শুক্রবার, ৮ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

হুনায়ুনের যুদ্ধ

মক্কা বিজয় দ্বারা পৌত্তলিকতার অবসান ঘটলেও কয়েকটি সম্প্রদায় তখনো ইসলামের বিরোধিতা করছিল। তারা নিজেদের ধর্মমত ও মূর্তিপূজা পুনরায় প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে। মক্কা ও তায়িফের মধ্যবর্তী অঞ্চলে বসবাসকারী হাওয়াজিন ও সাকিফ গোত্রদ্বয় শিগগিরই ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করল। মক্কার কুরাইশদের সঙ্গে এ দুই গোত্রের বাণিজ্যিক ব্যাপারে বহুদিন থেকে শত্রুতা চলছিল। মক্কাবাসী কালক্রমে তায়িফে বাণিজ্যিক প্রাধান্য বিস্তার করলে হাওয়াজিন ও সাকিফ গোত্রদ্বয়ের সঙ্গে তাদের শত্রুতার সূচনা হলো। মুসলমানদের কাছে মক্কার কুরাইশদের আত্দসমর্পণ এ দুই গোত্রকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলেছিল। তারা আশঙ্কা করেছিল যে, মুসলমানদের সমর্থনপুষ্ট কুরাইশদের শত্রুতার মুখে এবার তারা দুর্বল হয়ে পড়বে এবং হয়তো কুরাইশদের মতো তাদেরও আত্দসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হবে। অতএব তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিরাট সমরায়োজন করল। বেদুইনরাও তাদের সঙ্গে যোগ দিল। বিধর্মীরা ২০ হাজার সৈন্যসহ মক্কা থেকে তিন মাইল দূরে হুনায়ুন উপত্যকায় সমবেত হলো। হজরত মুহাম্মদ (সা.) তা জানতে পেরে প্রায় ১২ হাজার মুসলিম ও কুরাইশদের সম্মিলিত বাহিনী নিয়ে (৬৩০ খ্রি.) মক্কা ত্যাগ করলেন। হজরত মুহাম্মদ (সা.) যখন স্বীয় সৈন্যবাহিনী নিয়ে সংকীর্ণ পার্বত্য পথ অতিক্রম করছিলেন, সে সময় পার্বত্য গুহায় লুকায়িত বেদুইনদের অকস্মাৎ সুতীক্ষ্ন শর বর্ষণে মুসলিম সৈন্য ছত্রভঙ্গ হয়ে পলায়ন করেন। হজরত নবী করিম (সা.) একাকী সে বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যে দণ্ডায়মান থেকে মুসলমানদের যুদ্ধক্ষেত্রে ফিরে আসার জন্য আহ্বান করতে থাকেন। কথিত আছে, অবিশ্রান্ত শরবৃষ্টি থেকে আত্দরক্ষার জন্য শত্রুদের উদ্দেশে তিনি এক মুষ্টি ধুলা নিক্ষেপ করেন। হজরতের পবিত্র হস্তের নিক্ষিপ্ত ধুলিকণা প্রত্যেক শত্রুর চোখে প্রবিষ্ট হয়ে তাদের অস্থির করে তুলেছিল। যা হোক, হজরতের আহ্বানে মুসলমান সৈন্যগণ ফিরে এসে বিপুল বিক্রমে শত্রুদের আক্রমণ করে পরাস্ত ও বিতাড়িত করলেন। সেনাপতি খালিদ এ যুদ্ধে অসামান্য বীরত্ব প্রদর্শন করেন। যুদ্ধে মুসলমানরা ৬ হাজার শত্রুসেনাকে বন্দী করল এবং বিপুলসংখ্যক গবাদিপশু, রৌপ্য ও সমর উপকরণ তাদের হস্তগত হলো। যুদ্ধে পরাজিত বিধর্মীরা তায়িফ দুর্গে আশ্রয় গ্রহণ করে। হজরত মুহাম্মদ (সা.) অনতিবিলম্বে তায়িফ দুর্গ অবরোধ করলেন। তিন সপ্তাহ যুদ্ধের পর তায়িফবাসী আত্দসমর্পণ করতে বাধ্য হয় এবং হজরতের কাছে ইসলামের দীক্ষা গ্রহণ করে। যে মহানবীকে তায়িফ থেকে একদিন করুণভাবে বিতাড়িত হতে হয়েছিল, সে তায়িফ আজ তার পদানত। কিন্তু মহানবী প্রতিহিংসার পরিবর্তে উদার ও মহানুভব ব্যবহার পরাজিত তায়িফবাসীকে মুগ্ধ করলেন।

-শাকিল জাহান।

সর্বশেষ খবর