য নয়। বিচারের ক্ষেত্রে কিংবা সাক্ষীদানের ক্ষেত্রে মুমিনরা যাতে কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্ব এবং অসততার আশ্রয় না নেয় সে সম্পর্কে তাগিদ দেওয়া হয়েছে সূরা আল আমের ১৮২ নম্বর আয়াতে। ইরশাদ করা হয়েছে, 'তোমরা যখন বিচার কাজ সম্পাদন কর কিংবা বিচারের ক্ষেত্রে সাক্ষ্যদানকল্পে কথা বল, তখন তোমরা সুবিচার নিশ্চিত কর। যদিও তাতে কোনো পক্ষ তোমার নিকটাত্দীয় হোক না কেন।'

বিচারের ক্ষেত্রে পক্ষ-বিপক্ষে বাবা-মা, আত্দীয়স্বজন, ধনী-গরিব যেই থাকুক না কেন সত্য সাক্ষী দেওয়া এবং ন্যায়বিচারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে। সূরা আন নিসার ১৩৫ নম্বর আয়াতে এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছে, মা-বাবা কিংবা আত্দীয়স্বজনের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্যদানে বদ্ধপরিকর হতে হবে। সত্য বিকৃত করা যাবে না। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ন্যায় প্রতিষ্ঠার তৌফিক দিন।

লেখক : ইসলামী গবেষক।

 

 

সর্বশেষ খবর