দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের একাংশের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্নের শেষ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতির পেছনে একশ্রেণির শিক্ষকের ইন্ধন ওপেন সিক্রেট। তাদের ইন্ধন আছে বলেই ছাত্ররাজনীতি তার মাত্রা ছাড়াচ্ছে। শিক্ষক রাজনীতির কারণে শিক্ষা কার্যক্রম জিম্মি হয়ে পড়ার ঘটনাও সাম্প্রতিক বছরগুলোর একটি আলোচ্য বিষয়। এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে যৌন হয়রানির অভিযোগ। আমাদের দেশের প্রচলিত মূল্যবোধে শিক্ষকের মর্যাদা বাবা-মায়ের সমপর্যায়ের। সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষকরা পিতৃসুলভ ভাবমূর্তির অধিকারী হবে এমনটিই দেখতে চায় শিক্ষার্থীরা। তার বদলে লাম্পট্যের বহিঃপ্রকাশ কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। অকাম্য হলেও প্রায় প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে লম্পটদের দৌরাত্ম্য এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, এটিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার অবকাশ নেই। সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করতে গিয়ে মেয়ে শিক্ষার্থীরা পড়ছেন লম্পট শিক্ষকদের খপ্পরে। যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে তারা বাড়ি ফিরছেন। নির্যাতনের শিকার হয়ে কোনো কোনো ছাত্রী ক্ষোভ, ঘৃণা ও লজ্জায় নিজেকে সঁপে দিচ্ছেন আরও অন্ধকার পথে। মেধাবী ছাত্রীরাই যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে লম্পট শিক্ষকদের যথেচ্ছতার শিকার হচ্ছেন, তা সহজে অনুমেয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে ২০০৯ সালে নীতিমালা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছিলেন সর্বোচ্চ আদালত। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নির্যাতন প্রতিরোধবিষয়ক সেল গঠন করা হলেও অসুস্থ অবস্থার অবসান ঘটেনি। দুশ্চরিত্র শিক্ষকরা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে যৌন হয়রানির অভিযোগ ধামাচাপা দেন। লোকলজ্জার ভয়ে যৌন হয়রানির শিকার শিক্ষার্থী বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পিছটান অথবা আপসে উপনীত হতে বাধ্য হন। শিক্ষকদের যৌন হয়রানির ঘটনা কীভাবে বেড়ে চলেছে তার প্রমাণ মেলে গত ৫ বছরে দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ জনেরও বেশি শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠার ঘটনা। প্রাপ্ত অভিযোগের যথাযথ তদন্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অভাবে যৌন হয়রানির মতো ঘৃণ্য অভিযোগের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। যা রোধে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।