শুক্রবার, ৮ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

রজব মাস তাকওয়া শিক্ষা দেয়

মুফতি আমজাদ হোসাইন

রজব মাস তাকওয়া শিক্ষা দেয়

রজব মাস মূলত তাকওয়া শিক্ষা দেয়। একজন মানুষের জন্য সত্যিকারের তাকওয়া তখন হাসিল হয়, যখন একিন ও ইহসানের গুণ হাসিল হয়। একিন অর্থ আল্লাহ থেকে সবকিছু হওয়ার বিশ্বাস অন্তরে রেখে মাখলুক থেকে দিল পরিষ্কার করা। মাখলুক কিছু করতে পারে না এ কথা অন্তরে গেঁথে নেওয়া। আর ইহসান অর্থ সারাক্ষণ আল্লাহর ধ্যান অন্তরে সজাগ রাখা, সব ধরনের এবাদত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা। তাঁকে হাজির-নাজির মনে করে এবাদতসহ সব পার্থিব কাজ করা, যা নিয়মিত জিকির করার দ্বারা হাসিল হয় এবং বুজুর্গদের সোহবতে থেকে তাদের খিদমত করে সাহাবায়ে কেরামের মুজাহাদার অনুকরণ করে নবীর ভালোবাসায় তার তরিকায় চলতে পারলে এই ইহসান অতি সহজে হাসিল হয়। এ ধরনের গুণের অধিকারী মানুষ থেকে আসল তাকওয়া প্রকাশ পায়। তাকওয়া ও বিনয় হচ্ছে অন্তরের আমল, অন্তর পরিষ্কার না হলে আসল তাকওয়া ও বিনয় পাওয়া যায় না। আল্লাহর আজাবের ভয়ে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার নাম হলো তাকওয়া। গুনাহ করা ও তা থেকে বেঁচে থাকার প্রবণতা অন্তর থেকে আসে। অন্তরের চাহিদার মাধ্যমে গুনাহ প্রকাশ পায়। আবার অন্তরের চাহিদার মাধ্যমে এবাদত প্রকাশ পায়। অন্তরে প্রবল চাপের সৃষ্টি না হলে কষ্টের সময় এবাদত করা যায় না। তেমনি তাকওয়া ও বিনয় সৃষ্টি হওয়ার জন্য স্বচ্ছ ও পবিত্র অন্তর হওয়া জরুরি। পার্থিব মোহ ও গুনাহ দ্বারা জর্জরিত অন্তরে তাকওয়া ও আল্লাহর ভয় সৃষ্টি হয় না। হাদিস শরিফে আছে, গুনাহ দ্বারা অন্তর ময়লাযুক্ত হয়। আর আল্লাহর জিকির দ্বারা অন্তর পবিত্র হয়। আল্লাহতায়ালা বান্দাকে অন্তর পবিত্র রাখার আদেশ করেছেন। তাকওয়ার কারণে সৃষ্টিকুলের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) উন্নত চরিত্রের অধিকারীর স্বীকৃতি পেয়েছেন। এরশাদ হচ্ছে, আপনি তো উন্নত চরিত্রের অধিকারী। (সূরা কলম : আয়াত : ৪) অর্থাৎ আপনি তাকওয়া ও বিনয়সহ সব ধরনের উত্তম চরিত্রের অধিকারী হয়েছেন। আল্লাহতায়ালা কর্তৃক হজরত জিব্রাইল (আ.)-এর মাধ্যমে বার বার রসুল (সা.)-এর সিনা চাক তথা অপারেশনের উদ্দেশ্য হলো, সৃষ্টিলগ্ন থেকে মানবিক খারাবি দূর করা এবং জান্নাতের রুহানি নূর অন্তরে ভরে দিয়ে মানবিক উৎকর্ষ ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী বানানো। যার ফলে পূর্ণ তাকওয়া ও বিনয় হাসিল হয়। যেমন বুখারি শরিফে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আবু জর (রা.) বলেন, রসুল (সা.) এরশাদ করেন, মক্কা শরিফে থাকাকালীন একবার হঠাৎ করে আমার ঘরের ছাদ ফেটে গেল। তখন হজরত জিব্রাইল (আ.) তাশরিফ আনলেন এবং বুকের অপারেশন করলেন। বুক ফেড়ে জমজমের পানি দ্বারা ধুয়ে পরিষ্কার করলেন। পরে ইমান ও হিকমত ভর্তি একটি স্বর্ণের পাত্র থেকে আমার অন্তরে প্রচুর ইমান ও হিকমতের নূর ঢেলে দিলেন। তারপর বুক আবার জোড়া লাগিয়ে দিলেন। (বুখারি শরিফ ১ম খণ্ড, পৃ. ৫০)।

লেখক : খতিব, নয়ানগর বায়তুল আমান জামে মসজিদ, বারিধারা, ঢাকা।

 

সর্বশেষ খবর