বুধবার, ৬ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা
ধর্ম

আল্লাহর খেলাফতের দায়িত্ব পালনে আন্তরিক হতে হবে

মাওলানা মুহম্মাদ আব্দুল খালেক

পার্থিব জীবনে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের যেসব নিয়ামত ও সুযোগ-সুবিধা দান করেছেন তার মালিক তারা নয়; বরং আল্লাহ তাআলাই তার আসল মালিক। তাদের শুধু খেলাফত বা প্রতিনিধিত্ব দান করা হয়েছে। অতএব, তাদের কাছে যেসব জিনিস রয়েছে তার দ্বারা প্রকৃত মালিকের ইচ্ছা পূরণ করাই তাদের কাজ। আবু সাঈদ (সাদ ইবনে মালেক) আল-খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, পার্থিব জীবন সুমধুর, আকর্ষণীয় ও মনোরম। আল্লাহ তাআলা এখানে তোমাদের খেলাফতের দায়িত্ব দিয়ে দেখছেন, তোমরা কিরূপ কাজ কর। (মুসলিম)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দুনিয়াটা মুমিনের জন্য কারাগার এবং অবিশ্বাসীদের জন্য বেহেস্ত। (মুসলিম থেকে মিশকাতে) মুমিন ব্যক্তিকে ইসলামী শরীয়তের চতুঃসীমা রক্ষা করে জীবনযাপন করতে হয়। এ জন্য পৃথিবীটা তার কাছে কয়েদির জেলখানার মতোই মনে হয়। পক্ষান্তরে অবিশ্বাসী ব্যক্তি নিজেকে শরীয়তের যাবতীয় বন্ধন থেকে মুক্ত মনে করে। ফলে সে বলগাহীন ঘোড়া ও বন্ধনহীন ষাঁড়ের মতো যত্রতত্র বিচরণ করতে পারে।

পার্থিব জীবনে ইমানদার ব্যক্তির কর্মনীতি কেমন হওয়া উচিত তা আলোকপাত করা হয়েছে বিভিন্ন হাদিসে। শাদ্দাদ ইবনে আওস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি যে নিজের জীবনের হিসাব নেয় (নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে) এবং মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের উদ্দেশ্যে কাজ করে। আর নির্বোধ সেই ব্যক্তি যে নিজের সত্তাকে প্রবৃত্তির দাস বানিয়েছে এবং এরপরও আল্লাহর অনুগ্রহের আশায় বসে আছে। (তিরমিজি থেকে মিশকাতে)

আবু সাঈদ আল-খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মুমিন ব্যক্তি ও ইমানের উপমা হচ্ছে খুঁটিতে বাঁধা ঘোড়া। সে চতুঃসীমার মধ্যে ঘুরে-ফিরে আবার খুঁটির কাছে চলে আসে। অনুরূপভাবে মুমিন ব্যক্তি ভুল করে বসে; কিন্তু পুনরায় ইমানের দিকে ফিরে আসে। অতএব, তোমরা মুত্তাকি লোকদের নিজেদের খাবার খাওয়াও এবং ইমানদারদের সঙ্গে সদয় ব্যবহার কর। (বায়হাকী থেকে মিশকাতে)

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, চারটি জিনিস যাকে দান করা হয়েছে তাকে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ দান করা হয়েছে। কৃতজ্ঞ হৃদয়, আল্লাহর জিকিরকারী জিহ্বা, বিপদে ধৈর্যধারণকারী দেহ এবং এমন গুণবতী স্ত্রী যে তার নিজের ক্ষেত্রে ও স্বামীর সম্পদে বিশ্বাসঘাতকতা করে না। (বায়হাকী থেকে মিশকাতে)

পার্থিব জীবন হলো সাময়িক জীবন। এ জীবন শেষে আখিরাতের যে অনন্ত জীবন রয়েছে তার কথা স্মরণে রেখে পার্থিব জীবনে আল্লাহ প্রদত্ত খেলাফতের দায়িত্ব পালন করা প্রতিটি মুমিনের অবশ্য কর্তব্য। আল্লাহ আমাদের সে কর্তব্য পালনের তওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : ইসলামী গবেষক।

 

সর্বশেষ খবর