বুধবার, ৬ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

সিটি নির্বাচন ও জাতীয় রাজনীতিতে এর প্রভাব

মেজর অব. মো. আখতারুজ্জামান

সিটি নির্বাচন ও জাতীয় রাজনীতিতে এর প্রভাব

সদ্য সমাপ্ত সিটি নির্বাচন জাতীয় রাজনীতিতে তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব রাখতে সক্ষম হয়েছে। সরকার খুবই চতুরতা এবং অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সিটি নির্বাচনে বিশাল রাজনৈতিক সাফল্য করায়ত্ত করে নিয়েছে। বিএনপি গত জানুয়ারি মাস থেকে দেশে একটি সরকারবিরোধী মনোভাব, তাদের সফল-বিফল যাই বলা হোক, আন্দোলনের মাধ্যমে জনমনে সৃষ্টি করতে পেরেছিল। কিন্তু সরকার সিটি নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সেই বৈরী মনোভাব খানিকটা হলেও পরিবর্তন করতে পেরেছে। সিটি নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার দেশের রাজনীতি, প্রশাসন ও বৃৃহত্তর জনমত খুবই দক্ষতার সঙ্গে বর্তমানে তাদের পক্ষে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। নির্বাচনে যাওয়া উচিত ছিল কিনা সেই বিতর্কে এখন আর আমি যাব না, কারণ এতে আমাদের দলের নেতা-কর্মীর মধ্যে তিক্ততা ও অবিশ্বাস আরও বাড়বে। জনগণ মনে করে, বিএনপির এখন সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব্ব ভুলে সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়া সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। তবে সরকার খুবই ঠাণ্ডা মাথায় সূক্ষ্ম পরিকল্পনা ও দক্ষতার সঙ্গে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সিটি নির্বাচনের একশ ভাগ ফসল তার ঘরে তুলে নিতে সক্ষম হয়েছে। সরকারের বানানো হিসাব মতে বিভিন্ন প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের কল্পিত সংখ্যা প্রকাশ করে বিএনপির নির্বাচন প্রত্যাহার করার পরও সরকার খুবই দক্ষতা এবং চাতুর্যের সঙ্গে জনমনে ধাঁধা সৃৃষ্টি করতে পেরেছে যে, বিএনপি শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকলে নির্বাচনের ফলাফল অন্যরকম হতে পারত!!! সবচেয়ে মজার এবং অদ্ভুত মনে হচ্ছে এই দেখে যে, বিএনপি এখন পর্যন্ত তাদের প্রাপ্ত ভোটের কোনো ব্যাখ্যাও দিচ্ছে না বা প্রত্যাখ্যানও করছে না। সরকার এর সুযোগ পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে জনমনে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করতে সক্ষম হচ্ছে। জনগণ আরও অবাক হচ্ছে এই দেখে যে, সরকারের এত বড় চালাকির পরও বিএনপি বা ২০ দল বা শত নাগরিক কমিটি কেউই সরকারের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের কার্যকর প্রতিবাদ বা আন্দোলন কিছুই করতে পারছে না? এমনকি অন্য কোনো রাজনৈতিক পক্ষ, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, জাতিসংঘ, বিদেশি কোনো বন্ধুরাষ্ট্র বা এমনকি দেশে-বিদেশে নির্বাচন নিয়ে কাজ করে এমন কারও কাছ থেকেও বিএনপি বা তার সহযোগীরা এখনো কোনো ধরনের সমর্থন আদায় করতে পারেনি। কাজেই চোখ বন্ধ করেই বলা যায়, সিটি নির্বাচনের শতভাগ তাৎক্ষণিক প্রভাব এবং সফলতা সরকার তার পক্ষে নিতে সক্ষম হয়েছে।

এখন দেখা যাক, সিটি নির্বাচনের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কী হতে যাচ্ছে এবং এতে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা কার? এবারের সিটি নির্বাচনের সবচেয়ে বড় প্রভাব বা চাপ যেটি হবে সেটি হলো আগামী জাতীয় নির্বাচনে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে বলে অনেকে মনে করেন। সিটি নির্বাচন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির একশ ভাগ যৌক্তিকতা প্রমাণ করেছে বলে জনমনে বিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে- যা জনগণ মনে করে। সিটি নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির আন্দোলনের পালে বাতাস লাগবে বলে অনেকের বিশ্বাস এবং সরকার কোনো অবস্থাতেই সিটি নির্বাচনের বাস্তবতার কারণে আগামী জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন ছাড়া আর করাতে পারবে না বলেই অনেকের বিশ্বাস। সরকার যতই শক্তিশালী হোক না কেন আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক আন্দোলন সর্বগ্রাসী হবে এবং সরকারকে সে দাবির কাছে মাথানত করতেই হবে। একপেশে অতি চালাকি স্বার্থপর সিটি নির্বাচনের মাশুল সরকারকে দীর্ঘমেয়াদে দিতে হবে বলে জনমনে বিশ্বাস গড়ে উঠেছে। মাগুরার নির্বাচনের জয় যেমন বিএনপির কাল হয়েছিল তেমনি এবারের সিটি নির্বাচনের ফলাফল বর্তমান সরকারের অশনি সংকেত। সিটি নির্বাচন আগামী দিনে বর্তমান সরকারের ভবিষ্যৎ নিয়ে টান দেবে বলে অনেকের ধারণা, তাই জনগণ মনে করে সিটি নির্বাচনের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ও সফলতা শতভাগ বিএনপির পক্ষে যাবে, যা সময়ই প্রমাণ করে দেবে।

সিটি নির্বাচন কি বিএনপির বিপর্যয় ছিল? এ প্রশ্ন অনেকের মনে দেখা দিয়েছে। বিএনপি এত বড় একটি রাজনৈতিক শক্তি এবং প্রচুর জনমত ও সমর্থন থাকার পরও কেন তারা সিটি নির্বাচনে সরকারের অপকর্মকে প্রতিহত করতে পারল না? শুধু কি নেতা-কর্মীদের পুলিশের আক্রমণ ও নির্যাতন নাকি এর সঙ্গে আরও কিছু? সন্দেহ নেই রাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনীসহ আইনশৃৃঙ্খলা বাহিনী ও বেসামরিক প্রশাসন ও বৈরী পক্ষপাতমূলক নির্বাচন কমিশন বিএনপিকে নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং গ্রাউন্ডে নির্বাচন করতে দেয়নি, তারপরও টঙ্গীসহ আগেকার সিটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় এবারের নির্বাচনে বিএনপির বিপর্যয় হয়েছে বলেই অনেকে বলতে চাচ্ছেন, তাই এবারের সিটি নির্বাচনে বিএনপির বিপর্যয় হয়েছে এটাই বাস্তবতা যা পর্যালোচনার দাবি রাখে।

সিটি নির্বাচনে বিএনপির যে বিপর্যয় হয়েছে তা বলা যায় অনেকটা প্রত্যাশিত। জনগণের চোখে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার প্রত্যয় ফুটে উঠেছিল। নির্বাচনের সময় বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরি করার সময় জনগণের চোখেমুখে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার তীব্র মনোভাব লক্ষ্য করা গেছে। বিএনপি প্রার্থীদের পছন্দ না করার পরও শুধু শাসক আওয়ামী লীগকে একটি মেসেজ দেওয়ার জন্য জনগণ সিটি নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার মানসিক প্রস্তুতি ও সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু বিএনপি কতগুলো অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার কারণে এই দুর্লভ সুযোগ কাজে লাগাতে পারল না।

তাই জনগণ সিটি নির্বাচনে বিএনপির বিপর্যয়ের অনেক কারণের মধ্যে নিম্নলিখিত প্রথম তিনটি কারণ মুখ্য বলে মনে করে :

১. সাংগঠনিক দুর্বলতা। বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে বলে অনেকে মনে করেন। এলাকায়, পাড়ায়, মহল্লায় দৃশ্যমান কোনো সংগঠন নেই এবং কোনো সাংগঠনিক তৎপরতাও নেই। সবাই গিয়ে মেয়র প্রার্থীদের বাড়িতে ধরনা দিয়ে আর্থিক সুযোগ-সুবিধা খুঁজেছে এবং অনেক নেতা পল্টনের বা গুলশানের অফিসের সামনে গুলতানি মেরেছে। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে বাধ্য হচ্ছি, বিএনপির বর্তমান নেতা-কর্মীর কোনো নিজস্ব বা প্রভাবাধীন এলাকা নেই। সবাই প্রায় ভাসমান নেতা, কিন্তু দলের অফিস ও বড় নেতারা তাদের দখলে। দলকে এসব ভাসমান নেতা থেকে মুক্ত করে যতদিন না প্রতিটি এলাকা, মহল্লা-পাড়ায় শিকড় আছে এমন তৃণমূল নেতাদের নিয়ে দলকে সংগঠিত করা যাবে ততদিন পর্যন্ত বিএনপিকে মাঠে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে যাবে। জনগণ মনে করে ভবিষ্যতে কোনো বড় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বা আন্দোলনে যাওয়ার আগে অন্তত দুই বছর সময় নিয়ে দলের খোলনলচে পাল্টে নতুন করে দলকে সংঘটিত করে নেওয়া উচিত। কাউকে বাদ দিতে বলছি না, দলে সবার প্রয়োজন আছে। তবে নতুনদের দায়িত্ব দিয়ে সংগঠিত করার কাজে অতিসত্বর নামিয়ে দিতে হবে। দলকে সংগঠিত করার জন্য নতুন একজন সাহসী ও সাংগঠনিক কাজে পারদর্শী ব্যক্তিত্বকে একক দায়িত্ব দেওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত হবে বলে অনেকেই মনে করে।

২. প্রার্থীদের সততা এবং গ্রহণযোগ্যতার সাংগঠনিক অভাব। বিশেষ করে চট্টগ্রামের প্রার্থীর কলঙ্কতম অতীত কর্মকাণ্ড এবং ঢাকা উত্তরের প্রার্থীর বাবার অতি চালাকি ও নাটকীয়তা। ঢাকা উত্তরের প্রার্থী যে সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট ছিল তা তার ঘোষিত ফলাফল দেখেই অনুধাবন করা সম্ভব। ৩. সামাজিক ও প্রশাসনের প্রতি দলের এক ধরনের বিদ্বেষ নীতি।

পুলিশ, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এবং বড় সংবাদপত্র বা মিডিয়া মোগল, প্রভাবশালী সাংবাদিক মহল, ব্যবসায়ী, প্রভাবশালী মহল ও এলাকার মুরব্বিদের সঙ্গে যোজন দূরত্ব। মনে হয় বিএনপি কারও সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখার প্রয়োজনকে গুরুত্ব দেয় না। কোনো এলাকার কোনো সামাজিক শক্তিই বিএনপির নিয়ন্ত্রণে নেই। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং এমনকি মক্তব-মাদ্রাসার সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের প্রভাব বলতে কিছুই নেই। বিভিন্ন ব্যবসায়িক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গেও বিএনপির দূরত্ব লক্ষণীয়। এ ছাড়া ভাবেসাবে মনে হয় বিএনপি পুলিশ, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং তাদের সম্পূর্ণভাবে শাসকগোষ্ঠীর হাতে তুলে দিয়েছে। বিএনপি ছাত্র, যুব বা পেশাজীবী কোনো সংগঠন নয়। বিএনপি একটি জাতীয় রাজনৈতিক দল এবং বিএনপিকে সেভাবেই আচরণ করতে হবে। কাউকেই বিএনপিবিদ্বেষী ভাবা রাজনৈতিকভাবে ঠিক নয়। বিএনপির এহেন ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন সময়ের দাবি।

অন্ধ হলে প্রলয় বন্ধ হয় না। আত্দসমালোচনা নুনের ছিটা নয়, নিজের ভুল বুঝতে না পারলে জয় অর্জন কঠিন। অনেকেরই প্রশ্ন সিটি নির্বাচনে চুরি কেন বিএনপি ঠেকাতে পারল না? বিএনপি তো কোনো আবলা নারীর দল নয়। নির্বাচনের দিন সব কেন্দ্রে বিএনপির নেতা-ভাইয়েরা কেন চুরি প্রতিহত করতে গিয়ে অন্তত একজন মরতে পারল না? এরকম অবস্থা হলে আওয়ামী লীগের তোফায়েল, মতিয়া, নাসিমদের মতো প্রথম সারির নেতারাই রাস্তায় শুয়ে পড়তেন এবং প্রয়োজনে গণগ্রেফতার হতেন? আমাদের নেতা মওদুদ ভাই তো এমনিতেই আগামী কয়েক বছরেই মারা যাবেন, ক্ষমতার ঘি তো অনেক খেয়েছেন, আজকে দলের জন্য, ভোটের অধিকারের জন্য মরতে পারলেন না? তিনি যদি নির্বাচন কেন্দ্রে গিয়ে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতেন তা হলে নির্বাচনের চিত্র আজকে অন্যরকম হতো বলেই অনেকে মনে করে। অথচ ভোট চুরির বিরুদ্ধে কোনো তীব্র প্রতিক্রিয়া বা প্রতিরোধের কর্মসূচি না দিয়ে তিনি চরম কাপুরুষের মতো রণে ভঙ্গ দিয়ে ঘরে ফিরে গেলেন! কেন বিএনপি আজকে প্রতিটি কেন্দ্রে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারল না এর জবাব কে দেবে? এ কথাগুলো বলতে গেলে অনেকে আমাদের সরকারের দালাল বলেন কিন্তু দালালি করতে যে যোগ্যতা ও অবস্থান লাগে, মওদুদ-শিমুলদের মতো সে যোগ্যতা ও অবস্থান আমাদের অনেকের নেই।

এবারের সিটি নির্বাচনে আমরা রাজনীতিবিদরা হেরেছি, হেরেছে রাজনীতি। আমরা একজন হেরেছি সঠিকভাবে একটি নির্বাচন করাতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়ে এবং আরেকজন হেরেছি নির্বাচনের মাঠে চরম বৈরী ও প্রতিকূল অবস্থায় শক্তভাবে মোকাবিলা করার ব্যর্থতা দেখিয়ে। আমরা দুই পক্ষই এক বিশাল সুযোগ পেয়েছিলাম আমাদের দেশপ্রেম, সততা, নির্লোভ রাজনীতি করার চেতনা ও সবার উপরে জনগণের সামনে উৎকর্ষ মানের নেতৃত্ব যোগ্যতা প্রমাণ করার। যে মাহেন্দ্রক্ষণ পেয়েছিলাম আমরা উভয়পক্ষ সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারলাম না। তারপরও আমাদের দুই নেত্রীর তোষামোদকারীরা দুই নেত্রীর তোষামোদের ফোয়ারা বইয়ে দেওয়ার জন্য পিছ-পা হবে না।

যা হওয়ার হয়ে গেছে। আমাদের এই নেতৃত্ব নিয়েই এগোতে হবে। আমরা আমাদের জীবনেই বহু স্বৈরাচারের উত্থান দেখেছি, দেখেছি তাদের করুণ পরিণতি। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। পতন ছাড়া আমাদের বোধোদয় হয় না।

অনেকের মনে আছে, হুমায়ুন আজাদ আহত হয়ে ঢাকা সিএমএইচে ভর্তি থাকাকালীন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে ক্যান্টনমেন্টে ঢুকতে দেওয়া হয়নি, তারপরের ইতিহাস কী? শেখ হাসিনা ক্ষমতায় গিয়ে আমাদের নেত্রীকে ক্যান্টনমেন্ট থেকে শুধু বেরই করে দেননি, এখন তিনি ক্যান্টনমেন্টের পাশ দিয়েও চলতে পারেন না। কী চরম বাস্তবতা! যাদের পরামর্শে বা প্ররোচনায় ওই কাজটি করা হয়েছিল তারা এখন কোথায়!

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার কথাও কি আমরা ভুলে বসে আছি? এতই যদি আমরা মন ভোলা হই তাহলে আমাদের বাঁচাবে কে?

এই পৃথিবীতে কেউ কাউকে ক্ষমা করে না। প্রতিশোধ নিতে কেউ কাউকে ছাড়ে না। সবাই সময়ের অপেক্ষা করে মাত্র।

আওয়ামী লীগ অনেক মার খেয়ে শিখেছে। তাই তারা এখন অনেক বেশি গোছাল, তারা এখন আটঘাট বেঁধে আগায়। একা চলার নীতি তারা পরিহার করেছে। থানার দারোগা থেকে আইজিপি, টিএনও থেকে সিনিয়র সচিব, ওভারসিয়ার থেকে জাঁদরেল প্রকৌশলী, কম্পাউন্ডার থেকে নামিদামি ডাক্তার, গ্রামের মক্তবের মৌলভি থেকে বাইতুল মোকাররমের খতিব, পাঠশালার শিক্ষক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, গ্রামের মুরব্বি থেকে শুরু করে সুশীল সমাজের বাঘা বাঘা সদস্য, পাড়ার মাস্তান থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী, গ্রামের অপরিচিত রিপোর্টার থেকে অসীম ক্ষমতাধর সম্পাদক ও সাংবাদিক, খুদে উপস্থাপক থেকে বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব মিডিয়া মোগল, পাড়ার ক্ষুদ্র দোকানদার থেকে মিলিয়নিয়ার, বিলিয়নিয়ার শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী, দেশি ও আন্তর্জাতিক ক্ষুদ্র-বৃহৎ রাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থাৎ প্রায় সব পর্যায়ের সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় পক্ষ-বিপক্ষের সঙ্গে অব্যাহত যোগাযোগ রেখে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ভাগাভাগি করে ভোগ করার চেষ্টা করছে।

অথচ সেখানে আমরা নিজেদের মধ্যেও আলাপ-আলোচনা করা তো দূরের কথা, চেষ্টাও করি না। ভাবখানা হলো জনগণ শালা (!) যাবি কোথায়? দলের জন্য কিছু বলতে গেলে তাকে আওয়ামী লীগের দালাল বানিয়ে ছাড়ে! অথচ আমাদের চারপাশে কি ক্ষমতার সঙ্গে আমাদের ২৪ ঘণ্টা ঘিরে রাখছে সরকারের দালালরা, জীবনের নিরাপত্তার জন্য আমরা বুঝেও সে কথা মুখ ফুটে বলতে পারি না। আমরা সবাই যেন কেমন হতাশ হয়ে যাচ্ছি দিন দিন। ঘরে বসে বসে দোয়া আর হাই আফসোস করলে হবে না। নিজেদেরও কিছু চেষ্টা করতে হবে। আমরা সবাই ভীতু কাপুরুষের দল! মনে হয় স্বাভাবিক মৃত্যুর ভাগ্য আমাদের নাই!

আসুন আমরা দলের ভিতরের অন্যায়ের প্রতিবাদ করি। আমাদের রক্ত দিয়ে লেখা হোক নতুন ইতিহাস। বাংলাদেশের রাজনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর ইতিহাস। সৎ ও দেশপ্রেমিক রাজনীতির ইতিহাস।

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য।

 

সর্বশেষ খবর