বুধবার, ৬ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

মানব পাচার

মানব পাচার এখন এক বৈশ্বিক সমস্যার নাম। এ সমস্যার অন্যতম শিকার বাংলাদেশের মানুষ। মানব পাচারকারীদের পাল্লায় পড়ে এ দেশের শত শত শিশু মধ্যপ্রাচ্যে উটের দৌড় প্রতিযোগিতায় জকি হতে বাধ্য হয়েছে। এদের কেউ কেউ দৌড় প্রতিযোগিতার সময় আতঙ্কে প্রাণ হারিয়েছে। ইউরোপে কর্মসংস্থানের আশায় ঝুঁকিপূর্ণ পথে ভূ-মধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার সময় অনেকে প্রাণ হারিয়েছে জাহাজ বা নৌকাডুবিতে। সাহারা মরুভূমি পাড়ি দিতে গিয়ে বেঘোরে প্রাণ হারিয়েছে অনেক যুবক। মালয়েশিয়ায় চাকরির আশায় অবৈধ পথে সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ট্রলার ডুবিতে কত মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে তার হিসাব নেই। পাচারকারীদের পাল্লায় পড়ে থাইল্যান্ডের গহিন জঙ্গলে পণবন্দী হয়ে জীবন দান কিংবা ক্রীতদাসের জীবন বরণ করার ঘটনাও কম নয়। বাংলাদেশের প্রতি ২০ জনের একজন এখন বিদেশে কর্মরত। বিদেশে ৮০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে। এ ব্যাপারে জনশক্তি রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর অবদান যেমন অনস্বীকার্য তেমন আদম ব্যবসায়ী নামের একশ্রেণির প্রতারকের প্রতারণাও অনেক বিয়োগান্তক ঘটনার জন্ম দিয়েছে। বিদেশে চাকরি দেওয়ার নাম করে লাখ লাখ টাকা নিয়ে উধাও, বিদেশে নিয়ে চাকরি না দিয়ে প্রতারণা শুধু নয়, জীবন কেড়ে নেওয়ার ঘটনাও অনেক ঘটেছে। সাম্প্রতিক সময়ে জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে দুর্নীতি তুলনামূলকভাবে হ্রাস পেলেও সাগরপথে মানব পাচারের ঘটনা বেড়েই চলেছে। বিশেষত মালয়েশিয়ায় চাকরির নামে প্রতিবছরই প্রতারণার শিকার হচ্ছে শত শত মানুষ। পণবন্দী ও ক্রীতদাসের অকাম্য জীবনও অনেকের জন্য অনিবার্য হয়ে উঠছে। অতি সম্প্রতি থাইল্যান্ডের গহিন জঙ্গলে মানব পাচারকারী চক্রের গোপন আস্তানা আবিষ্কার এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় ৩২টি গণকবরের সন্ধান লাভ- এ ইস্যু সম্পর্কে বিশ্ববাসীর মনোযোগ কেড়েছে। মানব পাচার বন্ধে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়াসহ ধারে কাছের দেশগুলোর একযোগে কাজ করার তাগিদ সৃষ্টি করেছে। এ ঘৃণ্য অপরাধে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তির বিধানও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কর্তব্য হয়ে উঠবে এমনটিই আমরা দেখতে চাই।

সর্বশেষ খবর